ক্রিকেটে এখন মধুর সময়। যা হচ্ছে বা হবে সবই রেকর্ড! অবশ্য ফলটা হতে হবে ইতিবাচক। বিশ্বকাপের পর পাকিস্তান সিরিজ- দুরন্ত টাইগাররা। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার আমেজটা শেষ হতে না হতেই ঘরের মাঠে পাকিস্তানের মতো দলকে হোয়াইটওয়াশ! সত্যি অভাবনীয় সাফল্য। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজ জয়ের পর র্যাঙ্কিংয়েও একটা লাফ দিয়েছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানকে টপকে আইসিসির ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের অষ্টম এখন বাংলাদেশ। তবে এবার টাইগারদের সামনে র্যাঙ্কিংয়ের ছয়ে ওঠার হাতছানি। সেজন্য পাকিস্তানের মতো ভারতকেও দেশের মাটিতে বাংলাওয়াশ করতে হবে! তবে চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত র্যাঙ্কিংয়ের এই অষ্টম অবস্থানটা ধরে রাখতে পারলে ২০০৬ সালের পর দ্বিতীয়বারের ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার সুযোগ পাবে টাইগাররা। কাজটা মোটেও সহজ নয়। কেননা এখন বাংলাদেশের রেটিং পয়েন্ট ৮৮। মাত্র এক পয়েন্ট কম নিয়ে টাইগারদের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে পাকিস্তান। জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে ওয়ানডে খেলবে পাকিস্তান। তাই বাংলাদেশকে টপকে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে জুনে বাংলাদেশ সফরে আসছে ভারত। পাকিস্তানের মতো ভারতকেও হোয়াইটওয়াশ করতে পারলে র্যাঙ্কিংয়ে ছয়ে উঠবে বাংলাদেশ। ভারতের পরই আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এই দুই সিরিজ মাশরাফিদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই দুই সিরিজ জিততে পারলে র্যাঙ্কিংয়ে বড় লাফ দেওয়ার সুযোগ আছে। সুখের বিষয় হচ্ছে, দুই সিরিজ জিততে না পারলেও র্যাঙ্কিংয়ের বর্তমান অবস্থানটা ধরে রাখতে পারবে বাংলাদেশ যদি ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে অন্তত একটি করে জয় পায়। সেক্ষেত্রে ২০১৭ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে অনুষ্ঠেয় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার সুযোগ পেয়ে যাবে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের পর আইসিসির সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্ট হচ্ছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ আট দল এই টুর্নামেন্টে অংশ নেয়। তাই বর্তমানে আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ ছয়ে থাকা দলগুলো চ্যাম্পিয়ন্স নিশ্চিত করলেও সপ্তম ও অষ্টম দল হিসেবে কোন দুটি দল খেলবে তা নিয়ে এখনো সংশয় রয়েছে। কেননা সাতে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজের রেটিং পয়েন্টও বাংলাদেশের সমান ৮৮। কিন্তু ক্যারিবীয়রা দশমিকের ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলতে হলে চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশকে অষ্টম স্থান ধরে রাখতে হবে। আইসিসির র্যাঙ্কিংয়ে দশে থাকা আয়ারল্যান্ডের রেটিং ৫০, আর এগারতম অবস্থানে থাকা জিম্বাবুয়ের রেটিং ৪৫। তাই এই দুই দলের পক্ষে এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশকে টপকে যাওয়া অসম্ভব। তবে এখন ভাবছেন না বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। আসন্ন ভারত সফরকে কেন্দ্র করে প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত তারা। টানা তিন দিনের ফিটনেস ট্রেনিং শেষে ক্রিকেটাররা এখন জাতীয় ক্রিকেট লিগের চতুর্থ রাউন্ড খেলবেন। এর পর ১ জুন থেকে শুরু হবে কঠোর অনুশীলন। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজের আগেও ক্রিকেটাররা কঠোর অনুশীলন করেছেন। মূল্যটাও পেয়েছেন হাতেনাতে। ভারত বাংলাদেশে আসবে ৭ জুন। তারা এই সফরে একটি টেস্ট ও তিনটি ওয়ানডে ম্যাচ খেলবে। প্রথমে শোনা যাচ্ছিল, বাংলাদেশ সফরে ভারতের সেরা দলটি আসবে না! কিন্তু পরে দল ঘোষণার পর দেখা যায় সব সেরা তারকাই দলে রয়েছেন। টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে এটি বিরাট কোহলির প্রথম সফর। এর আগে তিনি ভারতীয় টেস্ট দলের নেতৃত্ব দিলেও সেটি ছিল মহেন্দ্র ধোনির অনুপস্থিতিতে। কিন্তু ধোনি অবসর নেওয়ায় এখন কোহলিই ভারতের অধিনায়ক। আর ভারতের ওয়ানডে দলের নেতৃত্ব দেবেন ধোনি।
ভারতের এই সফর বাংলাদেশের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এর আগে বাংলাদেশ যতবার ভারতের বিরুদ্ধে খেলেছে, লক্ষ্য ছিল অঘটন ঘটানো। কিন্তু বিশ্বকাপ ও পাকিস্তান সিরিজে সাফল্যের পর টার্গেটও পাল্টে গেছে। এখন সিরিজ জয়ই একমাত্র লক্ষ্য। তা ছাড়া আরেকটি কারণে ভারতের বিরুদ্ধে এই সিরিজ বাংলাদেশের কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তা হচ্ছে, আম্পায়ারদের বেশ কয়েকটি বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণেই বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের বিরুদ্ধে হেরে বিদায় নিতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। সেই ক্ষোভটা এখনো যায়নি ক্রিকেটপ্রেমীদের মন থেকে। হয়তো ক্রিকেটাররাও ভুলে যাননি। সেই প্রতিশোধটা এবার ঘরের মাঠেই হয়তো নিতে চাইবেন তারা।