প্রচণ্ড গরম। অনুশীলনের ফাঁকে ফাঁকে পানি পান করে তৃষ্ণা নিবারণ করতে দেখা গেছে বাংলাদেশ ও ভারতের ক্রিকেটারদের। জ্যৈষ্ঠের প্রখর রোদ তারপরও ব্যাটিং ও বোলিং করছেন তামিম, মুশফিকরা ও কোহলি, হরভজনরা। ব্যাটিং ও বোলিং করার ফাঁকে বিশ্রামের সুযোগ পেতেই সবাই দৌড়ে চলে আসেন উইকেট দেখতে। এমনভাবে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেন, যেন নববধূ দেখছেন সবাই! হঠাৎ করে উইকেট এতটা আলোচনায় উঠে আসল কীভাবে? কিছুই না, কিউরেটর গামিনি ডি সিলভা উইকেটকে পাঁচদিন টিকিয়ে রাখার জন্য উইকেটে হালকা ঘাস রেখেছেন। এই ঘাসই বিস্মিত করেছে দুই দলের কোচ ও অধিনায়কের। ২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস। এরপর দেখতে দেখতে টেস্ট খেলেছে ৯০টি। সাফল্যের হার একেবারেই তলানিতে। ৭ জয়ের চারটিই আবার ২০১১-২০১৪ সালের বিশ্বকাপের মাঝে। ১৫ বছর ধরে খেলা বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটকে এখন দুই ধারায় ভাগ করা যায় অনায়াসে। প্রথম স্তরে ২০০০-২০১১ বিশ্বকাপ। পরের স্তর ২০১১ সালের বিশ্বকাপ পরবর্তী সময়। টেস্ট ক্রিকেটে টাইগারদের সাফল্যের সিংহভাগই দ্বিতীয় স্তরে। দ্বিতীয় স্তরে বাংলাদেশ টেস্ট সিরিজ খেলেছে ১১টি। জয় একমাত্র জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এবং ড্র দুটি। ২২ টেস্টে জয় ৪ এবং ড্র ৩। সর্বশেষ ড্র পাকিস্তানের বিপক্ষে। পারফরম্যান্সের এমন ধারাবাহিকতা নিয়েই আজ ফতুল্লায় ভারতের বিপক্ষে নামছে টাইগাররা। অভিষেক টেস্টের পর ভারতের প্রতিপক্ষ হয়েছে সাতবার। ৬ হারের বিপরীতে ড্র একটি। তাও বৃষ্টিভাগ্যে, ২০০৭ সালে। এমন একপেশে পরিসংখ্যানের পরও জয়ের স্বপ্ন দেখছেন কোচ চন্ডিকা হাতুরাসিংহে ও অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। তবে কালকের মিডিয়া কনফারেন্সের জয়-পরাজয়কে ছাপিয়ে টাইগার কোচ ও অধিনায়কের আলোচনার মূলে চলে আসে উইকেট। ঘাস আচ্ছাদিত উইকেটে বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, চেতেশ্বর পুজারা, আজিঙ্কা রাহানে, রবীচন্দন অশ্বিনদের বিপক্ষে তামিম ইকবাল, মুশফিক, সাকিব আল হাসান, তাইজুল ইসলাম, মুমিনুল হকরা কতটা সাফল্য পাবেন, কতটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন, এখন সেটাই প্রশ্ন। পারফরম্যান্স কি হবে, সেটা ভবিষ্যতের হাতে ছেড়ে দিয়ে কাল উইকেট দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন টাইগার অধিনায়ক ও কোচ এবং ভারতীয় অধিনায়ক।
সকালে মাঠে এসেই উইকেট দেখতে ছুটে যান হাতুরাসিংহে ও মুশফিক। কিউরেটর গামিনি ডি সিলভাকে নানান প্রশ্ন করেন দুজনে। উত্তর পেয়ে সন্তুষ্ট হলো কি না, বুঝা যায়নি। তবে মিডিয়ার মুখোমুখিতে উইকেটে ঘাস দেখে বিস্ময়ের কথা বলেন টাইগার কোচ হাতুরাসিংহে, 'উইকেটে ঘাস দেখে আমি বিস্মিত। তবে যতটুকু দেখেছি, তাতে আমার মনে হয়েছে হার্ড। তারপরও আমার মনে হয় না এই উইকেটে ফাস্ট বোলাররা বাড়তি কোনো সুবিধা পাবে।' অধিনায়ক মুশফিকের কণ্ঠেও একই সুর, 'উইকেটে ঘাস আছে। আগের টেস্টগুলোর তুলনায় এটি অন্যরকম মনে হলো। তারপরও আমার মনে হয়না পেসাররা বাড়তি সুবিধা পাবেন। এখানে ভালো করতে পারফরম্যান্স করতে হবে সবাইকে।' টাইগার অধিনায়ক ও কোচ উইকেট নিয়ে যতটা বিস্মিত, ততটাই বিস্মিত ভারতীয় অধিনায়ক কোহলি। তবে চিন্তিত নন, 'উইকেটে ঘাস আছে। কিন্তু আমার কাছে অন্যরকম কিছু মনে হচ্ছে না। উপমহাদেশের উইকেটগুলোর চরিত্র একই। তারচেয়ে বড় বিষয়, এই উইকেটে দলের অধিকাংশ ক্রিকেটারই গত বছর খেলে গেছেন। তাই উইকেটের আচরণ সম্পর্কে অল্প বিস্তর সবারই জানা।'
অশ্বিন, হরভজন, ঈশান্ত, উমেশ যাদবদের বিপক্ষে বড় স্কোর লিখতে রান করতে হবে ব্যাটসম্যানদের। যদিও বড় স্কোর করেও ২০০৬ সালে স্টুয়ার্ট ম্যাকগিলের লেগ স্পিন জাদুতে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৩ উইকেটে হেরেছিল বাংলাদেশ।