তখন বেলা সাড়ে ১১টা। বাংলাদেশ-পাকিস্তান টেস্টের প্রথম দিনের খেলা চলছে। স্টেডিয়ামের বাইরে তখনো হাজারখানেক দর্শকের ভিড়। তারা টিকিট না পেয়ে স্টেডিয়ামে ঢুকতে পারেননি। হতাশা নিয়ে কেউ দাঁড়িয়ে আছেন। কেউ বা পতাকা নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়েই হাত নাড়ছেন, স্লোগান দিচ্ছেন। আর তখন স্টেডিয়ামের ভিতরে পূর্ব ও পশ্চিম গ্যালারি দর্শকে টইটম্বুর করছে। গ্যালারিতে চিরচেনা উৎসবের আমেজ। রংবেরঙের পোশাকে হাতে-মুখে আলপনা নিয়ে 'তামিম-ইমরুল' বলে চিৎকার করতে থাকেন দর্শকরা। কাগজের প্রতীকী বাঘ নিয়ে ঢোলবাদ্য বাজিয়ে দর্শকরা উৎসাহ দিতে থাকেন ক্রিকেটারদের। পতাকা নিয়ে গ্যালারিজুড়ে ছুটতে থাকেন কেউ কেউ। দর্শকদের মধ্যে ছিল বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। বৈশাখের এই মেঘ এই রোদে ঢোলবাদ্য হাতে দর্শকরা মেতে ছিলেন উৎসবের রঙে।
বাংলাদেশের পতাকার রঙে পোশাক পরা কলেজছাত্রী সিদ্দিকা সায়েম জানান, 'এবারের সিরিজে বাংলাদেশ খুব ভালো খেলছে। মাঠে বসে মজা করে সবাই একসঙ্গে মাজা করে খেলা দেখব বলে এসেছি। বেশ ভালোই লাগছে।'
খুলনা মহানগরীর টুটপাড়া থেকে সপরিবারে মাঠে খেলা দেখতে এসেছিলেন গৃহবধূ রোজী রহমান। বললেন, 'বাড়ির মাঠে পাকিস্তান-বাংলাদেশ ম্যাচ, না দেখলে হয়?' ছেলেমেয়েরা মাঠে এসে খুব আনন্দ করেছে। স্কুলছাত্র রাব্বী হক স্কুল থেকে ছুটি নিয়ে মাঠে এসেছে। বলল, সাকিব আর আফ্রিদিকে কাছ থেকে দেখতেই মাঠে আসা। আফ্রিদিকে দেখতে না পেলেও সাকিবকে দেখতে পেয়ে রাব্বী যারপরনাই খুশি।
জানা যায়, খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামটির ধারণক্ষমতা প্রায় ১২ হাজার। গতকাল টেস্টের প্রথম দিনে গোটা স্টেডিয়ামের গ্যালারি দর্শকপূর্ণ ছিল। মধ্যাহ্ন বিরতির পর দর্শক আরও বেড়ে যায়। সকালের দিকে পশ্চিম গ্যালারির কিছু অংশ ফাঁকা থাকলেও দুপুরের পর তা পূর্ণ হয়ে যায়।
ওয়ানডে সিরিজ আর টি-টোয়েন্টি ম্যাচ নিজেদের করে নেওয়ার পর টেস্টেও নিজেদের আধিপত্য ধরে রেখেছে মুশফিক বাহিনী। দর্শকভর্তি গ্যালারি দেখে উচ্ছ্বসিত স্কুলশিক্ষক আবদুর রহমান। সাদা শার্ট ও নেভি ব্লু প্যান্ট পরনে একগাদা ছাত্র নিয়ে তিনি স্টেডিয়ামে এসেছেন। বললেন, প্রতিবার ব্যাংকের সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেলেও গ্যালারিতে দর্শকের আকাল থাকে। তবে এবার রংবেরঙের পোশাকে দর্শক পরিপূর্ণ স্টেডিয়াম মুগ্ধতা ছড়িয়েছে।
এবারের আয়োজনেও গ্যালারিতে নতুন মাত্রা পেয়েছে সেলফি। গ্যালারিতে বসে ক্রিকেটারদের কাছাকাছি ছবি তুলে মোবাইলে বন্ধুদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে দেখা যায় তরুণ দর্শকদের।
এদিকে দ্বিতীয় দিনের খেলা দেখার জন্যও টিকিট পেতে রীতিমতো ঘাম ঝরাতে হয়েছে খুলনার ক্রিকেটপাগল মানুষদের। শতশত নারী-পুরুষ কাক-ভোর থেকেই ইউসিবি ব্যাংকের খুলনার দুটি শাখায় লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করেন। অবশ্য প্রথম দিনের বিশৃঙ্খল অবস্থা গতকাল ছিল না। খুলনার কেডি ঘোষ রোড ইউসিবি ব্যাংকের শাখা-প্রধান মোহাম্মদ মোসলে উদ্দীন বলেন, ইউসিবির খুলনার দুটি শাখা থেকে দ্বিতীয় দিনের বরাদ্দ প্রায় সাড়ে ৭ হাজার টিকিট বিক্রি করা হয়েছে।