ফিলিপ লুই স্কলারির আরেক নাম 'বিগ ফিল'। তার কোচিংয়েই ২০০২ সালে বিশ্বকাপ জিতেছিল ব্রাজিল। কোরিয়া-জাপান বিশ্বকাপের ডাগ আউট কিংবা ট্যাকটিসের জন্য যত না আলোচিত ছিলেন স্কলারি, তার চেয়ে বেশি আলোচনার খোরাক যুগিয়েছিল তার মোটা একটি ডাইরি। এক যুগ আগের বিশ্বকাপের অনুশীলন, ম্যাচ সবসময়ই সঙ্গে রাখতেন ডাইরিটি। কি লেখা ছিল ডাইরিতে? জানতে প্রতিপক্ষ শার্লক হোমসের মতো গোয়েন্দাদেরও নিয়োগ দিয়েছিল। কিন্তু জানতে পারেনি কেউ। জানতেন শুধু সতীর্থ এবং শিষ্যরা। প্রতিপক্ষকে দুমড়ে-মুচড়ে দেওয়ার কৌশলের পাশাপাশি লেখা থাকত উদ্দীপ্ত ও উজ্জীবিত করার নানা প্রবাদ। প্রতিটি ম্যাচের আগে শিষ্যদের মাথায় ঢুকিয়ে দিতেন উদ্দীপ্ত হওয়ার বাণী। সেই মোটা ডাইরি এবারের বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের খেলাগুলোতে শোভা পায়নি বিগ ফিলের হাতে। তবে নকআউট পর্বে চিলির বিপক্ষে ময়দানি যুদ্ধে নামার আগে ঠিক ঠিক আশাবাদী এবং আত্দবিশ্বাসী হওয়ার মন্ত্র ঢুকিয়ে দেন নেইমারদের মস্তিষ্কে। সেই মন্ত্রে উদ্দীপ্ত নেইমাররা টাইব্রেকারের শেষ শটে জিতে জায়গা করে নেন কোয়ার্টার ফাইনালে। চিলির শক্ত ব্যারিয়ার টপকে স্কলারি এখন স্বপ্ন দেখছেন শিরোপা জেতার। পরশু অবিশ্বাস্য এক জয়ের আবেগাপ্লুত স্কলারি বলেছেন, স্বর্গ থেকে তার দল মাত্র তিন ধাপ দূরে দাঁড়িয়ে। খুব সহজ অংক। কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল- এরপর হেক্সা জেতা এবং ৬৪ বছরের 'মারাকানাজো' দুঃখ ভোলা।
পরশু রাতে পেনাল্টি শুট আউটে নেইমারের গোলের পর আনন্দে লাফিয়ে উঠেন স্কলারি। চিলির গনজালো জারার শটটি সাইড বারে লেগে বাইরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এক দৌড়ে মাঠে। এরপর নেইমারকে জড়িয়ে ধরে আনন্দে কাঁদতে থাকেন বিগ ফিল। এক যুগ আগে জার্মানিকে হারিয়ে বিশ্বসেরা হওয়ার আনন্দেও কেঁদেছিলেন। পরশু কাঁদলেন। তার কান্নাই বলছিল, বুক থেকে হাজার মণ চাপ নেমে যাওয়ার কথা। যে চিলির বিপক্ষে ১৯৬২, ১৯৯৮ ও ২০১০ সালের বিশ্বকাপে হেসেখেলে জিতেছে সেলেকাওরা, সেই চিলি পরশু প্রতিপক্ষ হয়ে হয়ে উঠেছিল হিমালয় দৃঢ়তায়। ডেভিড লুইস গোল দেওয়ার পর অ্যালেক্সিস সানচেজরা আক্রমণের পর আক্রমণ শানিয়ে দুমড়ে-মুচড়ে দেন স্কলারির রক্ষণভাগ। ঠাণ্ডা মাথায় প্লেসিং শটে সমতা আনেন সানচেজ। ১২০ মিনিটে ক্রস পিঠ বিশ্বাসঘাতকতা করলে জয় পায়নি চিলি। টাইব্রেকারে সানচেজরা হেরে যান হুলিও সিজারের অসাধারণ দৃঢ়তার কাছে। কাল কঠিন বৈতরণী পার হয়ে অনেক বেশি আত্দবিশ্বাসী বিগ ফিল। স্বপ্ন দেখছেন শিরোপার, 'আমরা একটি মিশন নিয়ে বিশ্বকাপে খেলছি। মিশন সফলে সব করতে প্রস্তুত আমরা। চিলি ম্যাচ ছিল তারই এক ধাপ। এখন বলছি স্বপ্ন পূরণে আমরা মাত্র তিন কদম পিছিয়ে আছি।' নৈরাশ্যকে পিছনে ফেলে আশাবাদী স্কলারির স্বপ্ন সত্যি হওয়ার দিন ১৩ জুলাই। এখন শুধু অপেক্ষা।