বিশ্বকাপ এলে বাংলাদেশ উত্তেজনায় কাঁপে। এত উন্মাদনা যে মনে হয় বাংলাদেশই খেলছে। অথচ লোকাল ফুটবলে দর্শকদের কোনো সাড়া শব্দই নেই। অন্য ম্যাচের কথা বাদই দিলাম পেশাদার লিগে মোহামেডান-আবাহনীর লড়াইয়ে গ্যালারি থাকছে ফাঁকা। ৭০ বা ৮০ দশকের কথা চিন্তা করুন দেশ প্রধান এই দুই দলের লড়াই হলে কি অবস্থা হতো। ম্যাচ ঢাকা স্টেডিয়ামে, কিন্তু টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়তো। বাসা অফিস এমনকি স্কুল ও কলেজে দুই দলের পতাকা পত পত করে উড়তো। ১৯৭৮ সালে বৃটিশ এক সাংবাদিক মোহামেডান-আবাহনীর ম্যাচ দেখে মন্তব্য করেছিলেন, ম্যানচেস্টার ও লিভারপুলের লড়াইয়ে এত দর্শক হয় না। কালের বিবর্তনে ফুটবলে কি করুণ দশা। মাঠে যাওয়াতো দূরের কথা মোহামেডান-আবাহনীর ম্যাচ হচ্ছে এ খবর অনেক ফুটবলারই খোঁজ রাখেন না। একেতো মান নেই এরপর আবার ভয়াবহ দর্শক শূন্যতা। সব কিছু মিলিয়ে ফুটবলকে ঘিরে এতটা হতাশা বিরাজ করছিল অনেকে ধরেই নিয়েছিলেন দেশের ফুটবল আর জেগে উঠবে না।
আসলে এক্ষেত্রে বাফুফেকে দায়ী করা যায়। দর্শক মিলছে না তবুও ফুটবল ঢাকাকেন্দ্রিক। পরামর্শ দেওয়া হচ্ছিল বিভাগীয় শহরে বড় বড় ম্যাচের আয়োজনে। কে শুনে কার কথা, হঠাৎ করেই কেন জানি সিদ্ধান্ত নিল বাংলাদেশ-নেপালের একটি ম্যাচ সিলেটে আয়োজনের। প্রথম অবস্থায় কারো কারো আপত্তি ছিল। কারণ টি-২০ মহিলা বিশ্বকাপে সিলেটে তেমন সাড়া মেলেনি। সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে অটল ছিলেন। বলেছিলেন, দেখি না ঢাকার বাইরে দর্শক হয় কিনা। এ দেখা কি সেই দেখা রীতিমতো চমকিয়ে দেওয়ার মতো। প্রীতি ম্যাচে সিলেটে যে দর্শক সমাগম ঘটেছিল তা গত ১০ বছরে ঢাকাতেও হয়নি। ২০১১ সালে বাংলাদেশ বিশ্বকাপ ক্রিকেট আয়োজনের সময় টিকিট পেতে দর্শকরা গভীর রাত থেকে ব্যাংকের সামনে লম্বা লাইন দেন। সিলেটেও সেই দৃশ্য দেখা গেল। জাতীয় নয়, অনূর্ধ্ব-২৩ দলের লড়াই তা দেখতেই সিলেটবাসী অস্থির হয়ে উঠে। ২৫ হাজার আসনবিশিষ্ট পুরো গ্যালারিতো ভরে গিয়েছিল। এমনকি জায়গা না পেয়ে মাঠের দুই কিনারে হাজার হাজার দর্শকদের ভিড়। যা এক সময় ঢাকায় মোহামেডান-আবাহনী ম্যাচে দেখা যেত। ঘুমিয়ে থাকা ফুটবলকে জাগিয়ে তুলেছে সিলেট। এ জন্য বাফুফে অবশ্যই ধন্যবাদ পেতে পারে ম্যাচ আয়োজনের জন্য। কিন্তু ভূয়সী প্রশংসা করতে হয় সিলেটের কর্মকর্তাদের। ম্যাচকে ঘিরে তারা যে প্রচার অভিযান চালিয়েছিল তা সত্যিই চোখে পড়ার মতো। যা থেকে বাফুফে কর্মকর্তাদের অনেক কিছু শেখার আছে। ঢাকায় দর্শক আসছে না, অথচ প্রচারের কোনো প্রয়োজনই মনে করেন না। বরং কিছুটা বিরক্তি সুরে বলেন, প্রচার লাগবে না, যার আগ্রহ আছে এমনিতেই মাঠে ছুটে আসবে। না, এ ধারণা যে ভুল কে তাদের বুঝাবে। ইন্ডিয়ান আই লিগে দর্শক টানতে তাদের প্রতিটি চ্যানেলে প্রতিদিনই আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন দেখানো হচ্ছে। শুধু ভারত কেন, স্প্যানিস লিগে মেসি, রোনালদো, নেইমারদের মতো তারকা থাকার পরও প্রচারের কমতি থাকে না। প্রচারে কি উপকার তাতো সিলেটের কাছ থেকে নিশ্চয় শিক্ষা নেবে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে থাকা বাফুফের কর্মকর্তারা।
ঢাকায় প্রথম ম্যাচে জিতলেও সিলেটে নেপাল জিতে গেছে। এ নিয়ে ফুটবলপ্রেমীদের আফসোস থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু পরাজয়ের মধ্যে প্রাপ্তি মিলেছে এটা কম কিসের। সিলেট প্রমাণ করেছে বাংলাদেশের ফুটবল হারিয়ে যায়নি। ফুটবল দুর্দশায় এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কি হতে পারে। এক ম্যাচেই দেশের মৃত প্রায় ফুটবলের চেহারা পাল্টে দিয়েছে। এ নিয়ে তারকা ফুটবলাররা ভীষণ খুশি। জাতীয় দলের প্রথম অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু বললেন, ম্যাচে কিছু ভুলত্র“টি ছিল। কিন্তু এত দর্শক হবে ভাবতেই পারিনি। সিলেটের মানুষ খেলা পাগল জানতাম। কিন্তু ফুটবলের এই অবস্থায় দুই দেশের অনূর্ধ্ব-২০ দলের লড়াইয়ে এমন সাড়া দেবে যা দেখে আমি অভিভূত। দেশ নন্দিত সাবেক ফুটবলার শেখ মো. আসলাম বললেন, সিলেটবাসীকে ধন্যবাদ দিতে হয়। তাদের উন্মাদনায় প্রমাণ মিলেছে ফুটবল আসলেও আমাদের প্রাণের খেলা। আরেক নন্দিত ফুটবলার কায়সার হামিদ বললেন, আমি সিলেটের ছেলে তাই আমি গর্বিত যে সিলেটবাসী প্রমাণ দিয়েছেন দেশের ফুটবল এখনো বেঁচে আছে। এই দৃশ্য দেখার পর বাফুফের ঘুম ভাঙা উচিত। কথা হচ্ছে সিলেটে দর্শকের ঢল দেখে বাফুফের চিন্তার পরিবর্তন ঘটবে কি? এখনও ফুটবল কি ঢাকার মধ্যে বন্দী থাকবে। সিলেট প্রমাণ দিয়েছে ভালো ফুটবল হলে দর্শক আসবেই। পেশাদার লিগের পাশাপাশি নতুন টুর্নামেন্টের মাধ্যমে ফুটবলকে ঢাকার বাইরে আয়োজন করলে সিলেট কেন অন্য জেলাতেও দর্শক হবে। সামনে বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তর্জাতিক ফুটবলের আয়োজন হবে। বাফুফেরতো উচিত হবে শুধু ফাইনালকে ঢাকায় রেখে অন্য ম্যাচ বিভাগীয় শহরে আয়োজন। প্রীতি ম্যাচেই এত মানুষের ঢল আর আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হলে অবস্থা তখন কোন পর্যায়ে যাবে তা কি ভেবে দেখেছে বাফুফে। সিলেট ফুটবলের বন্ধ দুয়ার খুলে দিয়েছে। এখন বাকি কাজ বাফুফেকেই করতে হবে।
শিরোনাম
- পাকিস্তান থেকে সরিয়ে যেখানে হবে পিএসএল
- সেলিনা হায়াৎ আইভী গ্রেফতার
- অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম দায়িত্ব ছিল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা : নাহিদ
- পাকিস্তানি পাইলটকে আটকের দাবি ভারতের, প্রমাণ চাইল ইসলামাবাদ
- আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ জাবি শিক্ষার্থীদের
- আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে রাবিতে বিক্ষোভ
- প্রথম আমেরিকান পোপ রবার্ট প্রেভোস্ট
- বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি খাত হুমকিতে
- 'পাকিস্তান আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিলে সারা পৃথিবী জানবে'
- ভারতের সেনা-স্থাপনায় হামলা, অস্বীকার পাকিস্তানের
- আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও বিচারের দাবিতে যমুনার সামনে অবস্থান
- হঠাৎ 'ব্ল্যাকআউট', মাঝপথে পরিত্যক্ত আইপিএল ম্যাচ
- পাকিস্তানের পাল্টা হামলায় সম্পূর্ণ ‘ব্ল্যাকআউট’ জম্মুতে পরপর বিস্ফোরণ, দাবি ভারতের
- বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীকে চেয়ারম্যান করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গঠন
- জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সিইও’র দায়িত্ব ছাড়লেন মীর স্নিগ্ধ
- সংবাদ সম্মেলনে যেসব বিষয় এড়িয়ে গেলেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব
- পাকিস্তানের হামলার আশঙ্কায় পাঞ্জাবে ব্ল্যাকআউটের নির্দেশ
- আবদুল হামিদের দেশত্যাগ: একজন প্রত্যাহার, দু’জন বরখাস্ত
- ভারত-পাকিস্তানকে সংলাপে বসার আহ্বান ইইউ’র
- ‘এলএনজি ও নবায়নযোগ্য খাত নিয়ে সৌদির সাথে কাজে আগ্রহী বাংলাদেশ’
ঘুম ভাঙবে কি বাফুফের
ফুটবল উন্মাদনায় দর্শক
ক্রীড়া প্রতিবেদক
প্রিন্ট ভার্সন

এই বিভাগের আরও খবর
সর্বশেষ খবর

পাকিস্তানের পাল্টা হামলায় সম্পূর্ণ ‘ব্ল্যাকআউট’ জম্মুতে পরপর বিস্ফোরণ, দাবি ভারতের
১০ ঘণ্টা আগে | পূর্ব-পশ্চিম

পাকিস্তানের ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিষ্ক্রিয় করার দাবি ভারতের
১৬ ঘণ্টা আগে | পূর্ব-পশ্চিম

সংঘাতের মধ্যেই পাকিস্তান-ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের মধ্যে যোগাযোগ শুরু
২৩ ঘণ্টা আগে | পূর্ব-পশ্চিম