ফুটবল খেলা চলছে। মাশরাফি ও সাকিব দুইজনে দুই দলে। প্রথম আক্রমণটা মাশরাফিই দলই করল। কিন্তু নড়াইল এক্সপ্রেস গোল দিতে পারেননি। তবে পরের মিনিটেই সাকিবের দলের আক্রমণ। মিস করেননি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। সাকিবের গোলেই এগিয়ে তার দল। গতকাল অনুশীলনের অংশ হিসেবে স্টেডিয়ামে এসেই ফুটবল নিয়ে মেতে উঠেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা।
প্রত্যেকের শরীরী ভাষায় যেন আত্মবিশ্বাসের দ্যুতি। অনুশীলনে ফুটবল খেলছেন তবুও কী সিরিয়াস! এটা আসলে ক্রিকেটারদের ক্ষুধার্ত চেহারারই বহিঃপ্রকাশ! টানা দুই ম্যাচ জেতায় সিরিজ নিশ্চিত হয়ে গেছে। শেষ ম্যাচের আগে 'রিল্যাক্স মুডে' থাকার কথা! কিন্তু কাল বাংলাদেশ দলের অনুশীলন দেখে মনে হয়েছে, তারা আরও অনেক বেশি একাগ্র। আজকের ম্যাচে কোনো ক্রমেই বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে চান না।
টাইগারদের সামনে আজ একে তো ইতিহাস গড়ার হাতছানি, সেই সঙ্গে র্যাঙ্কিংয়ে উপরে ওঠার টার্গেট তো আছেই! প্রথমবারের মতো সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের 'হোয়াইটওয়াশ' করার সুযোগ কোনো ক্রমেই হাতছাড়া করতে চাচ্ছেন না ক্রিকেটাররা। বাংলাদেশ এখন র্যাঙ্কিংয়ের নয় নম্বরে। আগামী বিশ্বকাপে সরাসরি খেলতে হলে থাকতে হবে আটের মধ্যে। ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ে সাত ও আট নম্বরে থাকা পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে বাংলাদেশের রেটিংয়েরও খুব বেশি পার্থক্য নেই। বাংলাদেশের রেটিং এখন ৭৯, উইন্ডিজ ৯২ এবং পাকিস্তান ৯৩।
আজ পাকিস্তানকে হারাতে পারলে পাকিস্তান র্যাঙ্কিংয়ে নেমে যাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের নিচে। রেটিংয়ে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। তাই আজকের ম্যাচে পাকিস্তানকে হারাতে টাইগাররা মরিয়া, জানালেন দলের সহকারী ও স্পিন কোচ রুয়ান কালপাগে, র্যাঙ্কিংয়ে ভালো করার জন্য এই ম্যাচটা আমাদের জন্য খুবই জরুরি। তাই সিরিজ নিশ্চিত হলেও দল নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সময় নেই। আমাদের দৃষ্টি এখন শুধুই র্যাঙ্কিংয়ের দিকে। এটা আমাদের জন্য খুবই ভালো সুযোগ। বাংলাদেশের ওয়ানডে দলের ভবিষ্যৎ খুবই ভালো।' টানা দুই ম্যাচ জিতে সিরিজ নিশ্চিত হওয়ার পর বাংলাদেশের ড্রেসিং রুমের চিত্রই এখন পাল্টে গেছে। ১৬ বছর যে দলটিকে হারানো সম্ভব হয়নি, সেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিশ্চিত করা তো আর চাট্টিখানি কথা নয়! কাল ড্রেসিং রুমের কথা বলতে গিয়ে কালপাগে জানান, 'বিশ্বকাপের পর থেকেই ছেলেরা বেশ উৎফুল্ল। তারপর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজ জেতায় প্রত্যেকে ভীষণ খুশি। এখন ক্রিকেটারদের দৃষ্টি শুধু তৃতীয় ওয়ানডের দিকে।'
বিশ্বকাপে সাফল্যের পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজ জয়ে ক্রিকেটবিশ্বে চলছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের বন্দনা। তবে টাইগারদের এমন ধারাবাহিকতা দেখে মোটেই অবাক নন কালপাগে। তিনি বলেন, 'আমি খুবই খুশি যে ছেলেরা অনেক উন্নতি করেছে। তবে অবাক নই। সবাই জানে বাংলাদেশ দলে অনেক মেধাবী ক্রিকেটার রয়েছে। শুধু গত তিন-চার মাস থেকে আমরা একটা দল হিসেবে খেলছি। এখন একজন ক্রিকেটার খারাপ করলে অন্যজন ভালো করে। তামিম গত দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছে, এটা অন্য ক্রিকেটারদের মধ্যে প্রভাব ফেলেছে।'
সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে বাংলাদেশ ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং তিন বিভাগেই ছিল দুর্দান্ত। দুই ম্যাচে এক মুহূর্তের জন্যও আধিপত্য বিস্তার করতে পারেনি পাকিস্তান। এই মুহূর্তে দুই দলের পার্থক্য করলেও বেশি তফাৎ দেখা যাবে ফিল্ডিংয়ে। এ সম্পর্কে সহকারী কোচ বলেন, 'শুধু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম দুই ম্যাচে নয়, আমরা গত ছয় মাস থেকে ফিল্ডিংয়ের ওপর অনেক বেশি জোর দিয়েছি। তাই এটা আশা করতে পারি না, সব সময় ফিল্ডিংয়ের মান অনেক ভালো থাকবে। তবে চেষ্টা থাকবে। আর ক্রিকেটারদের মধ্যে আত্দবিশ্বাস তখনই বেড়ে যায়, যখন বোলিং, ব্যাটিং, ফিল্ডিং তিন বিভাগেই ভালো করে। ছেলেরা এখন তিন বিভাগেই দুর্দান্ত দাপট দেখাচ্ছে। আশা করব, অনেক দিন যাতে এই ফর্মটা ধরে রাখা যায়।'