বুধবার, ৯ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

ম্যাশের রঙে রঙিন রংপুর

মেজবাহ্-উল-হক

ম্যাশের রঙে রঙিন রংপুর

একেই বলে যোগ্য অধিনায়ক। কুমিল্লার বিরুদ্ধে ৪ উইকেট নিয়ে একাই রংপুরকে জেতালেন এমপি মাশরাফি। গতবার তার নেতৃত্বেই বিপিএলে রংপুর চ্যাম্পিয়ন হয়। এবারও দলটি শিরোপার স্বপ্ন দেখছে -রোহেত রাজীব

চার ওভার, এক মেডেন, এগারো রান, চার উইকেট (৪-১-১১-৪)! আবার ২৪ বলের মধ্যে ১৮টি ডট! স্বপ্নিল এক বোলিং ফিগার। বাংলাদেশের স্পিন উইকেটে চার-ছক্কার টি-২০তে এক পেসারের জন্য এমন বোলিং ফিগার যেন রীতিমতো স্বপ্ন! হ্যাঁ, বিপিএলে গতকাল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিরুদ্ধে  যেন স্বপ্নকেই বাস্তবে রূপ দিয়েছেন রংপুর রাইডার্সের ক্যাপ্টেন মাশরাফি বিন মর্তুজা।

টানা চার ওভারের স্পেলে একাই ধসিয়ে নিয়েছেন ভিক্টোরিয়ান্সকে। মাশরাফির আগুনে বোলিংয়ের পর কুমিল্লার স্কোর কার্ড যেন ধু ধু করছিল। আগের ম্যাচে ডেভিড ওয়ার্নারের সিলেট সিক্সার্সকে হারিয়ে নতুন মৌসুম শুরু করা ভিক্টোরিয়ান্স গতকাল অলআউট হয়ে যায় মাত্র ৬৩ রানে।

একমাত্র শহীদ আফ্রিদি ছাড়া আর কোনো ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের কোটাই স্পর্শ করতে পারেননি। অতিরিক্ত রানের যোগফলও ডাবল ফিগারে পৌঁছায়নি। ?ভিক্টোরিয়ান্সের স্কোর কার্ড : তামিম ৪, লুইস ৮, ইমরুল ২, স্মিথ ০, মালিক ০, বিজয় ২, আফ্রিদি ২৫, সাইফুদ্দিন ৭, মেহেদি ৬, আবু হায়দার ৫, শহীদ ০* এবং অতিরিক্ত ৪। সব মিলে স্কোর ৬৩!

মাশরাফির প্রথম শিকার ড্যাসিং ওপেনার তামিম ইকবাল। দ্বিতীয় শিকার ইমরুল কায়েস। তৃতীয় শিকার এভিন লুইস এবং শেষ শিকার ভিক্টোরিয়ান্স দলপতি স্টিভ স্মিথ। প্রতিপক্ষের ব্যাটিং অর্ডারের প্রথম চার ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে পাঠিয়ে মাশরাফি  যেন ম্যাচ থেকেই ছিটকে দেন ভিক্টোরিয়ান্সকে।

ক্যাপ্টেন যখন প্রতিপক্ষের নাভিশ্বাস তুলে ছাড়ছেন তখন বাকিরা আর বসে থাকবেন কেন? স্পিনে জাদু  দেখালেন ‘নাগিন’খ্যাত নাজমুল অপু। মাত্র ২০ রানে তিনিও তুলে নিলেন ৩ উইকেট। কাল অপু দুর্দান্ত একটি ক্যাচও নিয়েছেন বাউন্ডারি লাইনে দাঁড়িয়ে। তবে এক একটি উইকেট শিকারের পর তার ‘নাগিন’ ড্যান্স ছিল দেখার মতো।

এক সময় জাতীয় দলে পেস আক্রমণে মাশরাফির নিয়মিত সঙ্গী ছিলেন শফিউল ইসলাম সুহাস। সে কথা মনে পড়েই কিনা কাল রংপুরের জার্সিতে ‘নস্টালজিক’ হয়ে পড়লেন। মাত্র দুই ওভার বল করে তিনিও এক  মেডেনসহ তুলে নেন দুই উইকেট।

