শিরোনাম
শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা

ক্রেতাদের ইশারা আর ঠোঁটের ভাষা বুঝে দোকান চালাচ্ছেন বাবা-ছেলে

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

ক্রেতাদের ইশারা আর ঠোঁটের ভাষা বুঝে দোকান চালাচ্ছেন বাবা-ছেলে
খরিদ্দার দোকানে আসছেন। স্বাভাবিক নিয়মে চা-নাশতা খেয়ে চলে যাচ্ছেন। দেখে বোঝার উপায় নেই, দোকানি ও তার ছেলে কানে শুনতে পায় না, মুখে কথাও বলতে পারেন না

খরিদ্দার দোকানে আসছেন। স্বাভাবিক নিয়মে চা-নাশতা খেয়ে চলে যাচ্ছেন। বিক্রেতাও স্বাচ্ছন্দ্যে সব কিছু পরিবেশন করছেন। দেখে বোঝার উপায় নেই, দোকানি ও তার ছেলে কানে শুনতে পান না বা মুখে কথাও বলতে পারেন না। ক্রেতাদের ইশারা আর ঠোঁটের ভাষা বুঝে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বেচাকেনা করছেন তারা। তাদের এমন প্রতিভায় বিস্মিত সবাই। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রহিমানপুর ইউনিয়নের ফকদনপুর গ্রামের বাসিন্দা হাবিব। জন্মগত বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী তিনি। পৌরশহরের রোড সুগারমিল গেটের বিপরীতে বাবার মুদি দোকান। ছোটবেলা থেকে থাকতেন মুদি দোকানে। বাবা মারা যাওয়ার পরে নিজে শুরু করেন দোকান। বিয়ের পরে এক ছেলে ও মেয়ের বাবা হয়েছেন। মেয়ে কানে শুনতে পেলেও কথা বলতে পারে না। আর ছেলেও কানে শুনতে পায় না আর মুখে কথা বলতে পারেন না। সকালে বাড়ির কাজ শেষ করে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে দোকানে আসেন তিনি। বাবা-ছেলের যোগসাজশে চলে বেচাকেনা। দোকানের প্রয়োজনীয় মালামাল কিনে নিয়ে আসেন ছেলে। দোকান থেকে কেউ বাকি নিলে সেটিও লিখে রাখেন বাবা-ছেলে। দোকানের ক্রেতা সহিদুল বলেন, ইশারায় ক্রেতাদের ভাষা বুঝে ফেলেন বাবা-ছেলে। লাল চা, দুধ চা নাকি পান সবই বোঝেন ইশারায়। তাদের মতো অনেক প্রতিবন্ধী অন্যের কাছে হাত পেতে চললেও তারা হয়ে উঠেছে অনন্য উদাহরণ। হাবিবের প্রতিবেশী মনোয়ারা বলেন, তাদের আর্থিক টানাপড়েন। ছোট দোকান করে চলতে হয় তাদের। ছেলে-মেয়ে, বাবা তিনজনেই প্রতিবন্ধী। মেয়েটা ছোট, হয়তো চিকিৎসা করলে সুস্থ হবে। সরকার যদি পরিবারটার পাশে দাঁড়ায় তাহলে পরিবারটা ভালোভাবে চলতে পারে। হাবিবের স্ত্রী আফরোজা আক্তার বলেন, ‘১১ বছর আগে হাবিবের সঙ্গে বিয়ে হয় আমার। স্বামীর মতো দুই সন্তানও কথা বলতে পারে না। ইশারা আর ঠোঁটের ভাষা বুঝে সংসার চলছে। স্বামী ও ছেলের প্রতিবন্ধী ভাতা হলেও এখনো মেয়েটির হয়নি। মেয়েটা বড় হলে বিয়ে দিতে হবে। তাই চিকিৎসা করাতে চাচ্ছি যদি কিছুটা হলেও সুস্থ হয়। কিন্তু অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না। সরকার ও বিত্তবানরা আমাদের পাশে দাঁড়ালে চিকিৎসা করতে পারতাম। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সারোয়ার মুর্শিদ আহমেদ বলেন, হাবিবের পরিবারকে ক্ষুদ্রঋণ সহায়তা দেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া মেয়ের প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করা হবে। পরিবারটির পাশে থাকবে সমাজসেবা। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ও বিত্তবানরা পাশে থাকলে তাদের পরিবারে সচ্ছলতা ফিরবে বলে প্রত্যাশা স্থানীয়দের।

সর্বশেষ খবর