মঙ্গলবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

লড়াই যখন ভ্রাতৃত্বের বন্ধন

লড়াই যখন ভ্রাতৃত্বের বন্ধন

লড়াইয়ের মাঠে কোহলি-রিজওয়ানের সম্প্রীতি

স্টেডিয়ামের ভিতরে তিল ধারণের জায়গা নেই। গেটে অপেক্ষমাণ হাজারো সমর্থক। হাতে চাঁদ-তারা পতাকা দেখেই বুঝতে সমস্যা হয় না তারা পাকিস্তানের নাগরিক। ভারতীয় নাগরিকরাও ছিলেন। পুরো দুবাই স্পোর্টস কমপ্লেক্স লোকে লোকারণ্য।

ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ ঘিরে পুরো দুবাই শহরের চিত্রই যেন পাল্টে গিয়েছিল। ভয়াবহ জ্যামে পুরো শহর স্থবির হয়ে পড়েছিল কয়েক ঘণ্টা। ভারতীয়রা তাদের পতাকা হাতে রাস্তায় রাস্তায় মিছিল করছে। পাকিস্তানিরাও স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে রেখেছিল শহর।

একটি ম্যাচ নিয়ে যে কত আয়োজন! দুই দলের সমর্থকদের কত উচ্ছ্বাস। কত উন্মাদনা!

আর এই উত্তেজনায় ঠাসা ম্যাচটির কথা চিন্তা করেই পুরো দুবাই স্পোর্টস কমপ্লেক্সে আগে থেকে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছিল।

এমন লোকারণ্য পরিবেশে সবচেয়ে সমস্যায় পড়েন শিশু ও বয়স্করা। তাদের কথা চিন্তা করে ভ্রাম্যমাণ ট্রলির ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল, যাতে তারা নিরাপদে স্টেডিয়ামে পৌঁছাতে পারেন এবং বের হতে পারেন। তবে অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে, উপমহাদেশের মতো দুই দেশের সমর্থকদের মধ্যে কোথাও হাতাহাতির ঘটনা ঘটেনি। বিশ্বের সেরা ম্যাচ, সেরা লড়াই বলে আগে থেকেই সব রকম ব্যবস্থা করে রেখেছিল ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থা আইসিসি।

তবে দুই দল নিয়ে মাঠের বাইরে যে আকাশচুম্বী উন্মাদনা, মাঠের ভিতরে সে অনুযায়ী প্রতিদ্ধন্ধিতার আঁচও লক্ষ্য করা যায়নি। ম্যাচটি অনেকটা একপেশে হয়েছে। পাকিস্তান ১০ উইকেটে সহজ জয় তুলে নিয়েছে। বিশ্বকাপের ইতিহাসে ভারতের বিরুদ্ধে এটা তাদের প্রথম জয়।

বাবর আজম, রিজওয়ানরা দুবাই স্টেডিয়ামে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। গত ৫ দশকে সিনিয়ররা যা পারেননি তাই করে দেখালেন বাবরের পাকিস্তান। তবে ভারতীয় দলেও দারুণ এক পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে।

চির বৈরী দুই দেশের লড়াইটা মনে হচ্ছিল হারার পর কেউ-ই স্বাভাবিকভাবে নিতে পারবে না। পরাজিত দল হয়তো কষ্টে নীল হয়ে যাবে। কিন্তু ম্যাচ শেষে দেখা গেল উল্টো চিত্র।

যদিও মাঠে যতক্ষণ ছিলেন কোহলি কিংবা বাবর কেউ কাউকে একটুও ছাড় দেননি। নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দিয়েছেন। দলের মহাবিপদের সময় ব্যাট হাতে বাইশগজে নেমে কোহলি নিজে খেলেছেন ৫৭ রানের ইনিংস। আর বাবর আজম তো ওপেনিংয়ে  নেমে ৬৮ রানের হার না মানা ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন। এমন জয়ের পর বাবর বলেছেন, ‘আগে কী হয়েছে তা নিয়ে আমরা মাথা ঘামাইনি। মনে বিশ্বাস ছিল, নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দিতে পারলে জিতব।’

তবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হারার পর কোহলিকে যেন কাঠগড়ায় তুলেছেন সমর্থক ও মিডিয়া। তাদের দাবি, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচের জন্য যথাযথ প্রস্তুতি নেয়নি ভারত। কিন্তু কোহলির দাবি, ‘আমরা খুব ভালোভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছি। কারণ, এই ম্যাচের গুরুত্ব আমরা বুঝি। কিন্তু দিন শেষে তো কোনো না কোনো দল হারবেই। এটা স্বাভাবিক।’

তবে ভারতীয় সমর্থকরা বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না। তারা মনে করছেন, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হার মানে তাদের জন্য অপমান। তবে ভারতীয় ক্রিকেটাররা বিষয়টিকে সেভাবে দেখছেন না।

বিরাট কোহলি ও ভারতীয় দলের মেন্টর মহেন্দ্র সিং ধোনি যেন ম্যাচ শেষে ভ্রাতৃত্বের গান গাইলেন! ভারতীয় দলপতি বৈরিতা ভুলে বুকে জড়িয়ে ধরে বাবর আজম ও রিজওয়ানকে অভিনন্দন জানালেন। মহেন্দ্র সিং ধোনি পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের সঙ্গে খোশগল্পে মেতে উঠলেন। ভারতীয় সাবেক অধিনায়কের কথায় অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছিলেন পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা।

রাষ্ট্রীয়ভাবে দুই দেশের মধ্যে যত বৈরিতাই থাকুক না কেন, দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে যত উত্তেজনাই থাকুক না কেন- শেষ কথা হচ্ছে এটি নিছকই একটি ক্রিকেট ম্যাচ। এখানে কোনো বৈরিতা নেই। একটি দল হারবে, আরেকটি জিতবে। এই হারজিত নিয়ে কোনো রাজনীতি নেই।

ম্যাচ শেষে বিরাট কোহলিদের সঙ্গে বাবর আজমদের উৎফুল্ল সাক্ষাৎ যেন নতুন বার্তা দিল। লড়াই যখন হয়ে গেল ভ্রাতৃত্বের বন্ধন। ক্রীড়া কেন যুদ্ধের ক্ষেত্র নয়, বন্ধুত্বের প্রতীক-সৌহার্দ্যরে মঞ্চ! কোহলি-বাবররা যেন এই বার্তাটাই দিকে দিকে ছড়িয়ে দিলেন।

সর্বশেষ খবর