সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

তিনি সেরা তিনিই শ্রেষ্ঠ

মেজবাহ্-উল-হক

তিনি সেরা তিনিই শ্রেষ্ঠ

সোনালি ট্রফিটা হাতে নিয়ে প্রথমে চুম্বন এঁকে দিলেন লিওনেল মেসি। তারপর নৃত্যের তালে তালে ধীরলয়ে সতীর্তের দিকে এগোতে থাকেন। সতীর্থরাও নাচতে নাচতে মেসির সঙ্গে সেলিব্রেশনে যুক্ত হলেন। স্বপ্ন পূরণ হলো লিওনেল মেসির।

৩৬ বছর পর বিশ্বকাপের তৃতীয় শিরোপা জিতল আর্জেন্টিনা। ১৯৭৮ সালে মারিও কেম্পেসের ক্যারিশমায় প্রথম বিশ্বকাপ জিতেছিল আলবেসিলেস্তোরা। ১৯৮৬ সালে দ্বিতীয় শিরোপা উপহার দিয়েছিলেন দিয়েগো ম্যারাডোনা। এবার সবাইকে ছাপিয়ে পায়ের জাদু দেখিয়ে আর্জেন্টিনাকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করলেন ফুটবল জাদুকর লিওনেল মেসি। 

‘এই কাতার বিশ্বকাপে লিওনেল মেসি এতটাই জাদুকরী ফুটবল উপহার দিয়েছেন যে ফাইনালে জয় কিংবা বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। মেসিই বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ফুটবলার।’ -ফাইনালের এক দিন আগে নিজের কলামে লিখেছিলেন ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি ফুটবলার গ্যারি লিনেকার। যিনি দিয়েগো ম্যারাডোনার সঙ্গে ১৯৮৬ বিশ্বকাপে খেলেছেন।

যে ম্যাচে ইংলান্ডের বিরুদ্ধে ম্যারাডোনা দুটি গোল দিয়েছিলেন, যার প্রথমটিকে তিনি নিজেই বলেছেন ‘হ্যান্ড অব গড’ আর দ্বিতীয় গোলটিকে শতাব্দীর সেরা গোল হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে। ওই ম্যাচে ইংল্যান্ডের জার্সিতে লিনেকারও একটি গোল করেছিলেন। সেই লিনেকার যখন লিওনেল মেসিকে শ্রেষ্ঠ বলে তখন আর কেনো সমালোচনা চলে না।

লিওনেল মেসি যে শ্রেষ্ঠ ফুটবলার তা নিয়ে সমালোচনাও নেই। ফুটবলে মেসি এক বৈচিত্র্যময় চরিত্র। তবে মাঠে বল পায়ে মেসি যতটা আগ্রাসী, ব্যবহারে তার চেয়ে অনেক বেশি বিনয়ী। নম্র ও ভদ্রতার মূর্ত প্রতীক আর্জেন্টাইন খুদে জাদুকর। সে কারণেই বোধহয় মেসিকে সবাই একবাক্যে সেরা মেনে নিয়েছেন।

২০১৪ বিশ্বকাপেও মেসি আর্জেন্টিনার জন্য বিশ্বজয়ের মঞ্চটা তৈরি করেই দিয়েছিলেন। কিন্তু সেবার বিশ্বকাপ জিততে পারেনি আলবেসিলেস্তরা। এবার দ্বিতীয় বারের মতো আর্জেন্টিনাকে পায়ের জাদু দেখিয়ে ফাইনালে টেনে নিয়ে গেছেন।

মেসির অর্জনের তালিকাটা খুবই লম্বা। তিনি ক্যারিয়ারের সেরা সময়টা কাটিয়েছেন বার্সেলোনায়। কাতালানের হয়ে ১০টি স্প্যানিশ শিরোপা জিতেছেন।  এ ছাড়া যে সব শিরোপা জিতেছেন সেগুলো হচ্ছে, ৭টি কোপা দেল রে, ৭টি স্প্যানিশ সুপার কোপা, ৪টি উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ৩টি উয়েফা সুপারকাপ এবং তিন তিনবার ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের ট্রফি জিতেছেন। ফরাসি দল পিএসজির হয়ে এক মৌসুমে খেলে দুটি শিরোপা জিতেছেন।

আর্জেন্টিনার জার্সিতেও মেসির অর্জন কম নয়। একবার কোপা আমেরিকার শিরোপা জিতেছেন। একবার করে যুব বিশ্বকাপ ও অলিম্পিকে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। এ ছাড়া ২০১৪ সালের পর দ্বিতীয় বারের মতো আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপের ফাইনালে তুলেছেন। এর বাইরে আর্জেন্টিনাকে আরও তিনবার কোপা আমেরিকাকে ফাইনালে তুলেছিলেন। 

গত বছর কনমেবল-উয়েফা কাপেও আর্জেন্টিনাকে চ্যাম্পিয়ন করেছেন।  কনমেবল-উয়েফা কাপে অংশ নেন   কোপা চ্যাম্পিয়ন ও ইউরোপের চ্যাম্পিয়ন দল।

