জিওফ থমসন, ডেনিস লিলি, মাইকেল হোল্ডিং, অ্যান্ডি রবার্টস, ম্যালকম মার্শালদের বলা হতো গতির সম্রাট। ওদের দেখানো পথে হেঁটেছেন ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুস, কার্টলি অ্যামব্রোসরা। যাদের গতির কাছে নত হয়ে থাকতেন ব্যাটসম্যানরা। সর্বশেষ শোয়েব আখতার, শ্যন টেইট, শেন বন্ডদের মধ্যে চলতো অলিখিত এক লড়াই। যা পরিচিত 'গতির লড়াই' বলে। সেই লড়াইয়ে কখনো জিতেছেন শোয়েব, কখনো টেইট। কখনো আবার বন্ড। কিন্তু এই লড়াইয়ে কখনোই শামিল হয়নি বাংলাদেশের কোনো পেসার। ঘণ্টায় ১৪০-১৫০ কিমি গতিতে বোলিং করার কথা ভাবতেই পারেননি টাইগার বোলাররা। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলতে এসে গতির ঝড় তুলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা, রুবেল হোসেন, তাসকিন আহমেদরা। ইতিহাস আর ঐতিহ্যের মেলবোর্নে 'দ্বীপরাষ্ট্র' শ্রীলঙ্কার কাছে হয়তো বড় ব্যবধানে হেরেছেন মাশরাফিরা। কিন্তু জিতেছেন গতির লড়াইয়ে। ম্যাচে সর্বোচ্চ গতির পাঁচ বোলারের তিনজনই বাংলাদেশের। সবচেয়ে বেশি ১৪২.৯ কিলোমিটার গতিতে বোলিং করেছেন রুবেল। পিছনে ফেলেছেন তারকা বোলার ল্যাসিথ মালিঙ্গাকে।
অস্ট্রেলিয়ার উইকেটে পেসাররা সুবিধা পাবেন, গতি ঝড় তুলবেন-এটাই স্বাভাবিক। উইকেটের বাউন্স দেখে মন খুলে বোলিং করেছেন মাশরাফি-রুবেল-তাসকিন। ক্যানবেরার মানুকা ওভালে আফগানিস্তান ম্যাচে নিয়মিতভাবে ১৪০-১৪৫ কিলোমিটার গতিতে বোলিং করেন রুবেল। কম যাননি তাসকিনও। তরুণ এই পেসার ১৪০-১৪২ গতিতে বোলিং করেন। তবে মাশরাফি তার অভিজ্ঞতা দিয়ে বোলিং করে প্রতিপক্ষকে আটকে রানে উইকেটে। তারপরও কোনো সময়ই বলের গতি ১৩৫ কিলোমিটারের নিচে ছিল না। ব্রিসবেনের ওলন গাব্বায় বোলিংয়ের সুযোগ পাননি টাইগার বোলাররা। বৃষ্টিতে খেলা হতে পারেনি ব্রিসেবেনে।
ব্রিসবেনের হার্ড ও বাউন্সি উইকেটে খেলতে না পারার যে হতাশা ছিল মাশরাফিদের, সেটা পুষিয়ে নেন মেলাবোর্নে খেলে। কুমার সাঙ্গাকারা, তিলকরত্নে দিলশান, লাহিরু থিরিমান্নেদের সঙ্গে লড়াইয়ে পারেননি ঠিকই কিন্তু মালিঙ্গা, লাকমলদের হারিয়েছেন গতিতে। বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচে গতির শীর্ষ পাঁচ বোলারের তিনজনই বাংলাদেশের। সর্বোচ্চ ১৪৩.৯ কিলোমিটার গতিতে বোলিং করেন রুবেল। তাসকিনের বোলিংয়ের গতি ছিল ১৪২.৮ কিলোমিটার এবং মাশরাফির গতি ছিল ১৪০.৯ কিলোমিটার। গতি দিয়ে সাঙ্গাকারা-দিলশানদের কিছুই করতে পারেননি মাশরাফিরা। কিন্তু যা করেছেন, সেটা বাংলাদেশের পেস বোলিংয়ের ভবিষ্যতকেই উজ্জ্বল করেছেন। ম্যাচে মাশরাফির স্পেল ১০-০-৫৩-০। রুবেলের স্পেল ৯-০-৬২-১ এবং তাসকিনের ১০-১-৮২-০। এই স্পেলগুলো দেখে ভ্রু কুঁচকে উঠাই স্বাভাবিক। মানসিকভাবে হয়তো ধাক্কা খেয়েছেন। কিন্তু আত্দবিশ্বাস বাড়িয়েছে কোনো সন্দেহ নেই। নেলসনের স্যাঙ্টন পার্কে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে সাহায্য করবে।
গতি যে অনেক সময় প্রতিপক্ষকে বিধ্বস্ত করে, আফগানিস্তান ম্যাচ তার জ্বলন্ত উদাহরণ। বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ২৬৮ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে আফগানিস্তান শুরুতেই হোঁচট খায় ৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে। ওই ম্যাচে মাশরাফি ছিলেন অসাধারণ। টাইগার অধিনায়কের বোলিং স্পেল ছিল ৯-২-২০-৩। রুবেলের বোলিং স্পেল ৬-০-২৭-১ এবং তাসকিনের ৭-০-২৩-১।
এক সময় যেখানে ১৩০ কিলোমিটার গতিকেই ধরা হতো বাংলাদেশের সেরা। এখন সেখানে ১৪০-১৪৫ কিলোমিটার গতিতে বোলিং করে যাচ্ছেন টাইগার বোলাররা, যা আপ্লুত করতেই পারে সবাইকে। তবে এটাও সত্যি, শুধু গতিতে লেবালিং করেই প্রতিপক্ষকে নাকাল করা সম্ভব নয়। এজন্য নিখুঁত লাইন-লেন্থও জরুরি। যা রয়েছে ডেল স্টেইন, মিচেল জনসনদের। যারা নিখুঁত লাইন-লেন্থ বজায় রেখে উইকেটে গতির ঝড় তুলেন। এদের মতো না হলেও বাংলাদেশের পেসারদের ভবিষ্যৎ যে উজ্জ্বল, সেটা মেলবোর্নের উইকেটেই বুঝিয়ে দিয়েছেন মাশরাফি-রুবেল-তাসকিনরা।