পাঁচ দিনের টেস্ট কিংবা ওয়ানডে নয়, টি-২০ ম্যাচ খেলতে চান বিসিবির নতুন সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। মিডিয়ার মুখোমুখিতে এমনটাই বলেন তিনি। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নতুন সভাপতির মেয়াদকাল অক্টোবর পর্যন্ত। এ সময়ে বিসিবির নতুন সভাপতিকে দায়িত্ব পালনে কঠিন হার্ডল টপকাতে হবে। চ্যালেঞ্জ সামলানোর কথা মাথায় রেখে নতুন সভাপতি বলেন, ‘টেস্ট পাঁচ দিনের খেলা, ওয়ানডে হয় সাত ঘণ্টা। আমি একটা কুইক টি-২০ ইনিংস খেলতে এসেছি এখানে। যেই ইনিংসটা আপনারা সবাই মনে রাখবেন।’ ক্রিকেটপ্রেমীরাও চাইছেন নতুন সভাপতি বুলবুল সফল হোক। দেশের ক্রিকেট উন্নয়নে সহায়তা করুক। কথা হচ্ছে, অক্টোবরের মধ্যে কোন জাদুবলে মনে রাখার মতো উন্নতি করবেন নতুন সভাপতি? স্মরণীয় কিছু করতে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান বুলবুলকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। তার জন্য সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, বিসিবির বর্তমান পরিচালকদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করা। কারণ এরাই আগের সভাপতি ফারুক আহমেদের বিপক্ষে অনাস্থা এনেছেন।
নির্বাচিত একজন সভাপতির বিপক্ষে পরিচালকদের অনাস্থা আনার রেকর্ড নেই বিসিবির ইতিহাসে। অথচ সেই কাজটিই করেছেন আট পরিচালক। সাবেক সভাপতি ফারুকের বিপক্ষে একাধিক অভিযোগ এনে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বরাবর চিঠি লেখেন তারা। তাদের অনাস্থাতেই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) ফারুকের পরিচালক পদ বাতিল করে। শুক্রবার আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে পরিচালক পদে নিয়োগ দিয়ে এনএসসি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। সেদিন বিকালেই ওই পরিচালকদের ভোটে সরাসরি সভাপতি নির্বাচিত হন বুলবুল। যে পরিচালকরা ভোটে বুলবুলকে সভাপতি নির্বাচিত করেন, তাদের সাতজন পতিত আওয়ামী সরকারের সময় বোর্ডে ছিলেন। সরকারের পরিবর্তনের সঙ্গে তারাও অবস্থান পাল্টে ফেলেন। এরা গত আগস্টে ফারুককে সভাপতি হিসেবে সাদরে গ্রহণ করেছিলেন। ৯ মাস একসঙ্গে কাজও করেছেন। আবার অনাস্থাও আনেন। এদের নিয়ে নতুন সভাপতিকে কাজ করতে হবে। বর্তমান পরিচালকদের অধিকাংশই লম্বা সময় ধরে বোর্ডে রয়েছেন। আগের সরকারের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধাও নিয়েছেন। বুলবুল এদের সবাইকে চেনেন ও জানেন এবং অনেকের সঙ্গে ক্রিকেটও খেলেছেন। নিজের পরিকল্পনাগুলোকে বাস্তবায়ন করতে এদের নিয়েই কাজ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে নতুন সভাপতি বলেন, ‘আমরা তো একটা দল। আমার আজকে (শুক্রবার) থেকে শুরু হলো। এ মুহূর্তে কোনো অভিজ্ঞতা নেই। আমরা চেষ্টা করব সবার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সবার প্রাণশক্তি কাজে লাগিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার।’
নতুন সভাপতির আরও একটি বড় বাধা নির্বাচন। বিসিবির বর্তমান কমিটির মেয়াদ অক্টোবর পর্যন্ত। সরকার চাইছে নতুন গঠনতন্ত্রে নির্বাচন। মাস দুয়েক আগে বিসিবির একজন পরিচালকের নেতৃত্বে গঠনতন্ত্রের পরিবর্ধন ও পরিমার্জন করা হয়েছিল। সেখানে ক্লাব পরিচালকের সংখ্যা কমানোর নির্দেশনা ছিল। ক্লাবগুলো সিদ্ধান্ত না মেনে আন্দোলন করলে গঠনতন্ত্র পরিবর্তনের কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়। বিসিবির নতুন সভাপতিকে ক্লাবগুলোর এই চ্যালেঞ্জ সামলানোর কাজও করতে হবে। বিসিবির বাইরে থাকাকালীন বুলবুল অনেক বিষয়ে সমালোচনা করেছেন। এখন নিজেকে সেসব বিষয়ের সমাধানে কাজ করতে হবে। বুলবুল আশাবাদী সেসব কাজের সমাধানে, ‘আমি খুবই মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসেছি। যা কিছু অর্জন করেছি, সব ক্রিকেট থেকেই। ক্রিকেটের সঙ্গে কখনো কোনো বোঝাপড়া তাই আমি কখনো করিনি, করবও না। এজন্য আমি সব সময় সত্য কথা বলার চেষ্টা করি। কারণ এটা শুধু আমার জীবিকাই নয়, এটাই আমাকে সবকিছু দিয়েছে। সবাইকে নিয়েই আমরা চেষ্টা করব সেরাটা দিতে এবং প্রমাণ করতে।’
ফারুকের অব্যাহতি ও বুলবুলের সভাপতি হওয়ার বিষয়ে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, ‘ফারুক আহমেদকে সভাপতির পদ থেকে এনএসসি সরায়নি। আমরা ফারুক আহমেদকে পরিচালক হিসেবেই মনোনয়ন দিয়েছিলাম। বিসিবির পরিচালকবৃন্দ তাকে সভাপতি নির্বাচিত করেছেন। এভাবেই আমিনুল ইসলামকেও আমরা পরিচালক মনোনয়ন দিয়েছি। বিসিবির পরিচালকরা তাকে সভাপতি করেছে। সভাপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে এনএসসির কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’