বড় ধরনের অঘটন ঘটে গেল মান্যবর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগে। বিগ বাজেটে আটজন জাতীয় খেলোয়াড় নিয়ে গড়া শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র ১-২ গোলে হেরেছে মুক্তিযোদ্ধার কাছে। আগের দুই ম্যাচে ব্রাদার্স ও ঢাকা মোহামেডানের বিপক্ষে জয় পেলেও তারকা ভরা শেখ রাসেলের খেলায় কোনো ছন্দ ছিল না। বলা যায় ভাগ্যের জোরে ফেবারিটরা পুরো পয়েন্ট সংগ্রহ করেছিল। গতকাল বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে এমিলিরা খেলতে নামেন মুক্তিযোদ্ধার বিপক্ষে। কাগজে কলমে শক্তিশালী দল না হলেও এবার মৌসুমের শুরু থেকে মুক্তিযোদ্ধার পারফরমেন্স ফুটবলপ্রেমীদের মুগ্ধ করছে। মৌসুমের প্রথম আসর ফেডারেশন কাপে রানার্স আপ মুক্তিরা। লিগে টানা তিন ম্যাচে ফেনী সকার, চট্টগ্রাম আবাহনী ও টিম বিজেএমসির সঙ্গে জয় পেয়ে বুঝিয়ে দেয় দল হিসেবে তারা কোনোভাবেই দুর্বল নয়। দিনের অন্য ম্যাচে আবাহনী ২-০ গোলে হারিয়েছে টিম বিজেএমসিকে।
কোচ দ্রাগান দুগানোভিচ বলেছিলেন মুক্তিযোদ্ধাকে আমরা কোনোভাবেই হালকা করে দেখছি না। তাদের বিরুদ্ধে জিততে হলে পুরো দলকে ভালো খেলতে হবে। কিন্তু কোথায় শেখ রাসেলের ছন্দময় ফুটবল। বরং আগের দুই ম্যাচের তুলনায় দলকে আরও নিষ্ক্রিয় মনে হয়েছে। পুরো ৯০ মিনিটে এমিলি-মিঠুনরা মুক্তিযোদ্ধাকে চাপেই রাখতে পারেনি। বরং ২১ মিনিটে কাঞ্চনের কাছ থেকে বল পেয়ে ডি বক্সে ভিতর থেকে গোলরক্ষক মামুনের মাথার ওপর দিয়ে জালে বল পাঠিয়ে মুক্তিযোদ্ধাকে এগিয়ে দেন এনামুল। জাতীয় দলের এ ফুটবলারের গত কয়েক বছর ধরে ফর্মটা ভালো যাচ্ছিল না। তাই তাকে সাইড লাইনে বসিয়ে রাখা হত। এবার এনামুল দুর্দান্ত খেলছেন। ফেডারেশন কাপ ও লিগে নিয়মিত গোল পাচ্ছেন। যাক এ গোল খাওয়ার পেছনে শেখ রাসেলের ডিফেন্ডারদের দায়ী করা যায়। তারা একটু সতর্ক থাকলে এনামুলের কাছে আসার আগে বল ক্লিয়ার করতে পারতেন। তাছাড়া গোলরক্ষক মামুনও এগিয়ে আসলে গোল রক্ষা করা যেত। যাক গোল খাওয়ার পর শেখ রাসেল আক্রমণে ফিরে আসে। ২৫ মিনিটে সমতায় ফেরাতে পারতেন পল এমিলি। কিন্তু প্রতিপক্ষের গোলরক্ষক টিটুকে একা পেয়েও গোল করতে পারেনি। ৩০ মিনিটে ভুল করেননি আর। ডি বক্সে বাইরে থেকে জাহিদের নিখুঁত ফ্রি কিকে মাথা ছুঁইয়ে ম্যাচে সমতা আনেন পল।
প্রথমার্ধে ১-১ গোলে ড্র থাকলেও শেখ রাসেল সমর্থকরা আশায় ছিলেন দ্বিতীয়ার্ধে উজ্জীবিত খেলা খেলে মুক্তিযোদ্ধাকে কোণঠাসা করে রাখবে। কিন্তু ৪৭ মিনিটে মুক্তিযোদ্ধার ফেকরিকে ফাউল করেন হেমন্ত ভিনসেন্ট। রেফারি মিজানুর রহমান দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখালে বাকি সময়ে ১০ জনের দলে পরিণত হয় শেখ রাসেল। তবে গ্যালারি থেকে মনে হয়েছে হেমন্ত ভিনসেন্ট এমনভাবে বাধা দেয়নি যে তাকে মাঠ থেকে বের করে দিতে হবে। কিন্তু রেফারির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে শেখ রাসেলের খেলোয়াড়রা তা মেনে নিয়ে খেলতে থাকেন। হেমন্তের মতো নির্ভরযোগ্য তারকা মাঠ ছাড়ার পর শেখ রাসেলের খেলা এলোমেলো হয়ে যায়। সুযোগটা কাজে লাগিয়ে মুক্তিযোদ্ধা একের পর এক আক্রমণ করতে থাকে। বিশেষ করে অধিনায়ক এনামুলের নৈপুণ্য ছিল চোখে পড়ার মতো। তিনি যেমন আক্রমণভাগে বড় ভূমিকা রাখছিলেন তেমনি পেছনে এসে প্রতিপক্ষের আক্রমণও সামাল দিচ্ছিলেন। ৬৩ মিনিটে ফয়সাল মাহমুদের ফ্রি কিক ডিফেন্ডাররা অফসাইড ট্রাফ করতে গেলে সেই সুযোগে গোল করে দলকে ২-১ এ লিড এনে দেন সেনেগালের কামারা। আসলে শেখ রাসেল যে মানের দল তাতে হেমন্ত মাঠ ছাড়ার পরও মাঠে প্রাধান্য বিস্তার করতে পারতো। কিন্তু তা আর হয়নি। গতকালকের ম্যাচে দেশসেরা স্ট্রাইকার জাহিদ হাসান এমিলিকে বড্ড নিষ্ক্রিয় মনে হয়েছে। অহেতুক ছোটাছুটি ছাড়া তার তেমন কিছু চোখে পড়েনি। এরপর আগের দুই ম্যাচের প্লে মেকার জাহিদকে ৮০ মিনিটে তুলে নিলে শেখ রাসেল আরও দুর্বল দলে পরিণত হয়। শেষ পর্যন্ত ২-১ গোলে জিতে মুক্তিযোদ্ধা চমক সৃষ্টি করে।