কুমিল্লার ইনিংস গুটিয়ে যায় ১৬.২ ওভারেই। রংপুরের টার্গেট মাত্র ৬৪ রান! রাইডার্সের একাদশে  গেইলকে দেখে দর্শকরা যতটা আশান্বিত হয়েছিলেন, ভিক্টোরিয়ান্সের ইনিংসের পর যেন ততটাই হতাশ হয়ে যান। এই ম্যাচে যে গেইলের কার্যত কিছুই করার  নেই! তারপরও শীত উপেক্ষা করে শেরেবাংলার গ্যালারিতে অপেক্ষমাণ ছিলেন দর্শকরা। যদি কয়েক ছক্কা  দেখা যায়। কিন্তু গেইল নেমে তো ১ রানের  বেশি করতেই পারলেন না। এরপরই গ্যালারি ফাঁকা হতে থাকে। তবে দর্শকের খারাপ লাগার কথা নয়! বরং আনন্দচিত্তে হয়তো তারা ঘরে ফিরেছে- গেইল  শো নাই বা হলো, মিরপুর তো মাশরাফি শো তো দেখা হলো! সেটাই বা কম কিসে!

গতকালকের ম্যাচে জয়ের বন্দরে পৌঁছাতে মাত্র  গেইলের উইকেটটিই হারাতে হয়েছিল রংপুরকে। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে মেহেদী মারুফ ও রিলে রুশো মিলে সতর্কতার সঙ্গে ব্যাট করে রাইডার্সকে নিরাপদে  পৌঁছে দেন। ৯ উইকেটের বিশাল জয় পায় মাশরাফির দল। তিন ম্যাচে রংপুর রাইডার্সের দ্বিতীয় জয় এটি।

ম্যাচ শেষে মাশরাফি বলেন, ‘টস জয়টাই আমাদের জন্য ছিল সৌভাগ্যের। তারপর আমরা দারুণ বোলিং করেছি। আসলে আমি কিছুটা লাকিও ছিলাম। টি-২০ ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, মোমেন্টাম। টানা দুই ম্যাচ জয়ে সেটা আমরা বোধহয় পেয়ে গেছি। এখন এর ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে।’

দুই ম্যাচ ড্রেসিং রুমে কাটানোর পর কাল টি-২০ সম্রাট ক্রিস গেইল রংপুরের জার্সিতে নামায় ম্যাচের উত্তেজনা বেড়ে গিয়েছিল হাজারগুণ। তবে মাশরাফির দলে এক পাশে ক্যারিবীয় তারকার সঙ্গে যেমন ইংলিশ তারকা রবি বোপারা এবং প্রোটিয়া রিলে রুশো ছিল, অন্যদিকে অসি তারকা স্টিভ স্মিথের ভিক্টোরিয়ান্সে ছিল তামিম ইকবাল, এভিন লুইস, শহীদ আফ্রিদি, শোয়েব মালিকের মতো নামি ক্রিকেটার। আর তারকা-মহাতারকাদের ক্যারিশমা  দেখতে, হাইভোল্টেজ ম্যাচের সাক্ষী হয়ে থাকতে গতকাল ছুটে এসেছিলেন প্রায় হাজার পনের! বিপিএলে শেরেবাংলার খাঁ খাঁ গ্যালারিও পেয়েছিল অনেকটা পূর্ণতা! কিন্তু দর্শকের আশায় গুড়েবালি! ম্যাচে উত্তেজনার লেশমাত্র ছিল না। ৪০ ওভারের ম্যাচ প্রথম সাত ওভারেই যেন শেষ! মাশরাফির তোপের মুখে পড়ে সাত ওভারে ভিক্টোরিয়ন্সের স্কোর ছিল ১৮/৫! তারপর আর কোনো উত্তেজনা নেই।  প্রেসবক্সে তাই রসিকতা করে এক সিনিয়র ক্রীড়া সাংবাদিক বললেন, ‘হাইভোল্টেজ ম্যাচে তো দেখি  ভোল্টেজই নেই!’

মাশরাফির ক্যারিশম্যাটিক বোলিং নিয়ে ঝড় ওঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। সবাই যেন নড়াইল এক্সপ্রেসের প্রশংসায় পঞ্চমুখ! দুই সিনিয়র ক্রীড়া সাংবাদিকের দুটি স্ট্যাটাস - ‘এটাকে বলে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, শত্রুকে ঘুমন্ত রেখে ব্যাপক খুন খারাবি করে নিরাপদে ডেরায় ফেরা!’

সার্জারি করাতে করাতে ম্যাশ নিজেই  তো এখন বড় ‘সার্জন’!’

 

সংক্ষিপ্ত স্কোর

ঢাকা ডায়নামাইটস : ১৯২/৬ (২০ ওভার), খুলনা টাইটান্স : ৮৭/১০ (১৩ ওভার)

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স : ৬৩/১০ (১৬.২ ওভার), রংপুর রাইডার্স : ৬৭/১ (১২ ওভার)

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর