দেশের ক্রীড়াঙ্গনে অনেকে ফুটবল, ক্রিকেট খেলেছেন। হয়তোবা এক সঙ্গে হকিও খেলেছেন এমন খেলোয়াড় খুঁজে পাওয়া যাবে। কিন্তু এক সঙ্গে তিন খেলায় জাতীয় দলে প্রতিনিধিত্ব করেছেন এমন খেলোয়াড় একজনই রয়েছেন। হ্যাঁ, রেহানা পারভীন। এই মহিলা ক্রীড়াবিদের এক সঙ্গে কাবাডি, হ্যান্ডবল ও ফুটবলে জাতীয় দলে খেলার সৌভাগ্য হয়েছে। যাকে বলে একের ভেতরে তিন। কুড়িগ্রামে জন্ম নেওয়া এ ক্রীড়াবিদ ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন বড় খেলোয়াড় হওয়ার। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় স্কুলে প্রতিযোগিতামূলক খেলায় অংশগ্রহণ করেন। স্কুল ও কলেজ জীবনে তিনি ছিলেন সেরা ক্রীড়াবিদ।
২০০৬ সালে রেহানার জাতীয় প্রতিযোগিতায় অভিষেক ঘটে। সেবার প্রথম আন্তঃজেলা মহিলা ফুটবল চাম্পিয়ন শিপে ঢাকা জেলার পক্ষে অংশগ্রহণ করেন তিনি। সত্যি বলতে কি তারই নৈপূণ্যতায় ঢাকা প্রতিযোগিতায় শিরোপা জয় করেছিল। পরের বছর আবার আন্তঃজেলা কাবাডি প্রতিযোগিতায় ঢাকা জেলার পক্ষে অংশ নেন। এখানেও রেহানার দল চ্যাম্পিয়ন হয়। দু'বার বাংলাদেশ গেমসে হান্ডবলে চ্যাম্পিয়ন হয় রেহেনার দল। এছাড়া ঊষা, দিলকুশা ও আরাম ক্লাবের পক্ষে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। তিন খেলাতেই রেহানার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। তাই জাতীয় দলে ডাক পেতে বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি। ২০০০ সালে ঢাকায় এশিয়ান যুব মহিলা হ্যান্ডবল চ্যাম্পিয়নশিপ দিয়েই আন্তর্জাতিক আসরে তার আবির্ভাব ঘটে। ২০০৬ সালে শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে অনুষ্ঠিত ১০ম সাফ গেমসে মহিলা জাতীয় কাবাডি দলে খেলার সুযোগ আসে। সেখানে তিনি অসাধারণ নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন। কিন্তু স্বর্ণ বা রৌপ নয় বাংলাদেশকে তামা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। সাফগেমস থেকে দেশে ফিরেই ডাক পান এএফসি অনূধর্্ব-১৯ বাছাইপর্ব ফুটবলে। ভারতের নয়াদিলি্লতে এ আসর অনুষ্ঠিত হয়। ভারতে উড়িষ্যায় আমন্ত্রণমূলক মহিলা ফুটবল প্রতিযোগিতায় বাফুফে একাদশের হয়ে ৭টি প্রদেশে খেলেন। দুই ম্যাচে রেহানা সেরা ফুটবলারের পুরস্কার পান। খেলা ছেড়ে দিলেও ক্রীড়া ভূবনের মায়া ত্যাগ করতে পারেননি। বললেন, যতদিন বাঁচবো নিজেকে এ অঙ্গনে জড়িয়ে রাখব। কোচ হলেও সংগঠক হিসেবে তার অভিজ্ঞতাও কম নয়। ২০১২ সালে ভারতের পাটনায় অনুষ্ঠিত প্রথম মহিলা বিশ্বকাপ কাবাডিতে তিনি বাংলাদেশ দলের ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন। ফিফা এম এ এলিট রেফারিস কোর্স সম্পন্ন করেছেন। তাছাড়া কোচের স্বীকৃতি হিসেবে এএফসি 'সি' লাইসেন্স আছে। ভলিবল কোচেস কোর্সও করেছেন তিনি। হ্যান্ডবলে অলিম্পিক সলিডারিটি টেকনিক্যাল কোর্সের সনদপত্র পেয়েছেন। তাছাড়া লন্ডনে এএফসি অনূধর্্ব-১৯ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে ফুটবল দলের ট্রেনারের দায়িত্ব পালন করেন। ক্রীড়া ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে রাষ্ট্রপতি আনসার সেবাপদক গ্রহণ করেন। অর্থাৎ ক্রীড়াঙ্গনে রেহেনার কৃতিত্বের কথা বলে শেষ করা যাবে না। রেহেনার কাছে প্রশ্ন ছিল দেশের খেলাধুলায় মেয়েরা তেমনভাবে এগুতে পারছেন না কেন? কথাটা শুনেই আপত্তি জানালেন। বললেন, মেয়েরা কোনোভাবেই পিছিয়ে নেই। ভালো মতো যত্ন ও সুযোগ -সুবিধা দিলে আরও উন্নয়ন হবে। তিনি বেশ ক্ষোভের সঙ্গে বললেন, ক্রীড়াঙ্গন পরিচালনার জন্য যোগ্য ও দক্ষ লোকের প্রয়োজন রয়েছে। উড়ে এসে জুড়ে বসা সংগঠকদের মাধ্যমে এ অঙ্গনে উন্নয়ন ঘটবে না। আমি মনে করি খেলাধুলার জন্য সরকার আন্তরিকতার পরিচয় দিলেও মেধাবী সংগঠকের অভাবে আমরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তেমনভাবে এগুতে পারছি না।