পদক দেওয়ার আগ মুহূর্তে লাউড স্পিকারে বাজছিল আবহ সংগীত। কোরিয়ান ভাষায় হওয়ায় তা বোঝা যাচ্ছিল না। কিন্তু তার তালে তালে ঠিকই নেচে যাচ্ছিল পাকিস্তানের মেয়েরা। অন্যদিকে অপরিচিত সংগীতের প্রতিটি ধ্বনি যেন সালমাদের বুক এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিচ্ছিল। মুখে কারও কথা নেই, চোখে রাজ্যের হতাশা। কর্মকর্তাদের ভিড়ে মুখ লুকাতে চাচ্ছিলেন কোচ চাম্পিকা গামাগে। কাছে গিয়ে ম্যাচ হারের টার্নিং পয়েন্ট জানতে চাইলে মৃদু স্বরে কোচ বললেন, 'পরাজিত ম্যাচে আর টার্নিং পয়েন্ট দেখে লাভ কি? তবে আমি মনে করি বৃষ্টি না হলে আমরা সহজেই জিতে যেতাম। আজকের উইকেটটা অনেক ভালো ছিল। আমাদের বোলাররা অনেক ভালো করেছিল বলেই এমন উইকেটে পাকিস্তানকে মাত্র ৯৭ রানে আটকাতে পেরেছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর হলো না।'
তাহলে ৪২ বলে ৪৩ রানের জয়ের টার্গেটটা কি বাংলাদেশের জন্য দুরূহ ছিল? এমন প্রশ্নে গামাগে বলেন, 'অসম্ভব বলব না। তবে প্রথম দুটি রানআউটের কারণে ম্যাচটা অনেক কঠিন হয়ে যায়। তবে ম্যাচটা আমাদের হাতছাড়া হয়েছে ষষ্ঠ ওভারে। রান তো হয়ইনি উল্টো ওই ওভারে হারাতে হয়ে দুই উইকেট। তবে সুযোগ ছিল শেষ ওভার পর্যন্ত। কিন্তু হলো না।'
খুব কাছে গিয়েও স্বর্ণ পদক জিততে না পারার জন্য অধিনায়ক সালমা খাতুন যেমন মর্মাহত তেমন ক্ষুব্ধও। বাংলাদেশ দলপতির যেন বিশ্বাসই হচ্ছিল না, তারা ম্যাচটি হেরেছেন। পরাজয়ের কারণ হিসেবে ব্যাটসম্যানদের অযথা শর্ট খেলার প্রবণতাকেই দায়ী করলেন সালমা। ম্যাচ শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, 'প্রথমে দ্রুত উইকেট পতনের কারণে ম্যাচটা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে গেছে। ব্যাটসম্যানদের এত তাড়াহুড়া করার কোনো দরকার ছিল না। মাথা ঠাণ্ডা রেখে বলে বলে রান নিলেই হয়ে যেত। কিন্তু আমাদের ব্যাটসম্যানরা উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল। এ কারণেই ভুল শর্ট খেলেছে।'
শেষ ওভার পর্যন্ত সুযোগ ছিল বাংলাদেশের। ৬ বলে দরকার ছিল ৭ রান। কিন্তু পাকিস্তানি বোলার নিদা দারের করা ওভারে তিন রানে তিন উইকেট হারায় মেয়েরা। আসলে শেষ মুহূর্তে যেন চাপেই ভেঙে পড়েছিল লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানরা। সালমা খাতুন জানালেন, তারা নাকি এর আগে কখনোই এমন শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হননি। কোনো ম্যাচে যে এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, সে সম্পর্কেও নাকি বাংলাদেশের মেয়েদের কোনো ধারণা ছিল না।
ম্যাচ শেষে এক কর্মকর্তা অবশ্য সালমার নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুললেন। সালমা নাকি মাঠে সবসময় নিজের পারফরম্যান্স নিয়েই শুধু ব্যস্ত থাকেন। সেই কর্মকর্তা আরও জানিয়েছেন, ক্রিকেটারদের নিজেদের মধ্যে নাকি মনোমালিন্য রয়েছে। অনেকটা ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, 'যে দলের একজন আরেকজনের সঙ্গে কথা বলেন না, সে দলের জন্য এর চেয়ে আর ভালো কি ফল আশা করা যায়।' যদিও তিনি বিষয়টি স্বাভাবিক করতে গিয়ে বলেছেন, বিষয়টা এখন মিটমাট হয়েছে। তবে কালকের সহজ ম্যাচটা হারার পর এ বিষয়টিও সামনে চলে এসেছে। কেননা ক্রিকেটের মতো দলীয় খেলায়, খেলোয়াড়দের মধ্যে মনোমালিন্য স্থায়ী হলে সহজ লক্ষ্যও যে অর্জন অসম্ভব হয়ে পড়ে। এ কারণেই মেয়েরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এমন সহজ টার্গেটে পৌঁছাতে ব্যর্থ হলো কি-না কে জানে!