প্রথম বিভাগ ফুটবলে আবাহনী যোগ দেওয়ার তিন বছর পরের কথা। ওয়ান্ডারার্সের জনপ্রিয়তায় তখন চরম ভাটা। আবাহনীতে যোগ দিয়েছেন সালাউদ্দিনরা। দলের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। নতুন কোনো দল যে এতটা জনপ্রিয়তা পাবে তা কেউ ভাবতেই পারেনি। সেই আবাহনী ১৯৭৩ সালে ঢাকা মোহামেডানের সব ঐতিহ্য ভেঙে প্রথম সাক্ষাতেই ২-০ গোলে হারিয়েছিল। গোল করেছিলেন সালাউদ্দিন আর অমলেশ। সে সময় ঢাকা স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচে ছিল উপচে পড়া ভিড়। বিকাল ৪টার খেলা দেখতে অনেকেই দুপুর রোদ মাথায় নিয়ে বসে যেতেন আসন পেতে। ওসব ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই পেয়েছে। বাংলাদেশের ফুটবল এখন আইসিইউতে মৃত্যুযন্ত্রণায় ভুগছে! আবাহনী-মোহামেডান মুখোমুখি হলেও এখন আর কারও কিছু যায় আসে না! আজ মান্যবর প্রিমিয়ার লিগে মুখোমুখি হচ্ছে ঢাকার দুই ঐতিহ্যবাহী ক্লাব। যারা একসময় দর্শকদের চুম্বকের মতোই গ্যালারিতে টেনে নিয়ে আসত।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে প্রেসবক্সে বাম দিকের গ্যালারি মোহামেডানের। ডান দিকেরটা আবাহনীর। এখন গ্যালারির দিকে তাকালে কে বলকে কোন গ্যালারি কার! দর্শকই তো নেই! দর্শক থাক আর না থাক আজ আবাহনী-মোহামেডান লড়াই। প্রিমিয়ার লিগে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে আকর্ষণীয় ম্যাচ। এমনকি প্রেসবক্সে এখনো সংবাদকর্মীরা দুই দলের লড়াইয়ে দুই ভাগ হয়ে যান! লিগের ওসব উৎসব-উত্তেজনা বাদ দিলেও আজ একটা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। আবাহনী কিংবা মোহামেডানের শিরোপা রেসে টিকে থাকার লড়াই। মৌসুমে এখন পর্যন্ত ১০ ম্যাচে ২৩ পয়েন্ট সংগ্রহ করে শীর্ষে অবস্থান করছে শেখ জামাল। অন্যদিকে শেখ রাসেল এক ম্যাচ কম খেলে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে আছে দ্বিতীয় স্থানে। এর পরের তিনটি স্থানে আছে মোহামেডান, আবাহনী ও ব্রাদার্স ইউনিয়ন। তিন দলই ৯টি করে ম্যাচ খেলে সংগ্রহ করেছে ১৭ পয়েন্ট করে। মৌসুমের এ অবস্থায় আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ হয়ে উঠেছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। শিরোপা লড়াইয়ে টিকে থাকার জন্য আজ দুই দলেরই জয় প্রয়োজন। শেখ জামাল ও শেখ রাসেলের সঙ্গে শিরোপা লড়াই করতে হলে ঢাকার এ দুই জায়ান্ট ক্লাবের জয়ের বিকল্প নেই। কিন্তু কে জিতবে! একদিকে দিন কয়েক আগে শীর্ষে থাকা শেখ জামালকে ২-০ গোলে হারিয়ে আত্দবিশ্বাসী আবাহনী লিমিটেড, অন্যদিকে রহমতগঞ্জের জালে গত ম্যাচেই ৫ গোল জড়িয়েছে মোহামেডান। দুই দলের তারকারাই আছেন দারুণ ফর্মে। আবাহনীর ওয়াহেদ, হাঙ্গেরিয়ান সোরবা আর ঘানার মরিসন যেমন ফরোয়ার্ড লাইনকে দুর্দান্ত রূপ দিয়েছেন; তেমনি মামুন মিয়ারা ডিফেন্স লাইনকে দুর্ভেদ্য করে তুলতে মরিয়া। অন্যদিকে মোহামেডানের গিনির স্ট্রাইকার ইসমাইল বাঙ্গুরা আছেন দুর্দান্ত ফর্মে। মৌসুমে ৮ গোল করে গোলদাতার তালিকায় অবস্থান করছেন দুই নম্বরে। আবাহনীর ডিফেন্স লাইন আজ বাঙ্গুরার কাছে অসহায় হয়ে পড়তেই পারে!
আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচে কে জিতবে বলা মুশকিল। দুটি দলই আছে আত্দবিশ্বাসের তুঙ্গে। তবে যারাই জিতবে পয়েন্ট তালিকায় শেখ জামাল ও শেখ রাসেলের সঙ্গে শিরোপা রেসে যোগ দেবে তারা। আর যদি ম্যাচটা ড্র হয় লাভ হবে ব্রাদার্সের। চট্টগ্রাম আবাহনীকে কাল হারালেই ২০ পয়েন্ট নিয়ে তিন নম্বরে ওঠার সুযোগ পাবে তারা!