বাংলাদেশের গ্রুপে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর। শক্তির বিচার করলে গ্রুপে সিঙ্গাপুর ছাড়া চয়নদের জয়ের সম্ভাবনা ছিল না। কিন্তু বাংলাদেশের পাকিস্তানি কোচ নাভেদ আলম জোর গলায় বলেছিলেন, শুধু সিঙ্গাপুর নয়, গ্রুপ পর্বে আমরা জাপান কিংবা মালয়েশিয়াকে হারাতে চাই। সেই সামর্থ্য তার শিষ্যদের রয়েছে। নাভেদের এ কথায় অনেকে হেসেছিলেন। কারণ তার প্রশিক্ষণে বাংলাদেশ এতই শক্তিশালী রূপ ধারণ করল যে জাপান বা মালয়েশিয়াকে হারানো সম্ভব। এটা ঠিক হকিতে এক সময় দুই দল শক্তির দিক দিয়ে বাংলাদেশের সমানই ছিল। কালের বিবর্তনে সে অবস্থা আর নেই। ডে বাই ডে মান বাড়িয়ে জাপান ও মালয়েশিয়া শক্তিশালী আসনে বসে গেছে। এরা এখন ভারত ও পাকিস্তানকেও ছেড়ে কথা বলে না। অন্যদিকে বাংলাদেশ ডে বাই ডে পিছিয়ে যাচ্ছে। ভাগ্যের জোরে এখন শ্রীলঙ্কার সঙ্গে জিততে হয়।
কোচ নাভেদ যতই আশা প্রকাশ করুক না কেন হকিপ্রেমীরা ব্যাপারটি অসম্ভবই মনে করেছেন। শেষ পর্যন্ত অসম্ভবকে আর সম্ভবে রূপান্তরিত করা যায়নি। ইনচেনে এশিয়ান গেমস হকিতে বাংলাদেশ গ্রুপের প্রথম ম্যাচে জাপান ৮-০, দ্বিতীয় ম্যাচে মালয়েশিয়ার কাছে ৫-১ গোলে হেরে গেছে। সিঙ্গাপুরকে কষ্টে হারালেও শঙ্কা জেগেছে আজ দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে না আটাত্তরের পুনরাবৃত্তি ঘটে। সেবার এশিয়ান গেমসে পাকিস্তানের কাছে ১৭-০ গোলে হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। জাপান বা মালয়েশিয়া যদি এত বড় ব্যবধানে জিততে পারে তাহলে দক্ষিণ কোরিয়ার ১৭ গোল দেওয়াটা অবাকের কিছু হবে না। সত্যি বলতে কি হকিতে চয়নরা ভালো কিছু করবে তা কেউ আশা করেননি। কিন্তু প্রথম দুই ম্যাচে এমন ভরাডুবি ঘটবে ভাবতেই পারেনি। চয়ন বলে গিয়েছিলেন তার টার্গেট পাঁচ কিংবা ছয়ে থাকা। এখন যে অবস্থা তাতে মনে হচ্ছে গতবারের আট নম্বরে থাকাটাই কঠিন হয়ে পড়েছে। কেন এ বিপর্যয় তা জানতে চাওয়া হয়েছিল হকি দলের সাবেক অধিনায়ক মুসা মিয়ার কাছে। মুসা ৯৪, ৯৮, ২০০২ ও ২০০৬ সালে টানা চার এশিয়ান গেমস খেলেছেন। ২০০৬ সালে কাতারে তিনি দলের অধিনায়কও ছিলেন। মুসা প্রথমেই বললেন, অনেকেই বলেছেন এবারে প্রস্তুতি নাকি ভালোই হয়েছে। হয়তো হয়েছে কিন্তু কখনো আশাবাদী ছিলাম না। কারণ হকিতে বাংলাদেশ এমনিতেই দুর্বল। তারপর আবার দলে অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ের অভাব রয়েছে। বিশেষ করে জিমি, জাহিদ, কামরুজ্জামান ও পিন্টুকে সাসপেন্ড করাতে দলের শক্তি আরও কমে যায়। শৃঙ্খলা ভাঙার অপরাধে তারা হয়তো নিষিদ্ধ হয়েছেন। কিন্তু তারাতো তাদের ভুল স্বীকার করে শাস্তি প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন। হকি ফেডারেশন ভালো মতোই জানত ২/৩ জন ছাড়া দলে অভিজ্ঞ খেলোয়াড় নেই। সেই দিকটা বিবেচনা করে ফেডারেশনের উচিত ছিল তাদের শাস্তি প্রত্যাহার করে এশিয়ান গেমসে পাঠানো। ওরা খেললেও হয়তো জাপান বা মালয়েশিয়াকে রুখে দেওয়া যেত না। কিন্তু আমি নিশ্চিত জিমিরা মাঠে থাকলে এমন ভরাডুবি ঘটতো না। দুই ম্যাচে লজ্জাকর হারের পর এশিয়ান গেমসেতো ভালো কিছু আশা করা যায় না। এখন এই বিপর্যয় থেকে শিক্ষা নিতে হবে। সব বিভেদ ভুলে হকি উন্নয়নে কাজ করতে হবে। আমার মনে হয় এখন আর বসে থাকার সুযোগ নেই। বিপর্যয় থেকে হকিকে কীভাবে রক্ষা করা যায় তা জরুরিভিত্তিতে ভাবতে হবে। তা না হলে হকি আরও অন্ধকারে হারিয়ে যাবে।