স্বপ্ন বললেও বোধহয় খাটো করা হবে! ১৫ বছরে নিজেদের ৭৯ টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে বহু জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। ড্রও করেছে। কিন্তু এমন রাজসিক ড্রয়ের দেখা পায়নি। পাহাড়সম চাপে যেখানে অহরহ ভেঙে পড়েছে, সেখানে এমন ব্যাটিং কল্পনাতীত! ম্যাচ হারের শঙ্কায় থেকেও যেভাবে ড্র করেছে টাইগাররা, এক কথা কোটি টাকার লটারি জেতার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। বরং বেশিই। ২৯৬ রানের পর্বতসমান চাপে যেখানে হারের স্বপ্ন দেখছিলেন সবাই, তখন হিমালয়সম দৃঢ়তায় তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস অসাধারণ ব্যাটিং করে গড়েন রেকর্ড জুটি এবং শেষ পর্যন্ত কল্পনাতীত ব্যাটিং করে বাঁচিয়ে দিলেন টেস্ট। নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেলেন বাংলাদেশকে। অনেক প্রাপ্তির খুলনা টেস্ট নিয়ে আগামী ৬-১০ মে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে মুশফিকবাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়বে পাকিস্তানের উপর।
৭৯ টেস্ট ইতিহাসে মাত্র পাঁচবার পাঁচশোর্ধ্ব ইনিংস খেলেছে বাংলাদেশ। একটি জয়ের বিপক্ষে হার একটি এবং বাকি তিনটি ড্র। সর্বশেষ ড্র খুলনা টেস্টে। ২০১৩ সালে গলে প্রথম ও একমাত্র ৬৩৮ রানের ইনিংস খেলেছিল টাইগাররা। ড্র হয়েছিল টেস্টটি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওই ড্র টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি আশা জাগিয়েও ব্যর্থ হয়েছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল। পুরো দেশ যখন অধীর অপেক্ষায়, তখন সাজঘরে আশরাফুল ফেরেন ১৯০ রানে। আশরাফুল না পারলেও বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ঠিকই ডাবল সেঞ্চুরি তুলে নেন মুশফিক। ২০০ রানের কাটায় কাটায় ইনিংস খেলেন টাইগার অধিনায়ক। টেস্ট ক্রিকেটে ইতিহাসে বহুবার দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করেছে বাংলাদেশ, সেটা অধিকাংশ সময়ই ম্যাচের তৃতীয় ইনিংসে। হারের সংখ্যাও বেশি। চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করে ম্যাচ বাঁচানোর কোনো ইতিহাস নেই বাংলাদেশের। তৃতীয় ইনিংসেও ছিল না খুলনার আগে। ২০০৮ সালে শ্রীলঙ্কার ৫২১ রানের টার্গেট তাড়া করে আশরাফুলের ১০১ ও সাকিবের ৯৬ রানে ভর করে ৪১৩ রান করেছিল ম্যাচের চতুর্থর্ ইনিংসে। এবার তৃতীয় ইনিংসে ২৯৬ রানে পিছিয়ে থেকে তামিম ও ইমরুলের ৩১২ রানের রেকর্ড জুটিতে শুধু ম্যাচই বাঁচায়নি মুশফিকবাহিনী, আত্দবিশ্বাসের তুঙ্গে নিয়ে গেছে মানসিকতাকে। উদ্বোধনীয় জুটিতে গত বছর দুজনে ২২৪ রান করেছিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ওই টেস্ট জিতেছিল বাংলাদেশ ১৮৬ রানে। জয়ের ওই টেস্টে সেঞ্চুরি করেছিলেন তামিম, ইমরুল দুজনেই।
টাইগারদের পাঁচশোর্ধ্ব ইনিংস রয়েছে আরও দুটি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫৫৬ রান করেও হেরেছিল। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ড্র করেছিল ৫০১ রান করে। দুটোই ছিল আবার বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। তৃতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করে এই প্রথম টেস্ট বাঁচালো বাংলাদেশ। বাংলাদেশের এর আগে তৃতীয় ইংনিসে সংগ্রহ ছিল সর্বোচ্চ ৩৮২। ২০১০ সালে লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের তৃতীয় ইনিংসে এই স্কোর গড়েছিল বাংলাদেশ। ওই ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছিলেন তামিম। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ওই সিরিজে টানা দুটি সেঞ্চুরি করেছিলেন এই বাঁহাতি ওপেনার।
সব মিলিয়ে বাংলাদেশ যে পাঁচটি পাঁচশোর্ধ্ব ইনিংস খেলেছে, তার একটিতে জেতা ছাড়াও হেরেছে একটিতে। বাকি তিনটিতে ড্র। হারজিত যাই হউক না কেন, এই টেস্ট থেকে যে প্রাপ্তি বাংলাদেশের, সেটা এখন অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে ক্রিকেটারদের। বিশ্বকাপের অসাধারণ পারফরম্যান্সের বিচ্ছুরণ যেমন ঘটেছে ওয়ানডে সিরিজে।