রবিবার, ৯ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

ওমিক্রনের লক্ষণ ও ভয়াবহতা

ওমিক্রনের লক্ষণ ও ভয়াবহতা

দক্ষিণ আফ্রিকায় সদ্য আবিষ্কার হওয়া সার্স-কোভ-২ (করোনাভাইরাস)-এর একটি ভ্যারিয়েন্ট বা প্রজাতি ‘ওমিক্রন’। করোনাভাইরাসের নতুন রূপ পাওয়া যাওয়ার পর বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। মাইক্রোবায়োলজির নমেনক্লেচারে যে এমন নাম দিতে হতে পারে, তা ভাবা যায়নি। কিন্তু কতটা ক্ষতিকারক করোনার এই নতুন চরিত্র? কীভাবেই বা বুঝবেন ওমিক্রন সংক্রমণ ঘটেছে আপনার শরীরে। শনাক্ত হওয়া নতুন এ ধরন এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের সবচেয়ে বেশিবার জিনগত রূপ বদল করা সংস্করণ। এর জিনগত রূপ পরিবর্তনের তালিকা এত দীর্ঘ যে একজন বিজ্ঞানী একে ভয়াবহ বলে বর্ণনা করেছেন। অপর এক বিজ্ঞানী বলেছেন, তাঁর দেখা ধরনগুলোর মধ্যে নতুন এ ধরন সবচেয়ে মারাত্মক।

 

ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট কেন এতটা ভয়াবহ?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুসারে, নতুন এই ভ্যারিয়েন্টের নাম দিয়েছে ওমিক্রন। গ্রিক বর্ণমালার আলফা, ডেল্টার মতোই নতুন এই ভ্যারিয়েন্টের কোড নাম দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এই ভ্যারিয়েন্টটি মিউটেট বা তার রূপ পরিবর্তন করেছে অনেকভাবে। দক্ষিণ আফ্রিকার সেন্টার ফর এপিডেমিক রেসপন্স অ্যান্ড ইনোভেশনের পরিচালক অধ্যাপক টুলিও ডি অলিভিয়েরা বলছেন, ‘এখন পর্যন্ত অন্য যেসব ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়েছে তার চেয়ে এটি অনেকখানিই বিপজ্জনক।’ এরই মধ্যে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের খবরে বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দরে জারি হয়েছে নতুন সতর্কতা। এক সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ডি অলিভিয়েরা জানিয়েছেন, ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট মিউটেট করেছে ৫০ বার। আর এর স্পাইক প্রোটিন বদলেছে ৩০ বার। মানুষের দেহের মধ্যে ঢুকতে কভিড ভাইরাস এই স্পাইক প্রোটিন ব্যবহার করে এবং করোনার ভ্যাকসিন সাধারণত এই স্পাইক প্রোটিনকে লক্ষ্য করে তৈরি করা হয়। ভাইরাসের যে অংশটি প্রথম মানুষের দেহকোষের সঙ্গে সংযোগ ঘটায় তার নাম ‘রিসেপ্টার বাইন্ডিং ডোমেইন’। ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট সেই রিসেপ্টার বাইন্ডিং ডোমেইনে মিউটেশন ঘটিয়েছে ১০ বার। সেই তুলনায় করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে এই পরিবর্তন হয়েছে মাত্র দুবার। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এ ধরনের মিউটেশন সম্ভবত একজন রোগীর দেহের জীবাণু থেকে এসেছে, যিনি এই ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকতে পারেননি।

 

ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের লক্ষণসমূহ

চিকিৎসকদের মতে, ওমিক্রনের কিছু লক্ষণ আছে যা সম্পূর্ণ ভিন্ন। যদিও আক্রান্তদের মধ্যে ওমিক্রনের লক্ষণ হালকা মিলেছে। আবার কিছু রোগী হাসপাতালে ভর্তি না হয়েই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (সামা) প্রধান ডা. অ্যাঞ্জেলিক কোয়েজি বলেছেন, ‘ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগীদের বিভিন্ন উপসর্গের মধ্যে দেখা গেছে- চরম ক্লান্তি, গলাব্যথা, পেশি ব্যথা ও শুকনো কাশির মতো সমস্যা। একই সঙ্গে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট থেকে এর লক্ষণগুলো বেশ ভিন্ন।’ ডা. অ্যাঞ্জেলিক কোয়েজি আরও জানিয়েছেন, তিনি এখন পর্যন্ত যত রোগী দেখেছেন তাদের সবার টিকা নেওয়া হয়নি। তাদের ওমিক্রনের হালকা লক্ষণ ছিল। তার মতে, ইউরোপের বিপুলসংখ্যক মানুষ করোনার এই নতুন প্রজাতি দ্বারা সংক্রামিত। এখনো পর্যন্ত ওমিক্রন দ্বারা সংক্রামিত বেশির ভাগ রোগীর বয়স ৪০ বছরের কম। আরও একটি বিষয় হলো, ডেল্টা আক্রান্তদের মতো ওমিক্রনে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে এখনো পর্যন্ত স্বাদ-গন্ধ হারিয়ে ফেলার ঘটনা ঘটেনি। এমনকি এই ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রে করোনা রোগীর রক্তে অক্সিজেন মাত্রাও হঠাৎ নেমে যাওয়ার ঘটনা ঘটেনি।

সর্বশেষ খবর