সকালে অনুশীলন করেছে পাকিস্তান। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। কেমন যেন গুমট পরিবেশ! সেই সঙ্গে ভ্যাপসা গরম। কিন্তু দুপুরের পর টাইগাররা শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে আসতেই চনমনে হয়ে উঠল রোদ। বইতে শুরু করে মৃদুমন্দ বাতাস। চারদিকে স্বস্তির আবেশ। গতকাল দুই দলের অনুশীলনেও ছিল ভিন্ন পরিবেশ। প্রকৃতির গুমট চিত্রকে অনুকরণ করে গোমড়া মুখে অনুশীলন করেছেন মিসবাহ্-ইউনুসরা। কারও মুখে হাসি তো নেই-ই। খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউ কথাও বলছিলেন না। অথচ অনুশীলনে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা ছিলেন খুবই প্রাঞ্জল-হাস্যোজ্জ্বল!
টাইগারদের চোখে-মুখে আত্মবিশ্বাসের দূ্যতি। ওয়ানডে ও টি-২০ জয়ের পর টেস্ট সিরিজেও ক্যারিশমা দেখাতে প্রস্তুত। পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত খেলেছে মোট আট টেস্ট। জয় তো নেই, এমনকি ড্রও নেই। তার উপর চার টেস্ট হেরেছে আবার ইনিংস ব্যবধানে। তবুও খুলনা টেস্টে ফেবারিট কিন্তু বাংলাদেশই।
ওয়ানডে ও টি-২০ মিলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ৪-০ হওয়ায় এগিয়ে থাকবে স্বাগতিকরাই। ক্রিকেট এমনই, পরিসংখ্যান সব সময় মনোবল বাড়িয়ে দেয় না। পরিস্থিতি বদলে দেয় অনেক কিছু। বিশ্বকাপে ভালো করার পরও সিরিজ শুরুর আগে কেউ কী ভেবেছিল পাকিস্তানকে নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা খেলবে বাংলাদেশ? হয়তো পাকিস্তান দলে তরুণ ক্রিকেটার বেশি ছিল বলে অভিজ্ঞতায় পিছিয়ে ছিল তারা। কিন্তু দলের 'নাম'ই খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাসকে বাড়িয়ে দেয়। তার বড় উদাহরণ তো অস্ট্রেলিয়া। এবার তরুণ ক্রিকেটাররাই তো অসিদের জিতিয়ে দিয়েছে বিশ্বকাপ। তাছাড়া বাংলাদেশ দলেও তো অনেক তরুণ ক্রিকেটার। শক্তিমত্তায় খুব বেশি পার্থক্য না থাকলেও এই বাংলাদেশ-পাকিস্তানের মধ্যে ব্যবধান গড়ে দিয়েছে 'আত্মবিশ্বাস'।
বাংলাদেশ বলে-কয়ে স্বল্প দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে পাকিস্তানকে নাস্তানাবুদ করেছে। এমন মধুর সময় দেশের ক্রিকেটে আর কখনো আসেনি। এবার টেস্টে সেই মুহূর্তটা দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে দেশবাসী। ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগে বাংলাদেশকে ফেবারিট বলেছিলেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু টেস্টে সরাসরি কিছু না বলে ইঙ্গিতে বুঝিয়েছেন এই ফরম্যাটেও বাংলাদেশই ফেবারিট, 'আমরা আমাদের ওয়ানডে পারফরম্যান্সের আত্মবিশ্বাস নিয়ে যদি খেলতে পারি; তাহলে ভালো একটি সিরিজ হবে। যদিও ওদের ব্যাটিংয়ে কিছু অভিজ্ঞ খেলোয়াড় আছে। আমাদের বোলিং ওদের বোলিং আক্রমণ থেকে অনেক ভালো। ওদের ব্যাটিং সাইড অভিজ্ঞতার দিক থেকে। আমাদের ব্যাটসম্যানরাও এখন যে ফর্মে আছে। পারফরম্যান্সের বিচারে চিন্তা করলে আমাদের ব্যাটিং অনেক ভালো। এছাড়া আমি বিশ্বাস করি আমাদের ফিল্ডিংটাও ওদের চেয়ে অনেক বেশি ভালো। তিন বিভাগে ভালো খেলতে পারলে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।'
পাকিস্তান টেস্ট দলে মিসবাহ্-উল-হক ও ইউনুস খান যোগ হওয়ায় ব্যাটিংয়ের গভীরতা বেড়েছে অনেক। কিন্তু হঠাৎ পেসার রাহাত আলী ইনজুরিতে পড়ায় বোলিংয়ে আরও দুর্বল হয়ে পড়েছে সফরকারীরা। টেস্টে অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান সামি আসলাম জানালেন, 'এটা ওয়ানডে কিংবা টি-২০ নয়। টেস্ট সম্পূর্ণ আলাদা। আমি টেস্ট নিয়ে আত্মবিশ্বাসী।'
আগামীকাল একসঙ্গে অভিষেক হতে পারে তিন ক্রিকেটার সৌম্য সরকার, লিটন কুমার দাস ও মোহাম্মদ শহীদের। বিশ্বকাপে এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সৌম্য তার সক্ষমতা তো দেখিয়েই দিয়েছেন। তাছাড়া লিটন এবং শহীদও এই কন্ডিশনে পরীক্ষিত ক্রিকেটার। জাতীয় ক্রিকেট লিগে ৭ ম্যাচে ১০২৪ রান করেছেন লিটন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ২০ ম্যাচে ৫৩.২৬ গড়ে তার রান ১,৮১১। ১৭৫ রানের একটা ইনিংস রয়েছে ২০ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যানের। আর শহীদ গত মৌসুমে ৭ ম্যাচে ১৩ ইনিংসে ঢাকা মেট্রোর হয়ে ১৮ উইকেট নেন ২৬ বছর বয়সী এই পেসার। ২৫টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ৫৬টি উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি ১৬.৯৬ গড়ে ৫২৬ রানও করেন তিনি।
তাই টেস্টে অভিজ্ঞতার দিক দিয়ে বাংলাদেশ কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও আত্মবিশ্বাসে উজ্জ্বল। আর আত্মবিশ্বাসই তো তৈরি করে দেয় জয়ের মঞ্চ।