শেষটা মধুর হলো না শেন জার্গেনসেনের। মেয়াদ পূর্ণ করা হলো না বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের হেড কোচের। মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার প্রায় ১১ মাস আগে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সঙ্গে সম্পর্ক চুকে গেল তার। কাল আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে পদত্যাগপত্র গ্রহণের কথা। ফলে বাংলাদেশ ক্রিকেটে অবসান হলো জার্গেনসেন অধ্যায়ের।
৩৮ বছর বয়স্ক জার্গেনসেন এ দেশের ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত হন ২০১১ সালের অক্টোবরে। তখন টাইগারদের অন্তর্বর্তীকালীন কোচ ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকান বংশোদ্ভূত রিচার্ড পাইবাস। অস্ট্রেলিয়ান জার্গেনসেন ছিলেন বোলিং কোচ। চার মাস চাকরি করে হঠাৎ করেই চলে যান পাইবাস। এরপর দায়িত্ব পান অস্ট্রেলিয়ার স্টুয়ার্ট ল। ছয় মাস পর তিনিও সরে দাঁড়ান। এক বছরের ব্যবধানে দু'জনের সরে দাঁড়ানোয় বিপাকে পড়ে যায় বিসিবি। সেখান থেকে উদ্ধার পেতেই অন্তর্বর্তীকালীন কোচ হিসেবে জার্গেনসেনকে দায়িত্ব দেয় বোর্ড। দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম অ্যাসাইনমেন্টেই ৩-২ ব্যবধানে হারান ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। দলের সাফল্যে খুশি হয়ে ক্রিকেট বোর্ড তাকে হেড কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয় ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে। হেড কোচ হিসেবে তিনি শ্রীলঙ্কার মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ ড্র, একটি টেস্ট ড্র, ঘরের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজে নিউজিল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ এবং টেস্ট সিরিজ ড্র করেন। তার পারফরম্যান্সে খুশি বোর্ড ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ায়। হেড কোচ হওয়ার পরই তার পারফরম্যান্সের গ্রাফ নামতে থাকে নিচের দিকে। এরমধ্যে গত চার মাসে ঘরের মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ, এশিয়া কাপ ও টি-২০ বিশ্বকাপে চরমভাবে ব্যর্থ হয় দল। তার দায়ভার পড়ে তার উপরও। দলের ব্যর্থতায় ক্ষুব্ধ কয়েকজন পরিচালক তার জায়গায় নতুন কোচ নিয়োগের কথা বলেছেন মিডিয়ায়। যদিও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি বিসিবি। পরিচালকদের মন্তব্য ও মিডিয়ার লেখালেখিতে মর্মাহত জার্গেনসেন সবাইকে অবাক করে গত ২৮ এপ্রিল হঠাৎ করেই পদত্যাগ করার কথা জানিয়ে ই-মেইল করেন বিসিবির সিইও নিজামুদ্দিন সুজনকে। এই পদত্যাগ ইমোশনাল নয় বলে জানান জার্গেনসেন।
অস্ট্রেলিয়ায় ছুটি কাটিয়ে ১ মে ঢাকায় ফিরেন জার্গেনসেন। বিসিবি সভাপতির সঙ্গে কথা বলেন কাল। এক ঘণ্টার আলোচনায় নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেন। বৈঠক শেষে মিডিয়ার মুখোমুখিতে বলেন, 'আমাকে বলা হয়েছিল বিশ্বকাপ পর্যন্ত কাজ করতে। কিন্তু আমার পক্ষে সেটা সম্ভব নয়। আমার পরিবারকে সময় দিতে হবে। তাই আমি চাচ্ছি দেশের কাছাকাছি থাকতে। অবশ্য আমি বোর্ডকে বলেছি ভারত সিরিজ পর্যন্ত আমি কাজ করতে চাই। এখন এটা বোর্ডের বিষয়।' জার্গেনসেন ভারত সিরিজে কাজ করতে চাইলেও সবকিছু ভেবে তার পদত্যাগপত্রই গ্রহণ করে বিসিবি। পরিচালনা পর্ষদের সভা শেষে তেমনই বলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, 'আমি তার সঙ্গে বেশ অনেকটা সময় কথা বলেছি। কারণ জানতে চেয়েছি সরে দাঁড়ানোর। তার সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে তিনি পরিবারকে সময় দেওয়ার জন্য বাড়ির আশেপাশে কাজ খুঁজছেন। তিনি অবশ্য ভারত সিরিজে কাজ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সভায় সবাই মত দিয়েছেন, একটি সিরিজে অন্তর্বর্তীকালীন কোচ হিসেবে তাকে না রাখার। তাই আমরা তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছি।' বোলিং কোচ হিসেবে কাজ শুরু করা জার্গেনসেন হেড কোচ হিসেবে খুব ব্যর্থ বলা যাচ্ছে না। তার কোচিংয়ে চারটি টেস্ট সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। ৮ টেস্টে জয় একটি, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। হার ৩টি এবং ড্র চারটি। ওয়ানডে খেলেছে ১৬টি। ৫ জয়ের বিপক্ষে হার ১০টিতে। তবে টি-২০ ম্যাচের পারফরম্যান্স আহামরি নয়। ১৩ ম্যাচে জয় মাত্র তিনটি এবং হার ১০টি।
জার্গেনসেনের আনুষ্ঠানিক বিদায় হল কাল। তার বিদায়ে অভিভাবকশূন্য মুশফিকুর রহিমদের জন্য আগামী এক-দেড়মাসের মধ্যে নতুন একজনকে নিয়োগ দিতে চাইছে বিসিবি। সেটা আদৌ পারবে কি না, সময়ই বলবে।