হকিতে আসলে কী হচ্ছে! প্রিমিয়ার লিগ মাঠে গড়াবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। সমস্যা সমাধানের জন্য যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় ক্লাব প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। কিন্তু সমাধান ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়েছে। কেননা মোহামেডান, মেরিনার্স, ওয়ারী ও বাংলাদেশ স্পোর্টিং উপমন্ত্রীকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত না করা পর্যন্ত হকির কোনো কর্মসূচিতেই অংশ নেবে না। ঊষা ও ঢাকা আবাহনী এ ধরনের কথা না বললেও তারা চায় সব দলের অংশগ্রহণে লিগ মাঠে গড়াক। তাছাড়া আসর জমবে না। তাদের কথায় যুক্তিও আছে, কেননা ওয়ারী ও বাংলাদেশ স্পোর্টিং বড় দল নয়। এখানে মোহামেডান, মেরিনার্সই মূল ফ্যাক্টর। কিন্তু এখন দুই দল যদি একটা দাবি তুলে খেলতে না চায় এক্ষেত্রে হকি ফেডারেশনের কী করার আছে।
গতবার যদি তাদের ছাড়া লিগ মাঠে নামতে পারে এবার কেন হবে না। উপমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন তিনি যে কোনো উপায়ে সমস্যার সমাধান দেবেন? এ নিয়ে তার যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা। ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, হকি দেশের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা। আমরা চাই না কোনো কারণে এ খেলায় অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হোক। তিনি বলেন, সমস্যা সৃষ্টি হয় সমাধানের জন্য। আমি তাই আশাবাদী সব জটিলতা দূর করে হকি লিগ মাঠে গড়াবে। তাহলে কি কমিটির বিলুপ্তি ঘটবে? এ ব্যাপারে প্রতিমন্ত্রী বলেন, কমিটি ভেঙে দিলেই সব কিছুর জটিলতা দূর হয়ে যাবে তা আমি বিশ্বাস করি না। তখন দেখা যাবে আরেক ঝামেলা তৈরি হলো। সুতরাং হকির বৃহত্তর স্বার্থের চিন্তা করে যা হকির জন্য মঙ্গলময় তা সবাইকে মেনে নিতে হবে।
আসলে উপমন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী কী উদ্যোগ নেবেন তা তারাই জানেন। কিন্তু যে ঝামেলা সৃষ্টি হয়েছে তা নিরসন করা সহজ হবে বলে মনে হয় না। কারণ মোহামেডান, মেরিনার্সকে মাঠে ফিরিয়ে আনতে যদি হকি কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়, তাহলে আবার কমিটির যে কেউ মামলা করবেন তা নিশ্চিত বলা যায়। তবে বিকল্প পথ হিসেবে একটা চিন্তাভাবনা চলছে। মোহামেডান-মেরিনার্সকে ফিরিয়ে আনতে লিগ পরিচালনার জন্য আলাদা কমিটি গঠন। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য এমন এক ব্যক্তিকে কমিটির চেয়ারম্যান করা হতে পারে। প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী নাকি সেই পথে এগোচ্ছেন।
জানা গেছে, এবারও চার দল না খেললেও লিগ শুরু করা যেত। কিন্তু এক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ঊষা ক্রীড়া চক্র। তারাও মোহামেডান-মেরিনার্স ছাড়া লিগ খেলতে চাচ্ছে না। এ ব্যাপারে ঊষার এক কর্মকর্তার বক্তব্য হচ্ছে, দেখেন আমরা দল গঠন করি মূলত চাঁদা দিয়েই। কিন্তু মোহামেডান-মেরিনার্স না থাকাতে তেমনভাবে ফান্ড মিলছে না। ডোনাররা বলছেন, তাহলে আর অর্থ দিয়ে দামি খেলোয়াড় নেব কেন? না, ঊষা বেঁকে বসার পেছনে অন্য কারণও নাকি কাজ করছে। শোনা যাচ্ছে, মোহামেডান-মেরিনার্স ক্লাব ঊষার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ফেডারেশনের বর্তমান সহসভাপতি আবদুর রশিদ শিকদারকে আশ্বাস দিয়েছেন, নির্বাচিত কমিটি বিলুপ্তির পর যে অ্যাডহক কমিটি গঠন হবে সেখানে তারা সাধারণ সম্পাদকের পদে তাকে সমর্থন দেবে। তাদের সঙ্গে আরও ছয় দল রয়েছে। এ জন্য ঊষা অ্যাডহক কমিটি গঠনের জন্য অপেক্ষা করছে। ব্যাপারটি অবশ্য গতকাল রশিদ শিকদার পুরোপুরি অস্বীকার করেন। বলেন, মোহামেডান-মেরিনার্সের সঙ্গে এ ধরনের কোনো কথাই হয়নি। তবে তিনি চান সব দলের অংশগ্রহণে লিগ অনুষ্ঠিত হোক। মোহামেডান-মেরিনার্স খেলতে না চাইলে এখানে করণীয় কী? রশিদ শিকদার বলেন, বিষয়টি এখন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী দেখাশোনা করছেন। আমার বিশ্বাস একটা সমাধান আসবেই। সত্যি বলতে কী এতে হকি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। লিগ অনিশ্চয়তায় আছে বলে খেলোয়াড়রা দুশ্চিন্তায় আছেন। কেউ কেউ মানসিকভাবে এতটা ভেঙে পড়েছেন যে, হকি খেলা ছেড়ে দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন। সমস্যার দ্রুত সমাধান না হলে হকিতে ভয়াবহ অচলাবস্থা নেমে আসবে। যা কারও কাম্য নয়।