টেস্ট স্ট্যাটাস পেতে বাংলাদেশকে শর্ত জুড়ে দিয়েছিল আইসিসি। শর্ত ছিল প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট আয়োজনের। ক্রিকেটের শাসক সংস্থার সেই শর্ত মেনে বিসিবি ১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে শুরু করে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট। সেই শুরু। এরপর থেকে প্রতি মৌসুমেই দেশের বিভাগগুলোকে নিয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের আয়োজন করছে বিসিবি। তবে সময় যত গড়িয়েছে, ততই প্রশ্ন উঠছে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের মান এবং ক্রিকেটারদের কমিটমেন্ট নিয়ে। রেলিগেশন পদ্ধতি ছাড়া লিগ হচ্ছে বলে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই বিভাগগুলোর মধ্যে। তাই অংশগ্রহণকারী ক্রিকেটাররাও খেলেন অর্থ উপার্জনের জন্য। কোনোরকম প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকায় ক্রিকেটাররাই জাতীয় ক্রিকেট লিগের নাম দিয়েছেন 'পিকনিক টুর্নামেন্ট' বলে। দেশের ক্রিকেটের মানোন্নয়নের জন্য এই অবস্থা থেকে বেরোতে চাইছে বিসিবি। তাই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটকে নতুন আদলে করতে চাইছে। জাতীয় ক্রিকেটকে আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে নতুন একটি প্রস্তাবনা রয়েছে কয়েকজন পরিচালকের। সাত বিভাগ ও ঢাকা মহানগরীর পরিবর্তে প্রিমিয়ার ক্রিকেটের সুপার সিক্সে দলগুলো নিয়ে জাতীয় ক্রিকেট আয়োজন করতে বিসিবিকে প্রস্তাব দিয়েছেন পরিচালকরা। তবে সম্ভাবনা রয়েছে আগামী মঙ্গলবারের সভায় প্রস্তাবটি আলোচনা হওয়ার। প্রস্তাবে প্রিমিয়ার ক্রিকেটের সুপার সিক্সে দলগুলো নিয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের যেমন প্রস্তাব রয়েছে, তেমনি রয়েছে বিভাগগুলোকে নিয়ে ওয়ানডে ও টি-২০ টুর্নামেন্ট আয়োজনের।
ছয় বিভাগ নিয়ে শুরু হয় জাতীয় ক্রিকেট। পরবর্তীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়াতে বাড়ানো হয় আরও দুটি দল। কিন্তু এক-দুই মৌসুম পর ফের পুরনো ফরমেটে ফিরে আসে বোর্ড। ছয় দল নিয়েই চলতে থাকে জাতীয় লিগ। দলগুলোর মাঝে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়াতে বাড়ানো হয় অর্থ। কিন্তু এতেও কোনো কাজ হয়নি। বরং পাতানো খেলার অভিযোগও ওঠে আসে বিভাগগুলোর বিপক্ষে। ক্রিকেটাররা শুধু অর্থের জন্যই অংশ নেন জাতীয় ক্রিকেটে, এমন অভিযোগও রয়েছে। জাতীয় ক্রিকেটে অংশ নিলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পরিসংখ্যানে হয় তো নাম ওঠে তাদের। কিন্তু ক্রিকেটের মান কতটুকু বেড়েছে? প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের মান যে কি, টেস্ট ক্রিকেটের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। ৮৫টি টেস্ট খেলে বাংলাদেশের জয়সাকুল্যে ৪টি এবং ড্র ১১টি। বাকি সবগুলোতেই হার। যার ৩০টি আবার ইনিংস হার। এ ছাড়া ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সও অনুজ্জ্বল। টেস্ট ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরি মাত্র একটি। ক্রিকেটের এমন অবস্থার পরিবর্তনের জন্যই ভিন্ন আদলে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট আয়োজন করতে চাইছে বিসিবি।
পরিচালকরা দেশের ক্রিকেট উন্নয়নের জন্য প্রিমিয়ার ক্রিকেটের শীর্ষ ৬ ক্লাবকে নিয়ে জাতীয় লিগ করতে চাইছে ঠিকই, কিন্তু প্রস্তাবটি পাস করা কঠিন। এতে করে বিভাগগুলোর আর্থিক ক্ষতি হতে পারে। তাই তাদের সমর্থন মিলতে নাও পারে। জাতীয় ক্রিকেটের বাজেট কম করে ৬-৭ কোটি টাকা। অর্থের জন্যই বিভাগগুলো বেঁকে বসতে পারে। কিন্তু প্রস্তাবটি পাস হলে ওই একই ক্রিকেটার খেলবেন। পাল্টে যাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা। প্রিমিয়ার ক্রিকেটে ক্লাবগুলোর যে চাপ থাকে ক্রিকেটারদের ওপর, সেটা ফিরে আসবে এখানেও। তবে প্রস্তাব পাস হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে ক্লাবের পরিচালক বেশি হওয়ায়। প্রস্তাব পাস হলেও আবার ক্লাবগুলোকে বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হবে। এ প্রসঙ্গে প্রস্তাবক এক পরিচালক বলেন, 'বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। বিষয়টি বিসিবির পরবর্তী সভায় আলোচনা হবে কি-না, এখনো নিশ্চিত নই। আবার বিভাগগুলোর এতে সায় থাকবে কি-না, সেটা বিবেচ্য বিষয়। তবে এটা নিশ্চিত, যদি প্রিমিয়ার ক্রিকেটের শীর্ষ ৬ ক্লাবকে নিয়ে জাতীয় ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হয়, তবে সেটা অবশ্যই দেশের ক্রিকেটের লাভ হবে।'