ব্যক্তি অর্জনের কথা আসলে লিওনেল মেসির ধারে-কাছেও কেউ নই। তিনি ফিফা ব্যালন ডি’অর জিতেছেন রেকর্ড সাতবার (২০০৯,  ২০১০, ২০১১, ২০১২, ২০১৫, ২০১৯, ২০২১)।  এর বাইরে ২০০৯ সালে ফিফা বর্ষসেরা হয়েছেন। ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের লড়াইয়ে সাত-সাতবার তিনি সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন। আট মৌসুমে স্প্যানিশ লিগে সর্বোচ্চ গোল ছিল মেসির। মোট ছয়বার স্প্যানিশ লিগে বর্ষসেরা ফুটবলার নির্বাচিত হয়েছেন। প্রিয় আর্জেন্টিনার হয়ে রেকর্ড ১৪ বার বর্ষসেরা ফুটবল হয়েছেন মেসি।

এই ফুটবল জাদুকর এমন সব রেকর্ড করেছেন যা ফুটবলের ইতিহাসে আর কোনো খেলোয়াড়ের নেই। কিংবদন্তিদের দাবি, পরিসংখ্যানকে হিসাবে না নিলেও মেসি সবার সেরা। কারণ, তিনি যে জাদু দেখিয়েছেন তার সমতুল্য কেউ নেই। আর্জেন্টিনার মানুষের কাছে তিনি রাজাধিরাজ। কিন্তু বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার জার্সিতে এই গ্রেট ফুটবলার শেষ ম্যাচটি খেলে ফেলেছেন। বিশ্বকাপে আর দেখা যাবে না তার পায়ের জাদু।

তবে নিজের শেষ আসরেই বাজিমাত করলেন মেসি। ফাইনালে কাল একাই দুই গোল করলেন। এই আসরে ৭ গোল এবং তিন অ্যাসিস্ট। সব মিলে বিশ্বকাপে তার গোল হয়ে গেল ১৩টি।

ব্যক্তিগত অর্জন, ক্লাব ফুটবলে অসামান্য প্রাপ্তি আগেই ছিল। কেবল দরকার ছিল একটি বিশ্বকাপ। সেটিও গতকাল জিতলেন ফুটবল জাদুকর।  বিশ্বকাপের বিদায়ী ম্যাচেও নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেলেন। ফুটবল ক্যারিয়ারে ক্যারিশম্যাটিক নজির স্থাপন করে মেসি বিশ্বকে বুঝিয়ে দিলেন তিনিই শ্রেষ্ঠ ফুটবলার। তিনিই সর্বকালের সেরা ফুটবলার।

মেসির ব্যক্তিগত অর্জন

ফিফা বিশ্বকাপ গোল্ডেন বল

২০১৪, ২০২২

ফিফা ব্যালন ডি’অর

২০০৯,  ২০১০, ২০১১, ২০১২, ২০১৫, ২০১৯, ২০২১

ফিফা বর্ষসেরা

২০০৯

ফিফা-সেরা পুরুষ খেলোয়াড়

২০১৯

ইউরোপিয়ান গোল্ডেন জুতা

২০০৯-২০১০, ২০১১-২০১২, ২০১২-১৩, ২০১৬-১৭, ২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯

ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ গোল্ডেন বুট

২০০৯, ২০১১

লরিয়াস বিশ্বসেরা অ্যাথলেট

২০২০

লা লিগা বর্ষসেরা

২০০৮-০৯, ২০০৯-১০, ২০১০-১১, ২০১১-১২, ২০১২-১৩, ২০১৪-১৫

লা লিগায় সর্বোচ্চ গোলদাতা

২০০৯-১০, ২০১১-১২, ২০১২-১৩, ২০১৬-১৭, ২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯, ২০১৯-২০, ২০২০-২১

আর্জেন্টিনার বর্ষসেরা

২০০৫, ২০০৭, ২০০৮, ২০০৯, ২০১০, ২০১১, ২০১২, ২০১৩, ২০১৫, ২০১৬, ২০১৭, ২০১৯, ২০২০, ২০২১

 

লিওনেল মেসির রেকর্ড

আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে

বিশ্বকাপ : ১ বার

যুব বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন : ১ বার।

অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন : ১ বার।

কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়ন : ১ বার।

কোপা আমেরিকা রানার্সআপ : ৩ বার।

কনমেবল-উয়েফা কাপ চ্যাম্পিয়ন : ১ বার। 

(কোপা চ্যাম্পিয়ন ও ইউরোপ সেরার লড়াই)

 

বার্সেলোনার জার্সিতে

লা লিগা ট্রফি : ১০টি

কোপা দেল রে : ৭টি।

সুপার কোপা : ৭টি।

উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ : ৪টি।

উয়েফা সুপার কাপ : ৩টি।

ফিফা ক্লাব কাপ ট্রফি : ৩টি

 

পিএসজির জার্সিতে

লিগ-১ : ১টি।

ট্রফি ডি চ্যাম্পিয়ন্স : ১টি

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর