২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে একেবারে ইউটার্ন! বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কোচ চন্ডিকা হাতুরাসিংহে কাল যেভাবে একাদশ গঠন করেন, তার তুলনায় শুধু তিনিই! টেস্ট শুরুর আগের দিন উইকেট নিয়ে রহস্যময় মন্তব্য করেছিলেন হাতুরাসিংহে। কাল একাদশে এক পেসার ও আট ব্যাটসম্যান খেলিয়ে জন্ম দেন তার চেয়েও বড় বিস্ময়ের। তার এই অদ্ভুতুড়ে একাদশ! হঠাৎ বৃষ্টির চেয়েও বড় বিস্ময়। ভারতের বিপক্ষে একমাত্র ফতুল্লা টেস্টে তার অদ্ভুত একাদশে ঠাঁই হয়নি এই মুহূর্তের দেশসেরা পেসার রুবেল হোসেনের। অবশ্য বাংলাদেশ প্রতিদিনে আগেই ছাপা হয়েছে, রুবেলের না খেলার বিষয়টি। দেশসেরা পেসারকে সাজঘরে বসিয়ে কোচ খেলিয়েছেন মাত্র দুই টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতাপুষ্ট মোহাম্মদ শহীদকে। দিন শেষে তার এই এক পেসার খেলানো কতটা যুক্তিযুক্ত, তারও উত্তর মিলেনি। অবশ্য কাল কোচ একটি দুঃসাহস দেখিয়েছেন মুশফিকুর রহিমকে উইকেটের পেছনে না রেখে। লিটন দাসকে খেলিয়েছেন ৭৭ নম্বর টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে। লিটনই উইকেট আগলেছেন গ্লাভস হাতে।
ম্যাচ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে উইকেটে বাড়তি ঘাস দেখে জানিয়েছিলেন, এমন উইকেট এর আগে তিনি কখনো দেখেননি। উইকেটের আচরণ কেমন হবে, সেটাও তিনি জানেন না। এসব বলে কি 'মাইন্ড গেম' খেলেছিলেন বিরাট কোহলিদের বিপক্ষে? উত্তর কেউ দিতে পারেননি। উত্তর দেননি টাইগার কোচও। তাই কোচের এমন রহস্যময় মন্তব্যের কোনো কুল কিনারা খুঁজে পাননি কেউ। কাল ফতুল্লায় টেস্ট ফিরলো ৯ বছর পর। ২০০৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট প্রথম ও সর্বশেষ টেস্ট খেলেছিল বাংলাদেশ। এরপর ওয়ানডে হয়েছে। কিন্তু টেস্ট আয়োজনের চিন্তাভাবনা কখনোই করেনি ক্রিকেট বোর্ড। কিন্তু এবার ভারতের মতো ক্রিকেট পরাশক্তির বিপক্ষে আয়োজন করলো কেন, এরও প্রকৃত উত্তর নেই। জানেন না কেউ। তেমনি রুবেল ও আবুল হাসান রাজুকে সাজঘরে বসিয়ে শহীদকে খেলানোরও প্রকৃত উত্তর নেই। শুধু এক পেসারই নয়, শক্তিশালী ভারতীয় ব্যাটিং লাইন আপের বিপক্ষে দুজন বাঁ হাতি স্পিনার, একজন লেগ স্পিনার খেলানোরও কোনো যুক্তি মিলেনি। তিনজন অ্যাওয়ে স্পিনার! নবম আশ্চর্যকেও হার মানিয়েছে। আবার ফর্মে না থেকেও মাঠে নামেন শুভাগত হোম। কি এমন আছে তার বোলিংয়ে? ৬ টেস্টে যার উইকেট ৮টি, তার বোলিং ধার কতটা হবে, সেটা মাথায় আসেনি ক্রিকেটমোদীদের। অথচ আগের দিন একাদশে না থাকার পরও কাল সকালে কোনো জাদুবলে জায়গা করে নেন একাদশে? খেলে বিস্ময়ের জন্মই দেননি, প্রশ্নের মুখে ফেলেন কোচ, অধিনায়ককে। তার উপর বৃষ্টিতে ম্যাচ বন্ধ হওয়ার দুই বল আগে তাইজুল ইসলামের বলে মিড অনে যে সহজ ক্যাচটি ফেলেন শুভাগত, তাতে ফিটনেস নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ২০০০ সালে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক। এরপর চলমান ফতুল্লা টেস্ট পর্যন্ত এর সংখ্যা ৯১। দীর্ঘ ১৫ বছরে এ নিয়ে দুবার এক পেসার দিয়ে একাদশ সাজিয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের চট্টগ্রামের ওই টেস্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ খেলেছিল এক পেসার নিয়ে। ওই টেস্টে কুমার সাঙ্গাকারা সেঞ্চুরি করেছিলেন উভয় ইনিংসে। প্রথম ইনিংসে ৩১৯ রান এবং দ্বিতীয় ইনিংসে খেলেছিলেন ১০৫ রানের ইনিংস। ওই টেস্টে স্কোয়াডে রুবেল থাকার পরও টিম ম্যানেজমেন্ট খেলিয়েছিলেন দুই টেস্ট খেলা আল-আমিনকে। আল-আমিনের পারফরম্যান্স ছিল যথাক্রমে ২৫-৫-৮১-১ ও ৭-১-৩১-০। কাল ফতুল্লার কাঁধে সওয়ার হয় সোয়া বছর আগের চট্টগ্রামের সেই ভুত। গোটা বিশ্ব যেখানে সামনের কথা ভাবছে, নতুন নতুন পরিকল্পনা করছে, সবুজ ঘাসের উইকেটে খেলছে, তখন বাংলাদেশ খেলছে মাড়ম্যাড়ে উইকেটে। যেখানে ব্যাটসম্যানদের দাপটে কংকালসার হয়ে পড়ছেন বোলাররা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত প্রথম ইনিংস : ৫৬ ওভারে ২৩৯/০ (বিজয় ৮৯*, ধাওয়ান ১৫০*)।