হাতের কাছে পেয়েও ছোঁয়া হলো না- ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হারের ম্যাচটিকে এমনই বলা যায়! আবার অবিশ্বাস্য, অসম্ভব, অচিন্তনীয়- নানা বিশেষণেও বিশেষায়িত করা যায় ম্যাচটিকে। তবে পরিকল্পনার অভাবে প্রায় জেতা ম্যাচটি যে হাতছাড়া হয়েছে, এ নিয়ে দ্বিমত নেই কারও। ৩৪ রানে প্রথম পাঁচজন ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে ফিরিয়ে ম্যাচ জিততে না পারার ব্যর্থতাকে মুশফিকদের অমার্জনীয় অপরাধও বলা যায়। আধুনিক ক্রিকেটে এমন সুযোগ কালেভদ্রে আসে। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে সেই সুযোগ আসার পরও সেটাকে কাজে লাগাতে না পেরে হারতে হলো মুশফিকদের। এই আফসোসকে সঙ্গী করে আজ একই ভেন্যু এবং একই সময়ে দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে নামছে বাংলাদেশ।
উপরের সারির ব্যাটিং লাইন ধসিয়ে না জেতার গল্প এই প্রথম নয়। ২০০৯ সালে তিন জাতির টুর্নামেন্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়ের পরিস্থিতি তৈরি করেও সাজঘরে ফিরেছিল মাথা নিচু করে। মিরপুরের ওই ম্যাচে ১৫২ রান করেছিল বাংলাদেশ। ১৫৩ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ৫১ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল শ্রীলঙ্কা। শুধু তাই নয়, ১১৪ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে যখন হারের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে দ্বীপরাষ্ট্র, তখনই হিমালয়সম দৃঢ়তায় জাঁদরেল ব্যাটসম্যান হয়ে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন লিজেন্ড স্পিনার মুত্তিয়া মুরালিধরন। মুরালিধরন সেদিন ২০৬.২৫ স্ট্রাইক রেটে ১৬ বলে ৩৩ রান করেছিলেন। সেই স্মৃতি এখনো তরতাজা ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে। দ্বিতীয় গল্পটি পরে ব্যাট করে। চলতি বছরের ১৭ জুন ভারতকে ১০৫ রানে গুটিয়েও ম্যাচ জিততে পারেনি ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায়। স্টুয়ার্ট বিনির বিধ্বংসী বোলিংয়ে মাত্র ৫৮ রানে শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস। বিনি ৪ রানে নেন ৬ উইকেট! ম্যাচ দুটির বিবেচনায়, কাল হয়তো কিঞ্চিৎ কঠিন ছিল। কিন্তু ১৩.১ ওভারে প্রতিপক্ষের ইনিংসের অর্ধেক মুড়িয়েও জিততে না পারার আফসোসে মুশফিকদের পুড়তে হবে আজীবন। গ্রেনাডার সেন্ট জর্জেস ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামের ধীরগতির উইকেটে তিন পেসার শুরুতে দুরন্ত বোলিং করেন। পরে সেই ধারা আর দেখা যায়নি। যদিও আল-আমিন ৪ উইকেট নেন। বোলাররা শুরুর ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে না পারায় ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়তে হয়েছে বলেন টাইগার অধিনায়ক মুশফিক, 'শুরুতে বোলাররা অসম্ভব ভালো বোলিং করেছেন। উইকেটও নিয়েছেন। কিন্তু শেষ দিকে সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেননি। ফলে ম্যাচেও টিকে থাকা যায়নি।' মাশরাফি বিন মর্তুজা ৮ ওভারে ২২ রান দেন। ৩৪ রানে ৫ উইকেট হারানোর পরও অধিনায়ক মুশফিককে কেন বোলিং করাননি, সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অথচ মাশরাফির ওভার বাকি ছিল। একইভাবে বাকি ছিল আল-আমিন ও তাসকিনের ওভারও। তবে অভাব বোধ হয়েছে একজন বাঁ হাতি স্পিনারের।
গভীর খাদে দাঁড়িয়ে থাকা দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান দিনেশ রামদিন ও কিয়েরন পোলার্ড ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে রেকর্ড গড়ে। ১৪৫ রান যোগ করেন দুজনে। বাংলাদেশের বিপক্ষে ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে আগের রেকর্ড ছিল ৬৬ রান। ১৯৯৯ সালে এই রেকর্ড গড়েছিলেন শিবনারায়ণ চন্দরপল ও নিঙ্ন ম্যাকলিন। পোলার্ড পরশু ৮৯ রান করেন ৭০ বলে ৫ চার ও ৬ ছক্কায় এবং রামদিন ৭৪ করেন ৭৬ বলে। এই দুই ব্যাটসম্যান জুটি গড়ে যখন উইকেটের চারদিকে স্ট্রোকের ফুলঝুরি ছোটাচ্ছিলেন, তখন একজন বাঁ হাতি স্পিনারের অভাব ফুটে উঠেছিল। আবদুর রাজ্জাক রাজ এবং মুমিনুল হক সৌরভ থাকার পরও কেন খেলানো হয়নি জন্ম দিয়েছে এসব প্রশ্নের। দুজনের ব্যাটিং দেখে মনে হয়েছে স্কোরবোর্ডে আরও কিছু রান থাকা উচিত ছিল। ম্যাচ শেষে মিডিয়ায় তাই বলেন মুশফিক, 'আর ২০-২৫ রান হলে ম্যাচটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতো বলেই মনে করি।' এমন সুযোগ বারবার আসবে না। কিন্তু যখনই আসবে, তখনই ধরতে হবে। তাহলেই হারের ধাক্কা সামলানো যাবে। না হলে টানা হারের স্বাদ নিতেই হবে।