অনুশীলনে সবার আগে মাঠে আসেন মুশফিকুর রহিম। টিম বাস থেকে নেমে দ্রুত ড্রেসিং রুমের কাজ সেরেই নেটে ব্যাটিং শুরু করে দেন। এটা হঠাৎ নয়, সবসময়ই এই কাজটি করেন মুশি। অনুশীলনে ভীষণ সিরিয়াস। তবে এই টেস্ট সিরিজ নিয়ে যেন একটু বেশিই ভাবছেন তিনি। ভাবারই কথা! ১৬ বছর পর ওয়ানডে মাশরাফির নেতৃত্বে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জয় এসেছে। শুধু তো আর জয় নয়, একেবারে বাংলাওয়াশ! টি-২০তেও তাই। ম্যাশের নেতৃত্বে চার ম্যাচে বাংলাদেশের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি সফরকারীরা। সেজন্যই টেস্ট সিরিজে অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের ওপর প্রত্যাশার চাপ বেশি থাকা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু কাল টাইগার দলপতি চাপকে যেন তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিলেন। বরং তিনি এই সিরিজকে নিয়েছেন চ্যালেঞ্জ হিসেবে।
মুশফিক বলেন, 'চাপের তো তেমন কিছু নেই। তবে চ্যালেঞ্জ বলতে পারেন। ওয়ানডে ও টি-২০ যেমন গেছে তেমনটাই যেন থাকে সে চেষ্টা করব। আর এটা চাপ নয়, প্রত্যাশা। আমার মনে হয়, প্রত্যাশা বেশি হলে খেলোয়াড়দের জন্য ভালো হয়। তখন তাদের সেরাটা বের হয়ে আসে।'
ওয়ানডের পাকিস্তান ও টেস্টের পাকিস্তান এক নয়। টেস্টে তারা র্যাঙ্কিংয়ে চার নম্বরে। তাছাড়া মিসবাহ্-উল-হক ও ইউনুস খান দলের সঙ্গে যোগ দেওয়ায় ব্যাটিং গভীরতা বেড়ে গেছে। সে কথাও মাথায় আছে মুশফিকের। তারপরেও দলপতির ভাবনায় শুধুই জয়। তিনি বলেন, 'ড্র করার জন্য কিংবা হারের জন্য কেউ টেস্ট ক্রিকেট খেলে না। শেষ ১৬ বছরে পাকিস্তানের বিপক্ষে আমাদের কোনো জয়ই ছিল না। অনেকেই হয়তো বলছে, তাদের এই দল ভালো ছিল না। কিন্তু যারা আমরা খেলেছি তারাই বুঝেছি হারে হারে... রান করা কতটা কঠিন ছিল। আমাদের অ্যাপ্রোচ অবশ্যই জয়ের।'
ওয়ানডে ও টি-২০ সিরিজে একজন সাধারণ ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেছেন মুশফিক। কিন্তু এখন অধিনায়ক। তাই দায়িত্ব অনেক বেশি। তবে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সেও এগিয়ে থাকতে চান তিনি। মুশফিক বলেন, 'অধিনায়ক হিসেবে যখন কেউ রান করবে, উইকেট নেবে এবং সবকিছু মিলে যখন সিদ্ধান্তগুলো ঠিক থাকবে তখন দলের উপর আলাদা একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। এটা সব দলই চায়। দলের অধিনায়ক সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবে। অবশ্যই আমার ইচ্ছা আছে। আমাদের গ্যাম প্লান আছে। আমরা যারা শেষ কয়েকটা ম্যাচ ভালো ক্রিকেট খেলেছি; তাদের দায়িত্ব হচ্ছে এই পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা। অবশ্যই চেষ্টা থাকবে সুযোগ পেলে যেন বড় ইনিংস খেলতে পারি।'
ইউনুস খান ও মেসবাহ সম্পর্কে মুশফিক বলেন, 'তারা টেস্টে দারুণ ব্যাটিং করেন। বলতে গেলে লিজেন্ডই। অবশ্যই তাদের জন্য পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপটা একটু হলেও বেড়েছে। তবে তাদের মাথায় কিন্তু থাকবে ৪-০। সুতরাং মানসিকভাবে তারা একটু হলেও পিছিয়ে থাকবে। আমাদের বোলারদের মূল টার্গেটই থাকবে তাদের এই ২ জন মূল খেলোয়াড়কে চাপে রাখা। যেন দ্রুত তাদের আউট করতে পারি। এর বাইরে আজহার আলি ভালো খেলছে। হাফিজ ভালো।'
ওয়ানডেতে পেস বোলিংয়ে দাপট দেখিয়েছেন মাশরাফি-তাসকিন-রুবেল। টি-২০তে ছিলেন নবাগত মুস্তাফিজ। কিন্তু টেস্টে রুবেল ছাড়া বাকিরা কেউ নেই। অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা শহীদের সঙ্গে শাহাদৎ হোসেন রাজীব। এই পেস আক্রমণ নিয়ে কি পারবে বাংলাদেশ? মুশফিক বলেন, 'রাজীব তো গত টেস্ট খেলেছে। হয়েতো সবগুলোতে ভালো করে নাই। তারপরও আমরা যতটুকু প্রত্যাশা করেছিলাম ততটুকু করেছে। শহীদ গত এক-দেড়বছর ধরে ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো ক্রিকেট খেলেছে। আমাদের যে বোলিং বিভাগ আছে সেগুলো নিয়ে আমি আমার কোচ এবং টিম ম্যানেজমেন্ট খুব খুশি। যারাই খেলবে ২ জন কিংবা ৩ জন তারা যেন তাদের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে পারে।'
সব কিছু মিলে টেস্ট দল নিয়ে খুশি মুশফিক। আর এই দল নিয়েই তিনি ওয়ানডে ও টি-২০র মতো টেস্টেও পাকিস্তানকে গুঁড়িয়ে দিতে চান।
সম্ভাব্য একাদশ
তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েশ/লিটন কুমার দাস, মুমিনুল হক সৌরভ, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম (অধিনায়ক), সৌম্য সরকার, মোহাম্মদ শহীদ, তাইজুল ইসলাম, রুবেল হোসেন ও জুবায়ের রহমান লিখন