মাশরাফি ও সাকিবকে নিয়ে উইকেট দেখতে গেলেন চন্ডিকা হাতুরাসিংহে গতকাল বিকালে অনুশীলন শুরুর আগে। মাঠের মাঝখানে দাঁড়িয়ে অধিনায়ক ও সহঅধিনায়কের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ পরামর্শ করলেন কোচ। কিন্তু তাদেরকে দেখে খুব একটা উৎফুল্ল মনে হয়নি! একদিন আগে ওয়ানডে সিরিজে 'হোয়াইটওয়াশে'র মধুর স্মৃতিটা যেন বেমালুম ভুলেই গিয়েছিলেন তারা! সেটাই স্বাভাবিক। ওয়ানডের পাকিস্তান ও টি-২০র পাকিস্তান তো এক নয়! বাংলাদেশ ওয়ানডেতে যতটা শক্তিশালী, টি-২০তে ততই দুর্বল। আবার পাকিস্তান ঠিক উল্টো! এই দলের অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদি। কাল সংবাদ সম্মেলনে পাক দলপতি নিজেই সদর্পে ঘোষণা দিয়েছেন, পাকিস্তান ওয়ানডের চেয়ে টি-২০তে অনেক ভালো দল। আফ্রিদির কথা মানছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাও। কিন্তু ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পর বাংলাদেশ যে ফর্মে এমন অবস্থায় যেকোনো দলকে হারানো যায়। নড়াইল এক্সপ্রেস তাই আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জানালেন, ভালো খেললে জয় আসবেই।
ব্যাটিং অনুশীলনে গতকাল সাকিব আল হাসানকে দেখা গেল একের পর বল পাঠিয়ে দিচ্ছেন গ্যালারিতে। আত্মবিশ্বাসী শট দেখে পাশে দাঁড়িয়ে কোচ হাতুরা উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন। সাব্বির-নাসিরও পরে সাকিবকে অনুসরণ করলেন। বাংলাদেশের লোয়ার মিডল অর্ডারের ভরসাই তো এই তিন ব্যাটসম্যান। ওয়ানডেতে তারা ব্যাটিং করার সুযোগই পাননি!
টি-২০ সম্পূর্ণ ভিন্ন ফরমেটের ক্রিকেট। দুই ফরমেটের ক্রিকেটে ক্রিকেটারদের মানসিকতাও থাকে আলাদা। ওয়ানডে কিংবা টেস্টে ব্যাটসম্যানরা সেট হওয়ার সুযোগ পান। কিন্তু টি-২০তে প্রথম বল থেকেই ব্যাট চালাতে হয়। এখানে অভিজ্ঞতার চেয়ে স্কিল অনেক বেশি জরুরি। সেই সঙ্গে থাকতে হবে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা। মাশরাফি বলেন, 'তিন ফরমেটের ক্রিকেটেই স্কিল দরকার হয়। কিন্তু আমাদের দলে টি-২০র জন্য স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান নেই। তবে অনেকেই বড় শট খেলতে পারে। আমাদের বেশি বেশি টি-২০ ম্যাচ খেলা দরকার ছিল।'
বিশ্বকাপ ও পাকিস্তান সিরিজে সাফল্যের প্রধান কারণ হচ্ছে বাংলাদেশ ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছে। ঘরোয়া লিগেও প্রচুর ওয়ানডে ম্যাচ খেলা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ সবশেষ টি-২০ খেলেছিল ২০১৪ সালে ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে। তাছাড়া পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ৭ বারের দেখায় কোনো জয় পায়নি বাংলাদেশ। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। তাই জয়ের স্বপ্ন মাশরাফির চোখেও, 'আমরা এখন অনেক বেশি আত্মবিশ্বাস। ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পর খেলোয়াড়দের মনোবল অনেক চাঙ্গা। সবাই ফর্মে রয়েছেন।' তবে কাগুজে-কলমে দুই দলকে সমানই মনে করেন টাইগার দলপতি। কিন্তু মনোবলে যে দুই দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে পার্থক্য আকাশ-পাতাল তা মাশরাফির কথাতেই বোঝা যায়। তিনি বলেন, 'এখন নতুন করে শুরু করতে হবে। টি-২০ ভিন্ন ফরমেটের খেলা। তবে সবাই পজেটিভ মুডেই আছে। আমি আশাবাদী।'
টি-২০র ফল নির্ভর করে বোলারদের ওপর। ছয়জনের বেশি ব্যাটসম্যানের প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন মাশরাফি। তিনি বলেন, 'টি-২০তে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ভূমিকা অনেক বেশি। আমি করি, ভালো করতে হলে অবশ্যই শীর্ষ চার ব্যাটসম্যানের মধ্যে অন্তত দুইজনকে ভালো করতে হবে।'
বাংলাদেশের উইকেটে সব সময়ই স্পিনারদের প্রাধান্য থাকে। কিন্তু এবার ওয়ানডে সিরিজে দেখা গেল, পেসাররাও দারুণ করছে। তাই টি-২০ ম্যাচেও দলে তিন পেসার খেলাবেন অধিনায়ক। তাই মাশরাফির সঙ্গে তাসকিনের পাশাপাশি দেখা যেতে পারে নতুন মুখ বাঁ হাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমানকে। অভিষেক হতে পারে লিটন কুমার দাসেরও। তবে একাদশ নিয়ে পরিষ্কার করে কিছু বলেননি মাশরাফি। অধিনায়কের ভাষ্য, 'দলে যারাই থাক, মাঠে বাংলাদেশের সেরা দলটাই নামবে।'