বৃহস্পতিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ইরানকে কাঁদিয়ে নকআউটে যুক্তরাষ্ট্র

ইরানকে কাঁদিয়ে নকআউটে যুক্তরাষ্ট্র

কাতারে মুখোমুখি হয়েছিল দুই চিরশত্রু যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান। স্নায়ুচাপের ম্যাচে ইরানের জালে বল জড়িয়ে মার্কিন ফুটবলারদের বাঁধভাঙা উল্লাস। মর্যাদার লড়াইয়ে ইরানকে ১-০ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করে যুক্তরাষ্ট্র।

ইরান-যুক্তরাষ্ট্র ফুটবল লড়াই। কিন্তু লড়াইটা কেবল ফুটবলের মধ্যেই থাকল কী! জড়িয়ে গেল রাজনীতি, অর্থনীতি, ব্যক্তি স্বাধীনতাসহ আরও অনেক কিছু। একদল ইরানি সমর্থক যেমন তাদেরই দেশের পরাজয়ে আনন্দ প্রকাশ করেছেন। তারা ‘মাশা আমিনি’র পক্ষে লড়াই করছেন। মাশা আমিনি হিজাব না পড়ার কারণে গ্রেফতার হন। পরবর্তীতে তেহরানের এক হাসপাতালে রহস্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যু নিয়ে ইরানে জোর আন্দোলন চলছে। এই আন্দোলনের ঢেউ কাতার বিশ্বকাপেও আছে। যুক্তরাষ্ট্র-ইরান ম্যাচেও দেখা গেছে মাশা আমিনির সমর্থকদের। মঙ্গলবার দুই দলের ফুটবলীয় লড়াইয়ে জয় হলো যুক্তরাষ্ট্রের। নকআউট পর্ব নিশ্চিত হলো তাদের। শেষ ষোলোতে মার্কিনীরা মুখোমুখি হবে নেদারল্যান্ডসের।

যুক্তরাষ্ট্র আর ইরানের সমর্থকদের অনেকেই ব্যাগপ্যাক গুছিয়ে রেখেছিলেন। দলের বিদায় তো বিশ্বকাপকে বিদায়। যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থকরা গোছানো ব্যাগপ্যাক আবারও বন্ধনমুক্ত করেছেন। তাদের মেয়াদ বেড়ে গেছে বিশ্বকাপে। নকআউট পর্ব নিশ্চিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মঙ্গলবার গভীর রাতে চির শত্রু ইরানকে ১-০ গোলে হারিয়েছে মার্কিনীরা। তবে ইরানের সমর্থকদের আর অপেক্ষা চলে না। গতকাল রাতেই তাদের জাতীয় দল দোহা ছেড়েছে। কেউ গিয়েছেন ইরানে। অনেকেই গিয়েছেন নিজ নিজ ক্লাবের ঠিকানায়।

মঙ্গলবারের জয়ে ৫ পয়েন্ট সংগ্রহ করে বি গ্রুপ থেকে দ্বিতীয় হয়ে নকআউট পর্ব নিশ্চিত করল যুক্তরাষ্ট্র। ইরান ৩ পয়েন্ট নিয়ে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিল। বি গ্রুপ থেকে বিদায় নিয়েছে ১৯৫৮ সালের পর প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে আসা ওয়েলসও। মঙ্গলবার তারা ইংল্যান্ডের কাছে হেরেছে ৩-০ গোলে। গেরেথ বেলের বিশ্বকাপটা রঙিন হবে বলেই আশা করেছিলেন অনেকে। কিন্তু হলো না। তাকে বিদায় নিতে হলো ব্যর্থতার বোঝা কাঁধে নিয়ে।

যুক্তরাষ্ট্র-ইরান ম্যাচ নিয়ে ছিল দারুণ উত্তেজনা। দুই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বেশ খারাপ। একে-অপরের মুখোমুখি হয় না তারা পারত পক্ষে। ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্র দিয়ে রেখেছে নানারকমের নিষেধাজ্ঞা। সেসব নিষেধাজ্ঞার চাপ সামলে চলতে গিয়ে দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থাও কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে। দুই দলের ফুটবলীয় লড়াইয়েও ছিল দারুণ উত্তেজনা। মাঠে ফুটবলাররা ছিলেন হার না মানা লড়াকু মনোভাব নিয়ে। গ্যালারিতেও সমর্থকরা নিজ নিজ দলকে সমর্থন জানিয়ে গেছেন। ফ্যান জোনেও ছিল দারুণ উত্তেজনা। ড্র করলেই হতো ইরানের। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতো তারা। কিন্তু তা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রকে থামাতে পারেনি ইরান। পুলিসিচের একমাত্র গোলে জয় নিয়েই মাঠ ছেড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৪ সালে শেষবার বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে খেলেছে তারা। ২০১৮ সালে বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বই খেলা হয়নি যুক্তরাষ্ট্রের। তবে বিশ্বকাপে ফিরে এসেই আবারও নকআউট পর্ব খেলার যোগ্যতা অর্জন করল দলটা।

ইরানকে হারানোর পর স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে আর ফ্যান জোনে ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থকদের দারুণ উচ্ছ্বাস। রব কনভার্স নামের ৩৯ বছর বয়সী যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থক বললেন, ‘আমার অনুভূতি বলার মতো নয়। ম্যাচটা ছিল অসাধারণ।’ ফুটবল আমেরিকায় পরিচিত সকার নামে। সেখানে এই খেলা খুব একটা জনপ্রিয় নয়। বাস্কেটবল, রাগবি আর বেসবলের অনেক পেছনেই পড়ে থাকে সকার। তবে বিশ্বকাপে তাদের নিয়ে বেশ গর্বিত আমেরিকানরা। ইরানের সমর্থকরাও নিজেদের দলের পারফরম্যান্স নিয়ে হতাশ নয়। বেহরাম নামের সমর্থক বলছিলেন, ‘প্রথম ম্যাচটা হারের পর আমরা ওয়েলসের বিপক্ষে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিলাম। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হেরে আমাদের বিদায় নিতে হলো।’

 

সর্বশেষ খবর