শনিবার, ২ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

রুমা চক্রবর্তী : শুরু ইউপি দিয়ে এখন ঠিকানা জাতীয় সংসদ

স্বাধীন বাংলাদেশে জনসেবাকে নিজের ধ্যান-জ্ঞান হিসেবে বেছে নিয়ে নামলেন রাজনীতিতে। এক্ষেত্রে তাঁর স্বামী ও বাবার পরিবার থেকেও তিনি ব্যাপক উৎসাহ পান।

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

রুমা চক্রবর্তী : শুরু ইউপি দিয়ে এখন ঠিকানা জাতীয় সংসদ

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন শিক্ষার্থী। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে উদ্দীপ্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ২৫ মার্চের কালরাতে ঢাকায় পাকবাহিনীর বর্বরোচিত নৃশংসতা খুব কাছ থেকে দেখেন তিনি। এ গণহত্যার ঘটনা তাকে আরও উদ্বুদ্ধ করে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে। কিশোরী রুমা রায় চৌধুরী (রুমা চক্রবর্তী) অংশ নেন মুক্তিযুদ্ধে। স্বাধীন বাংলাদেশে জনসেবাকেই বেছে নেন এই নারীযোদ্ধা। ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্য থেকে পৌর কাউন্সিলর, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন শেষে এবার হয়েছেন জাতীয় সংসদ সদস্য। দ্বাদশ সংসদে সংরক্ষিত আসনের সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছেন তিনি।

রুমা রায় চৌধুরীর জন্ম ১৯৫৬ সালের ৫ মার্চ সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার কালীগঞ্জের মৌজপুর গ্রামে। ওই গ্রামের রবীন্দ্র রায় চৌধুরী ও সরুজু বালা রায় চৌধুরীর পাঁচ মেয়ের মধ্যে চতুর্থ রুমা। ১৯৭৫ সালে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য রমেন্দ্র চক্রবর্তীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। সেই থেকে তিনি রুমা চক্রবর্তী।

মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকায় থাকতেন রুমা চক্রবর্তী। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শুনেছেন। ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি সেনাদের পৈশাচিক কান্ড দাগ কাটে তরুণী রুমার মনে। সিদ্ধান্ত নেন মুক্তিযুদ্ধে যাবেন। প্রস্তুতি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে প্রশিক্ষণ নেন অস্ত্র চালনার। এরপর চলে যান ভারতের চব্বিশ পরগনা জেলার বনগাঁও বেস হাসপাতালে। সেখানে নিজেকে নিয়োজিত করেন আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবায়। নার্স হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় তিনি সেখানে কাটান।

স্বাধীন বাংলাদেশে জনসেবাকে নিজের ধ্যান-জ্ঞান হিসেবে বেছে নিয়ে নামলেন রাজনীতিতে। এক্ষেত্রে তার স্বামী ও বাবার পরিবার থেকেও তিনি ব্যাপক উৎসাহ পান। ১৯৯৭ সালে বিয়ানীবাজার উপজেলার মোল্লাপুর ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। তিনি বিয়ানীবাজার পৌরসভার কাউন্সিলর ও বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের প্রথম মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মারা গেলে তিনি প্রায় তিন বছর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। বিয়ানীবাজার উপজেলায় যে কয়েকজন নেত্রীর হাত ধরে মহিলা আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা হয়, তাদের অন্যতম রুমা চক্রবর্তী।

২০১০ সালের নভেম্বরে প্রতিষ্ঠা করেন বিয়ানীবাজার উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগ। ২০১৯ সালের জুলাইয়ে প্রথম কাউন্সিলে তিনি উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদে তিনি সিলেট বিভাগ থেকে একমাত্র সংরক্ষিত নারী সদস্য নির্বাচিত হন। গত বুধবার তিনি আওয়ামী লীগের অন্য ৪৭ জন নারী সংসদ সদস্যের সঙ্গে শপথ গ্রহণ করেন।

সর্বশেষ খবর