বৃহস্পতিবার, ১৯ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা
মালদ্বীপে এএফসি কাপের লড়াই

জয় দিয়ে শুরু মোহনবাগানের

মালদ্বীপের রাজধানী মালে খুব ছোট্ট শহর। মাত্র ৮.৩০ বর্গকিলোমিটারের এই শহরে প্রায় আড়াই লাখ লোকের বাস। দেশটির জনগণের সিহংভাগই এখানে থাকে। বাকিরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে শত শত দ্বীপে। মালেতে জনসংখ্যার আধিক্য থাকলেও এটা খুব ছিমছাম এক শহর। কোলাহল নেই তেমন। কান পাতলে সমুদ্রের গান শোনা যায়। শহরে ছোট ছোট অসংখ্য সড়ক তৈরি করা হয়েছে লাল ইট দিয়ে। প্রধান কয়েকটি সড়কে অবশ্য নুড়ি পাথরের ঢালাই আছে। ইটের রাস্তা হলেও বেশ মসৃণ। ট্যাক্সি চলে প্রায় নিঃশব্দে। এই শহরে রিকশা নেই। অসংখ্য মানুষ পায়ে হেঁটেই পৌঁছে যায় গন্তব্যে। দিনভর কাজ করে বিকালটা কাটিয়ে দেয় সমুদ্রপাড়ে। চারদিকে সমুদ্রঘেরা শহরে বেশ কয়েকটি পার্ক আছে। সেখানে বড়দের জন্য হাঁটার ব্যবস্থা। ছোটদের খেলার জন্য নানা আয়োজন। ছোট্ট এই শহরেই দেশটির জাতীয় স্টেডিয়াম।

এএফসি কাপ ডি গ্রুপের ভেন্যু মালদ্বীপের জাতীয় স্টেডিয়ামের মাঠ গাঢ় সবুজ রঙের। মসৃণ কার্পেটের মতো দেখতে সবুজ মাঠ চোখে পড়লেই ইচ্ছা করে আদরের পরশ বুলিয়ে দিতে। কিন্তু অতিরিক্ত শুকনো হওয়ায় ফুটবলারদের জন্য বেশ কষ্টকর হয়ে উঠে খেলা। বিশেষ করে দিনে। রাতে ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় এখানে খেলা বেশ আরামদায়ক। ছোট্ট শহরের প্রতীক বলা যায় মাঠটাকে। মূল ফুটবল মাঠের চারপাশে তেমন কোনো জায়গাই নেই। দর্শকদের হাঁটার জন্য করিডরের মতো প্যাসেজ আছে। মাঠের সীমানা থেকে এই প্যাসেজওয়ের দূরত্ব এতটাই কম যেন হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যাবে খেলোয়াড়দের! গ্যালারির আসন সংখ্যাও খুব বেশি নয়। ১১ হাজারের কিছু বেশি। অবশ্য এএফসি কাপের ম্যাচ হচ্ছে দর্শকশূন্য গ্যালারি নিয়ে। এই স্টেডিয়ামে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বেশ কম। গ্যালারিতে কয়েকটি টেবিল বসিয়ে তৈরি করা হয়েছে উন্মুক্ত প্রেসবক্স। পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো থাকলেও বাতাসের আনাগোনা নেই বললেই চলে। মাথার ওপর থেকে নেমে আসে রোদে উত্তপ্ত টিনের গরম। বাইরের দিকগুলোতে খুব বেশি নজর না দিলেও মূল মাঠটা দারুণ রূপেই গড়ে তুলেছে মালদ্বীপ। স্থানীয় এক সাংবাদিক জানালেন, মালে শহরে প্রবল বৃষ্টি কখনো হয় না। এ কারণে এখানে মাঠে কাদা হওয়ার ঘটনা বিরল। হুট করে এক পসলা বৃষ্টি ঝরিয়েই ক্ষান্ত দেয় এখানকার আকাশ। ধুয়ে দেয় ধুলোবালি। বাতাস হয়ে উঠে আরও তাজা। মুষলধারে বৃষ্টি না হওয়ায় মাঠের সারফেস চমৎকার। ফুটবলারদের ড্রিবলিংয়ে বেশ সহায়ক।

মানগত দিক দিয়ে মালদ্বীপ জাতীয় স্টেডিয়ামের সবুজ মাঠটা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের। কিন্তু অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা এখানে অপ্রতুল। অথচ এ মাঠেই আগামী অক্টোবরে অনুষ্ঠিত হবে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ! আন্তর্জাতিক মানের একটি টুর্নামেন্ট আয়োজনের জন্য যে প্রস্তুতির প্রয়োজন, তা এখনো নেই মালদ্বীপ ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে। এরই মধ্যে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সূচি ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু পাঁচটি জাতীয় দলের লড়াই অনুষ্ঠানের চ্যালেঞ্জ নিতে পারবে তো মালদ্বীপ!

গতকাল বিকালে মালদ্বীপ ন্যাশনাল স্টেডিয়ামেই শুরু হয়েছে এএফসি কাপ ডি গ্রুপের খেলা। প্রথম ম্যাচেই জয় পেয়েছে ভারতীয় ক্লাব এ টি কে মোহনবাগান। তারা স্বদেশি বেঙ্গালুরু এফসিকে হারিয়েছে ২-০ গোলে। দলের পক্ষে গোল করেন রয় কৃষ্ণা ও সুবাশীষ বোস। বেঙ্গালুরুর সুনীল ছেত্রীরা ম্যাচজুড়ে খুব বেশি আক্রমণ করতে পারেননি। মোহনবাগানের প্রেসিং ফুটবলের কাছে অসহায় ছিল দলটা। প্রথম ম্যাচ জিতেই মোহনবাগান নিজেদের শক্তিমত্তা প্রকাশ করল। তবে বসুন্ধরা কিংসের জন্য বেশ লাভই হলো। মোহনবাগানকে যাচাই করে নেওয়ার সুযোগ পেলেন কিংসের স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোন। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে মোহনবাগানের মুখোমুখি হবেন তপু বর্মণরা। গতকাল নিজেদের প্রথম ম্যাচ জিতে ছোটখাটো হুঙ্কারই দিয়ে রাখলেন মোহনবাগানের কোচ রিস্টো। তিনি বলেন, ‘অনেক দিন পর প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলেছি। এবার আমরা আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর