বৃহস্পতিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

মরূদ্যানে ‘নীল’ রোমাঞ্চ

মেজবাহ্-উল-হক

মরূদ্যানে ‘নীল’ রোমাঞ্চ

গাঢ় নীল রঙের জার্সি। নীল যে বেদনার রং। এমন নীল জার্সিতে আগে কখনো দেখা যায়নি আর্জেন্টিনাকে।

এদিকে প্রথমার্ধেই পেনাল্টি মিস করলেন স্বয়ং লিওনেল মেসি।

তবে বেদনায় নীল হতেই এমন জার্সি... না! মোটেও না। ম্যাচ শেষে ‘নীল’ হয়ে গেল উৎসবের রং। মরূদ্যানে আর্জেন্টিনার ‘নীল’ রোমাঞ্চ।

বিশ্বসেরা তারকা রবার্ট লেবানডস্কির পোল্যান্ডকে ২-০ গোলে হারিয়ে সেকেন্ড রাউন্ড নিশ্চিত করল লিওনেল মেসির দল।

কী দারুণ ছন্দ। অসাধারণ পাসিং। ক্যারিশম্যাটিক ড্রিবলিং। এমন অনিন্দ্য সুন্দর আর্জেন্টিনাকে কি নিকট অতীতে দেখা গেছে!

প্রথম গোল ৪৬ মিনিটে, অ্যালেক্সিস অ্যালিস্টারের দুর্দান্ত শটে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। দ্বিতীয় গোল ৬৭ মিনিটে, জুলিয়ান আলভারেজ ব্যবধান দ্বিগুণ করেন।

তবে এ ম্যাচে আর্জেন্টিনার জয়ের ব্যবধান ২-০ না হয়ে ১১-০ও হতে পারত যদি সহজতম সুযোগগুলো নষ্ট না হতো। কারণ, গতকাল ১১টি সহজ সুযোগের মধ্যে মাত্র দুটিই গোল হয়েছে। বাকি ৯টি-ই মিস।

প্রথমার্ধ এতটাই একপেশে হয়েছে যে আর্জেন্টিনার গোলমুখে অন-টার্গেটে কোনো শটই নিতে পারেনি পোলিশরা। অথচ এই সময়ের মধ্যে সাত সাতটি সুযোগ তৈরি করেছিল আর্জেন্টিনা। সব কটি গোল হলে আলবেসিলেস্তরা প্রথমার্ধেই এগিয়ে যেতে পারতেন ৭-০ গোলে।

গতকাল গোল মিসের স্রোতে গা ভাসিয়ে দিলেন স্বয়ং মেসিও। সবচেয়ে বাজে মিসটি যে তিনিই করেছেন। পেনাল্টি থেকে গোল করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

তবে অসাধারণ দক্ষতায় মেসিকে ঠেকিয়ে দিয়ে যেন শাপমোচন করেছেন পোল্যান্ডের গোলরক্ষক ভয়চেক সেজনি। তার কারণেই যে পেনাল্টি পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। বল সেভ করার সময় মেসির চোখে আঘাত করেছিলেন তিনি। প্রথমে মাঠের রেফারির চোখ এড়িয়ে গিয়েছিল বিষয়টি। কিন্তু মেসিকে মাঠের মধ্যে পড়ে থাকতে দেখে সতীর্থরা রেফারির কাছে আবেদন করেন। বাধ্য হয়ে রেফারি প্রযুক্তির (ভিএআর) সাহায্য নেন এবং পেনাল্টির নির্দেশ দেন। সেজনির যেখানে খলনায়ক হওয়ার কথা সেখানে পেনাল্টি আটকে দিয়ে নায়ক বনে যান।

এই ম্যাচে হারলে বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ঘণ্টা বেজে যেত আর্জেন্টিনার। সেই সঙ্গে ট্র্যাজিক হিরো হয়ে যেতেন লিওনেল মেসি।

সর্বকালের সেরা ফুটবলারের কাতারে রাখা হয় যে মেসিকে সেই ফুটবল মহানায়কের এমন গ্লানি দিয়ে সমাপ্তি ঘটবে তা হয়তো ফুটবল বিধাতাও চায়নি। সে কারণেই দারুণ এক সমাপ্তি ঘটে।

আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় গোলের পর টিভি ক্যামেরা ধরা হয় গ্যালারিতে। কাঁদছে এক নারী ভক্ত। এই চোখের জল কেবলই কি ২-০ গোলে এগিয়ে থাকার নির্ভরতার জন্য। নাকি ভয়ংকর দল হিসেবে আর্জেন্টিনাকে দেখতে পাওয়ার জন্য?

সামনের চার ম্যাচে এমন ছন্দ থাকলে এই আর্জেন্টিনাকে আটকায় কে? এমন খুনে মেজাজ থাকলে ‘মহানায়ক’ মেসির হাতে সোনালি ট্রফিটা দেখতে পাওয়া যেন কেবলই সময়ের ব্যাপার। সত্যিই কি তাই?

তবে এই ম্যাচে নাটকীয় একটি মুহূর্তের অবতারণা হয় শেষ মুহূর্তে, ২-০ গোলে হেরে পোল্যান্ডের ফুটবলার বিষণœ মনে মাঠ থেকে বের হচ্ছিলেন। কিন্তু অন্য খেলায় মেক্সিকো ২-০ গোলে সৌদি আরবকে হারিয়েও বাদ পড়ে যায়। এই খবরে হঠাৎ আনন্দে লাফিয়ে ওঠেন পোলিশ ফুটবলাররা। হেরেও তাদের নিশ্চিত হয়ে যায় নকআউট। নায়ক থেকে যেন মহানায়ক বনে যান মেসির পেনাল্টি সেভ করা পোলিশ গোলরক্ষক সেজনি।

কী নাটকীয় এক ম্যাচ! আর্জেন্টিনা জিতে মহাখুশি। আর পোল্যান্ড হেরেও খুশি। দুই দলেরই যে নকআউট নিশ্চিত হয়েছে!

দ্বিতীয় রাউন্ডে পোল্যান্ডের প্রতিপক্ষ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। আর আর্জেন্টিনা খেলবে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে।

সর্বশেষ খবর