ম্যাচ শেষে অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের চোখে-মুখে পরিতৃপ্তির ছাপ। কোচ চন্ডিকা হাতুরাসিংহকেও দেখে মনে হচ্ছিল ভীষণ খুশি। সেটাই তো স্বাভাবিক! ওয়ানডে ও টি-২০তে সিরিজ জয়ের পর টেস্টে পিছিয়ে পড়েও দুর্দান্তভাবে ড্র করা তো আর চাট্টিখানি কথা নয়।
এক ম্যাচে কত্তো অর্জন! ডাবল সেঞ্চুরির পাশাপাশি সর্বোচ্চ রানের নতুন রেকর্ড গড়লেন তামিম ইকবাল। আরেক ওপেনার ইমরুল কায়েসের ব্যাট থেকেও এসেছে ১৫০ রানের আত্দবিশ্বাসী এক ইনিংস। বোলিংয়ে স্পিনার তাইজুল ইসলাম নিয়েছেন ৬ উইকেট। তবে সবচেয়ে বড় অর্জন টেস্টে দ্বিতীয় ইনিংসে তামিম-ইমরুলের জুটিতে বিশ্বরেকর্ড। তাই গর্ব করে অধিনায়ক মুশফিক জানালেন, 'এটা জয়ের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। দ্বিতীয় ইনিংসে আমরা ডমিনেট করে ব্যাটিং করেছি। এটা আমাদের জন্য বড় অর্জন। এই আত্দবিশ্বাস পরের ম্যাচে ভালো করতে কাজে লাগবে।'
চন্ডিকা হাতুরাসিংহে বলেন, 'পাকিস্তানের বিশ্বসেরা বোলিং লাইনআপ। দ্বিতীয় ইনিংসে চাপের মধ্যে থেকে এমন দাপুটে ব্যাটিং করে ড্র করায় আমি খুশি। প্রতিটি ম্যাচেই আমি জয়ের কথা চিন্তা করি। পরের ম্যাচেও লক্ষ্য তাই থাকবে। এটা বুঝতে হবে পাকিস্তান অভিজ্ঞ দল। কিন্তু এখন বাংলাদেশেরও সেরা সময়।'
প্রথম ইনিংসে ২৯৬ রানে পিছিয়ে পড়ার পর টাইগারদের সামনে ছিল হারের চোখ রাঙানি। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা নজরকাড়া ব্যাটিং করে উল্টো পাকিস্তানকেই পাঠিয়ে দিয়েছিল ব্যাকফুটে। তামিম ও ইমরুল মিলে প্রথম উইকেট জুটিতে তুলেন ৩১২ রান। গতকাল খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের দুই ওপেনার ভেঙে দিয়েছেন ৫৫ বছরের এক রেকর্ড। এর আগে টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে সর্বোচ্চ ২৯০ জুটি ছিল কলিন কাউড্রি ও জিওফ পলারের। দুই ইংলিশ ব্যাটসম্যান ১৯৬০ সালে ওভালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে এই রেকর্ড গড়েছিলেন।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তো বটেই, ৩১২ রান যেকোনো দলের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের কোনো জুটিতে এসেছে তিন শতাধিক রান। এর আগে ২০১৩ সালে গল টেস্টে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে মুশফিকুর রহিম ও মোহাম্মদ আশরাফুল মিলে করেছিলেন ২৬৭ রান। ম্যাচ শেষে তামিম ও ইমরুলের প্রশংসা করে মুশফিক বলেন, 'আমাদের কল্পনাতেও ছিল না এই গরমের ভিতর ওরা এমন একটা রেকর্ড পার্টনারশিপ গড়বে। তারা অসাধারণ ব্যাটিং করেছেন। এই ম্যাচে ড্র করার বড় কৃতিত্ব তাদেরই।'
তামিম-ইমরুল জুটি, দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যেকোনো দলের সর্বোচ্চ রানের জুটি। এর আগে সর্বোচ্চ ১৯২ রানের জুটি ছিল দুই ভারতীয় ব্যাটসম্যান চেতন চৌহান ও সুনীল গাভাস্কার, ১৯৭৮ সালে লাহোর টেস্টে। অবশ্য ৩১২ রান পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যেকোনো উইকেটে সর্বোচ্চ।
ওপেনিংয়ে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি জুটি এটি। আগের ডাবল সেঞ্চুরি জুটিও ছিল তামিম ও ইমরুলের। সেবার প্রতিপক্ষ ছিল জিম্বাবুয়ে। এবার নিজেদের রেকর্ড নিজেরাই ভাঙলেন। এছাড়া দ্বিতীয়বারের মতো কোনো টেস্টে বাংলাদেশের দুই ওপেনার একসঙ্গে সেঞ্চুরি পেয়েছেন। গত বছর জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধেও এই তামিম ও ইমরুল দুই ওপেনার একই ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছিলেন। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে উভয় ওপেনারের সেঞ্চুরির ঘটনা ঘটল টেস্টের ইতিহাসে ১৩তম বারের মতো।
কাল তামিম ২০৬ রান করে ভেঙে দিয়েছেন মুশফিকের সর্বোচ্চ ২০০ রানের রেকর্ডটি। এ সম্পর্কে মুশফিক বলেন, 'আমি জানতাম, আমার রেকর্ডটা বেশিদিন স্থায়ী হবে না।'
সত্যিই খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়াম বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সৌভাগ্যের ভেন্যু। কখনো কখনো টাইগারদের খালি হাতে ফেরায় না। এই ভেন্যুতে খেলা ওয়ানডের সবগুলোতেই জয় পেয়েছে টাইগাররা। একমাত্র টি-২০ ম্যাচেও জিতেছিল বাংলাদেশ। আগের দুই টেস্টের মধ্যে দ্বিতীয়টিতে জিম্বাবুয়েকে ১৬২ রানে উড়িয়ে দিয়েছিলেন মুশফিকরা। এই ম্যাচে সেঞ্চুরির পাশাপাশি ১০ উইকেট নিয়ে অনন্য রেকর্ড গড়েছিলেন সাকিব আল হাসান। এই মাঠে প্রথম টেস্টে বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হারলেও দশম ব্যাটসম্যান হিসেবে অভিষেকে সেঞ্চুরি করে বিশ্বরেকর্ড গড়েছিলেন আবুল হাসান রাজু।