আরেকটি হতাশার দিন পার করল বাংলাদেশ। আগের দিন তবু আশা ছিল, কিন্তু সে আশাতেও গতকাল জল ঢেলে দিয়েছে পাকিস্তান। মোহাম্মদ হাফিজ ক্যারিয়ারে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি বাংলাদেশকে হারের শঙ্কায় ফেলে দিয়েছে। শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে বাংলাদেশি বোলারদের নিয়ে ছেলেখেলা করল অন্য ব্যাটসম্যানরাও। দিন শেষে পাকিস্তানের স্কোর ৫ উইকেটে ৫৩৭ রান। লিড ২০৫।
খুলনা টেস্ট এখন পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে। বাংলাদেশ পুরোপুরি ব্যাকফুটে। জয়ের কথা তো ভাবাই ঠিক নয়, ড্র করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে এমন পরিস্থিতির পরও এই ম্যাচ বাঁচানোর আশা করছে টাইগাররা। কাল সংবাদ সম্মেলন এসে শুভাগত হোম বলেন, 'অবশ্যই এখনো এই ম্যাচ বাঁচান সম্ভব। আমাদের ব্যাটিংটা ভালো। জানি না, পাকিস্তান কতক্ষণ ব্যাটিং করবে। তবে আমরা যদি ভালো ব্যাটিং করতে পারি, অবশ্যই ম্যাচ বাঁচানো সম্ভব। আমাদের লক্ষ্য এখন যত দ্রুত সম্ভব পাকিস্তানকে আটকে দেওয়া। তবে এখন আমরা কেউ হার-জিত নিয়ে চিন্তা করছি না। সবার চিন্তা দ্রুত পাকিস্তানকে অলআউট করতে হবে। আর ব্যাটিংয়ে চেষ্টা করব আরও ভালো করতে।'
আগের দিন হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন আজহার আলি। কাল অধিনায়ক মিসবাহও অর্ধশত রান তুলে নেন। হাফ সেঞ্চুরি করে উইকেটে রয়েছেন দুই ব্যাটসম্যান আসাদ শফিক ও সরফরাজ আহমেদ। তবে পাকিস্তানকে রানের পাহাড়ে পৌঁছে দিয়েছে মোহাম্মদ হাফিজের ২২৪ রানের কাব্যিক ইনিংস। অথচ এই পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান কিন্তু দুই দুইবার নতুন জীবন পেয়েছেন।
সত্যিই মোহাম্মদ হাফিজের প্রাণ যেন কৈ মাছের প্রাণ! তা না হলে কী আর দুই দুইবার রিভিউয়ে জয়ী হওয়া যায়। এমন ভাগ্য কতজন ব্যাটসম্যানের হয়। আর দুইবার নতুন জীবন পাওয়ার পর কেউ কি সুযোগ হাতছাড়া করে? হাফিজও করেননি। হাঁকিয়েছেন টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি। আগের দিন ১৩ রানে একবার, কাল ১৭৩ রানে আরেকবার রিভিউয়ে সফল হয়েছেন পাকিস্তানের ওপেনার। হাফিজের ডাবল সেঞ্চুরিটি খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে দ্বিতীয়। এই ভেন্যুতে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের মারলন স্যামুয়েলস, ২০১২ সালের নভেম্বরে।
বাংলাদেশ রানের পাহাড়ে চাপা পড়ার টিম ম্যানেজমেন্টের একাদশ গঠন নিয়েও নতুন করে প্রশ্ন ওঠেছে! একটা আদর্শ টেস্ট দল কি কখনো মাত্র তিন বোলার নিয়ে মাঠে নামে? তাও কিনা শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামের মতো ব্যাটিং উইকেটে! এমন উইকেট তো বোলারদের জন্য পরীক্ষাগার। তাই যেখানে অতিরিক্ত বোলার নিয়ে খেলার কথা সেখানে কিনা বাংলাদেশ দলে নিয়মিত বোলার মাত্র তিনজন- রুবেল, শহীদ ও তাইজুল। সাকিব তো অলরাউন্ডার। কিন্তু সাকিবকে ছাড়াও তো আরও একজন বোলার দরকার ছিল। কেননা টেস্টে বোলিং করতে হয় দীর্ঘ সময়। বড় ধকল পোহাতে হয় বোলারদেরই।
তাছাড়া খুলনার তক্তা মার্কা উইকেটে কি আদৌ আট ব্যাটসম্যান খেলানোর চিন্তা যৌক্তিক? এমন প্রশ্নে শুভাগত হোম বলেন, 'আটজন নাকি ১০জন ব্যাটসম্যান খেলবে, এটা টিম ম্যানেজমেন্টের ব্যাপার। টিম ম্যানেজমেন্ট যা ভালো মনে করবে, সেটাই করবে। এটা নিয়ে আমি কী বলব?' তবে শুভাগত হোম যে মোটেও সন্তুষ্ট নন, সেটা বোঝা যায় শরীরী ভাষা দেখেই। তবে এখন প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক, টিম ম্যানেজমেন্ট কী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খুলনা টেস্টে জয়ের কথা চিন্তা করেছিল আদৌ?
কাল দিনের সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান ছিলেন শুভাগত হোম। পাকিস্তানের দুই টপ স্কোর মোহাম্মদ হাফিজ ও আজহার আলিকে আউট করেছেন তিনি। অথচ সাকিব আল হাসানের মতো পরীক্ষিত বোলারও ব্যর্থ হয়েছেন। শুভাগত বলেন, 'সাকিব চেষ্টা করেছে, সবাই চেষ্টা করেছে ভালো বল করতে। আমি সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। সৌভাগ্যক্রমে উইকেট পেয়েছি। সাকিব উইকেট পেলে আরও ভালো হতো।' শুভাগত হোম ছাড়াও পাকিস্তানের পতন ঘটা ৫ উইকেটের মধ্যে বাকি তিন উইকেট নিয়েছেন তাইজুল ইসলাম।
সংক্ষিপ্ত স্কোর কার্ড (তৃতীয় দিন)
বাংলাদেশ : প্রথম ইনিংস, ৩৩২/১০, ১২০ ওভার (তামিম ইকবাল ২৫, ইমরুল কায়েশ ৫১, মুমিনুল হক সৌরভ ৮০, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ৪৯, সাকিব আল হাসান ২৫, মুশফিকুর রহিম ৩২, সৌম্য সরকার ৩৩, শুভাগত হোম ১২*, মোহাম্মদ শহীদ ১০। ওয়াহাব রিয়াজ ৩/৫৫, মোহাম্মদ হাফিজ ২/৫৫, জুলফিকার বাবর ২/৯৯, ইয়াসির শাহ ৩/৮৬)।
পাকিস্তান : প্রথম ইনিংস, ৫৩৭/৫, ১৪৮ ওভার ( মোহাম্মদ হাফিজ ২২৪, সামি আসলাম ২০, আজহার আলি ৮৩, ইউনিস খান ৩৩, মিসবাহ উল হক ৫৯, আসাদ শফিক ৫১*, সরফরাজ আহমেদ ৫১*। তাইজুল ইসলাম ৩/১১৬, শুভাগত হোম ২/১১২)।