১৬টি বছর অপেক্ষা করতে হল এ দিনটির জন্য। পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ তিনটি ওয়ানডেতে জয়ের খুব কাছ থেকে ফিরতে হয়েছিল টাইগারদের। মরণকামড়ের নেশা যেন পেয়ে বসেছিল সাকিব-তামিম-মুশফিকদের। প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে বিসিবি একাদশের জয়ে নতুন আগমনী আবহ সৃষ্টি করেছিল। অবশেষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচেই দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান ঘটল। তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিমের শতকে ১৬ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে পাকিস্তানকে হারিয়েছে বাংলাদেশ।
পাকিস্তানকে ৭৯ রানে হারিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে প্রথম ও শেষবার পাকিস্তানকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ।
শুক্রবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেটে ৩২৯ রান করে বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে এটাই তাদের সর্বোচ্চ রান। দিন-রাতের খেলায় ব্যাটিংয়ে শুরু করেছিল বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে দলের পক্ষে দীর্ঘ ২ বছর পর তামিম ইকবাল দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি। ১৩২ রানের চোখ ধাঁধানো এক ইনিংস। তামিমের ইনিংসটি ছিল ১৩৫ বলে ১৫ চার ও ৩ ছয়ের ছন্দ মোড়ানো। এটা তার ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি। চার ম্যাচ আগেও তামিম ৯৫ রানের এক ইনিংস খেলেছেন। তারপরও তাকে নিয়ে ঢের আলোচনা হয়েছে। বলা যায় এই সেঞ্চুরির পর সেসব আলোচনা উবে যাবে। তবে তামিমের সেঞ্চুরি উদযাপনের ঢঙ নিয়ে কিন্তু নতুন আলোচনার সূত্রপাত হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।
রানের মধ্যে দিন কাটানো মুশফিকুর রহিম করেছেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি (১০৬)। পাকিস্তানের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন মাত্র ৬৯ বলে। ১৩ চার ও ২ ছয়ে সাজানো তাঁর সেঞ্চুরিটিই বাংলাদেশকে সাহসী করে তুলেছে। বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তৃতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরি। দ্রুততম সেঞ্চুরির তালিকায় সবার ওপরে আছেন সাকিব আল হাসান। সাকিব ৬৩ বলে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে; ২০০৯ সালে বুলাওয়েতে। একই বছরে সাকিব মিরপুরে ৬৮ বলে সেঞ্চুরিও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।
বাংলাদেশের পক্ষে ওয়ানডে এক ইনিংসে দুই ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরির এটাই প্রথম। তামিম-মুশফিক জুটি ১৭৮ রান করে খুলেছেন রেকর্ডের নতুন পাতা। পুরানো ইতিহাস ঢেকে দিয়ে ২১.৪ ওভার ব্যাটিং করেছেন। দলের রান ৬৭/২ থেকে ২৪৫ পর্যন্ত টেনে নিয়েছেন ওভার প্রতি ৮.২১ রান নিয়ে। শুধু তৃতীয় উইকেটের যুগলেই নয়; এটা যে কোনো উইকেটে বাংলাদেশের নতুন মাইলফলক। তৃতীয় উইকেট জুটিতে দুজনে তুলেছেন ১৭৮ রান। রেকর্ড এই জুটিতে তামিমের অবদান ৯২ আর মুশফিকের ৭৯ রান। ২০০৬ সালে কেনিয়ার বিপক্ষে চতুর্থ উইকেট ১৭৫ রান ছিল যে কোনো উইকেট জুটিতে বাংলাদেশের আগের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড, রাজিন সালেহ -হাবিবুল বাশারের। আর তৃতীয় উইকেট জুটির আগের রেকর্ডও ছিল ২০১২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। খুলনার ওয়ানডেতে তৃতীয় উইকেট জুটিতে এনামুল হক-মুশফিকুর রহিম ১৭৪ রান করেছিলেন।
