বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে জামাল ভূঁইয়াই প্রথম প্রবাসী হিসেবে জাতীয় দলে সুযোগ পান। ২০১২-১৩ মৌসুমে তিনি ডেনমার্ক থেকে ঢাকায় উড়ে আসেন। পেশাদার ফুটবলে তাঁর অভিষেক হয় শেখ জামাল ধানমন্ডিতে। সেবারই সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে জাতীয় দলে জামাল সুযোগ পান। বর্তমানে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ১৯৭৩ সাল থেকে জাতীয় দলে অনেকে অধিনায়ক হয়েছেন। কিন্তু সর্বোচ্চ ম্যাচে নেতৃত্ব দেওয়ার রেকর্ড জামালের। তাঁর পর ফিনল্যান্ডপ্রবাসী তারিক কাজী জাতীয় দলে সুযোগ পান। বসুন্ধরা কিংসে খেলা এ ফুটবলার দীর্ঘদিন ধরে লাল-সবুজের জার্সি পরে মাঠে নামছেন। ঘরোয়া ফুটবল খেলে সর্বশেষ জাতীয় দলে ডাক পান কানাডাপ্রবাসী কাজেম শাহ। বর্তমানে তিনি ঢাকা আবাহনীতে খেললেও পুলিশ এফসিতে থাকা অবস্থায় স্বপ্নের জাতীয় দলে খেলেছেন।
তিন প্রবাসীর জাতীয় দলের অভিষেক ঘরোয়া আসর খেলেই হয়েছে। এরপর যাঁরা এসেছেন তা বাংলাদেশের ফুটবলে ইতিহাস বলা যায়। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা হামজা দেওয়ান চৌধুরী বা কানাডা জাতীয় দলে খেলা সামিত সোম বাংলাদেশের হয়ে মাঠ কাঁপাবেন তা কি কেউ ভেবেছিলেন? শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবে রূপ নিয়েছে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফুটবলার বলেই। তাঁদের খেলাতে বাফুফে কর্মকর্তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হয়েছে। এঁরা জাতীয় দলে খেলাতেই মূলত দেশের ফুটবলে দৃশ্যপট পাল্টে যায়। হামজাদের আগমনে ফুটবল এমনভাবে জেগেছে যা অবাক করার মতো। মূলত তাঁরা বাংলাদেশে খেলবেন বলেই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গ্যালারির সব টিকিট বিক্রি হয়ে যায়। হামজা, সামিতের সঙ্গে ইতালিপ্রবাসী ফাহমিদুল ইসলামও জাতীয় দলে খেলছেন। হংকং ম্যাচের জন্য ক্যাম্পে ডাক পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী জায়ান আহমেদ। অনূর্ধ্ব-২৩ দলে মনোমুগ্ধকর পারফরম্যান্সেই তাঁর ডাক এসেছে। অনুশীলনেও নেমে পড়েছেন তিনি। জাতীয় দলে হামজাদের মতো প্রবাসীরা খেলছেন এটা যেমন স্বস্তি, তেমন অনেকে শঙ্কিত প্রবাসীর ভিড়ে স্থানীয়রা না হারিয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে আবার প্রবাসী ও স্থানীয়দের বিভেদ করাও ঠিক হবে না। জাতীয় দলে একটাই পরিচয়-সবাই বাংলাদেশি। তার পরেও যারা পেশাদার লিগ খেলেন তাদের বিষয়টি আলাদা। এবার হংকংয়ের বিপক্ষে সেরা একাদশে সাত প্রবাসীকে দেখা যেতে পারে। চূড়ান্ত স্কোয়াড এখনো ঘোষণা হয়নি। তবে সব প্রবাসী দলে থাকবেন তা নিশ্চিত। কোচ সেরা একাদশ কীভাবে সাজাবেন এটা তাঁর সিদ্ধান্ত। পারফরম্যান্সের বিচারে হাভিয়ের কাবরেরা যদি সেরা একাদশে সাত প্রবাসীকে রাখেন তাহলে বাকি থাকবেন চারজন। তখন এ চারজন কারা হবেন। গোলরক্ষক প্রবাসী নন বলে এখানে স্থানীয় কেউ থাকবেন। বাকি থাকবেন তখন তিনজন। কোচ কী করবেন তা বলা মুশকিল। তবে সাত না হলেও শুরু থেকেই পাঁচ ফুটবলারের খেলার সম্ভাবনা বেশি। এ ক্ষেত্রে জামাল, কাজেম কিংবা নতুন বলে জায়ানকে শুরু থেকে না-ও খেলাতে পারেন। অধিনায়ক হয়েও জামালকে কেন বেস্ট ইলেভেনে রাখা হচ্ছে না, এ নিয়ে বিতর্ক উঠছে। হয়তো এ বিতর্ক এড়াতে কোচ শুরু থেকেই জামালকে খেলাতে পারেন। তাই যদি হয় প্রবাসীর বাইরে থাকবেন আর মাত্র দুজন। হামজা, সামিত, ফাহমিদুল ও তারিক কাজী বেস্ট ইলেভেনে থাকবেন এ নিয়ে সংশয় নেই। জায়ান, জামাল বা কাজেম যাকেই খেলাক না কেন, তখন সংখ্যা হবে ৫; যা হবে জাতীয় দলের ইতিহাস। এর আগে একসঙ্গে পাঁচ প্রবাসীর শুরু থেকে খেলার রেকর্ড নেই। কিউবা মিচেলকে রাখা হলে তখন আবার হতো অন্য অবস্থা। মিচেল না থাকার পরও হংকংয়ের বিপক্ষে অন্যরকম জাতীয় দলের দেখা মিলবে কি না সেটাই প্রশ্ন। তবে যেভাবে সংখ্যা বাড়ছে তাতে সেদিন আর বেশি দূরে নয় যে সেরা একাদশ হবে শুধু প্রবাসীদের নিয়ে।