বাংলাদেশের ইনিংসে তৃতীয় সর্বোচ্চ ৩১ (২৭) রান এসেছে সাকিবের ব্যাটে। সৌম্য সরকার উদ্বোধনী জুটিতে ব্যক্তিগত ২০ রানের মাথায় রান আউট হয়েছেন। দ্বিতীয় উইকেটে বিশ্বকাপের পারফরমার মাহমুদউল্লাহ মাত্র ৫ রানে রাহাত আলীর বলে বোল্ড হওয়ায় কিছুটা চাপে পড়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু মুশফিক উইকেটে আসার পরপরই রানের চাকা সচল হয়ে উঠেছে। সেই মেশিন আর থামেনি। বরং বাংলাদেশ শেষ ১০ ওভারে তুলেছে ৯৩ রান। শেষের দিকে ব্যাট হাতে সাব্বির ৭ বলে ছক্কা ও চারে করেছেন ১৫। শেষমেষ ৩২৯ রানের যোগফল ছিল বাংলাদেশের জন্য নতুন এক রেকর্ড। এর আগে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ ছিল ৩ উইকেট ৩২৬ রান। পাকিস্তানের বিপক্ষেই ২০১৪ এশিয়া কাপে ঢাকার মাটিতে এই সংগ্রহ করছিল বাংলাদেশ। পাকিস্তানের ওয়াহাব নিয়েছেন ৪ উইকেট। তবে রান খরচা হয়েছে ৫৯।
এই পাকিস্তানকে একটু অচেনা-নতুন বলেই স্বপ্ন উকি দিচ্ছিল। ফলে সিরিজে বাংলাদেশকেই ফেবারিট ভাবা হচ্ছিল। কেন ভাবা হচ্ছিল প্রথম ওয়ানডে ম্যাচের পর তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। জয়ের জন্য টার্গেট ৩৩০ রান। এই পথ যে কতটা লম্বা তা হাড়েহাড়ে টের পেয়েছে পাকিস্তানীরা ব্যাটসম্যানরা। অথচ তাদেরও জবাব মন্দ হয়নি। ৫০ প্লাস রান তুলে নিয়েছে ১০ ওভারে। কোনো উইকেট খোয়া যায়নি। তবে ৫৩ রানে যখন আরাফাত সানি শুরু করেছেন, তারপর আর একবারও বাংলাদেশকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বরং রানের প্রতি সর্তক চোখ রেখে শুরু করা পাকিস্তান ক্রমেই ম্যাচের বাইরে চলে যাচ্ছিল। ৫৯ রানে রান আউটের শিকার হয়ে হাফিজের চলে যাওয়ার পর বাংলাদেশকে আর ভাবতেই হয়নি। তবে আজহার ও হারিসের ৮৯ রানের যুগলবন্দি কিছুটা সময় স্নায়ুচাপ সৃষ্টি করেছিল। আজহার (৭২) ও হারিসকে (৫১) শিকার করেছেন দুরন্ত তাসকিন। এক পর্যায়ে ২১৭/৪-এ থাকা পাকিস্তানের শেষ ৬ উইকেট খোয়া গিয়েছে ৩৩ রানে। নবীস রিজওয়ান ৬৭ রান শুধু ব্যবধান কমিয়েছেন। মাত্র ৬ রানে শেষ হয়েছে লেজের ৪ উইকেট। আরাফাত সানি এক ওভারেই ফিরিয়ে দিয়েছেন ফাওয়াদ ও সাদকে। বাংলাদেশ পক্ষে এগিয়ে তাসকিন ৩/৪২। তার পরেই আরাফাত ৩/৪৭। এ ছাড়া সাকিব এবং রুবেল নিয়েছেন ১টি করে উইকেট।
বাংলাদেশ : ৩২৯/৬, ৫০ ওভার (তামিম ১৩২, মুশফিক ১০৬, সাকিব ৩১, সৌম্য ২০, সাব্বির ১৫, মাহমুদউল্লাহ ৫, নাসির ৩*; ওয়াহাব ৪/৫৯, রাহাত ১/৫৬)
পাকিস্তান : ২৫০/১০, ৪৫.২ ওভার (আজহার ৭২, রিজওয়ান ৬৭, হারিস ৫১, সরফরাজ ২৪, ফাওয়াদ ১৪; তাসকিন ৩/৪২, আরাফাত ৩/৪৭, রুবেল ১/৪৫, সাকিব ১/৪৫)
ফল : বাংলাদেশ ৭৯ রানে জয়ী
ম্যাচসেরা : মুশফিকুর রহিম
বিডি-প্রতিদিন/১৮ এপ্রিল ২০১৫/ এস আহমেদ