এপ্রিল-জুলাই ষড়ঋতুর বাংলাদেশের বর্ষাকাল। এ সময় কখনো থেমে, থেমে, কখনো ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি ঝড়ে। বৃষ্টিতে স্থবির হয়ে যায় জন-জীবন। কাল যেমন জ্যৈষ্ঠের ধুম বৃষ্টিতে খেলাই হলো না ফতুল্লায়। আজ-কাল হবে কিনা, তারও নিশ্চয়তা নেই। বৃষ্টিতে শুধু কাল নয়, প্রথম দিনও খেলা হয়নি ৩৪ ওভার। বৃষ্টিতে খেলা বিঘ্নিত হলেও প্রথম দিনই পায়ের নিচের জমিন শক্ত করে নিয়েছে ভারত বিনা উইকেটে ২৩৯ রান তুলে। দলকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে যাওয়া বাঁ হাতি ওপেনার শিখর ধাওয়ান ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি তুলে অপরাজিত রয়েছেন ১৫০ রানে।
গত জুনেও ঢাকায় ক্রিকেট খেলেছে ভারত। তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের একটি হয়নি বৃষ্টিতে। তারপরও জুনে কেন খেলার শিডিউল? কোনো উত্তর নেই। তবে ভারতের আগ্রহেই এই আয়োজন বলে শোনা যাচ্ছে। সফরে একটি টেস্ট ও তিনটি ওয়ানডে খেলবেন বিরাট কোহলি, শিখর ধাওয়ান, মহেন্দ্র সিং ধোনিরা। গত দুদিন ফতুল্লার আকাশ যেভাবে কেঁদেছে, তাতে সিরিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত ক্রীড়াপ্রেমীরা। টেস্ট শেষ ১৪ জুন এবং ১৮, ২১ ও ২৪ জুন তিন ওয়ানডে। ড্রেনেজ সিস্টেম ভালো থাকায় শঙ্কাকে এড়িয়ে খেলার সম্ভাবনাও থাকছে সঙ্গে। ফতুল্লা ও মিরপুর স্টেডিয়ামের ড্রেনেজ সিস্টেম এখন বিশ্বমানের। তাই টানা বৃষ্টির পরও ঘণ্টা দুই সময় পেলেই খেলা মাঠে গড়ানোর সম্ভাবনা থাকে। ড্রেনেজ সিস্টেম ভালো থাকায় মাঠে এখন আর পানি জমে না। কাল সকাল পৌনে সাতটা থেকে ১২ পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতেও মাঠে পানি জমেনি। প্রথম দিন দুই ঘণ্টা বৃষ্টির পরও খেলা হয়েছিল।
কাল সকাল থেকে আকাশ কালো করে মেঘ ঝরেছে। এমনই ধারায় ঝরেছে, তাতে থমকে পড়েছিল জীবন। বৃষ্টির জন্য দুই দলের ক্রিকেটাররা হোটেল থেকেই বেরোয়নি। আসেননি ফতুল্লা খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে। তবে মাঠে আসার প্রস্তুতি নিয়ে ছিলেন ক্রিকেটাররা। কিন্তু আম্পায়ারদের সিগন্যাল না দেওয়ায় বের হননি। পিচ কাভার দিয়ে ঢাকা থাকায় মাঠে পানি জমেনি। উইকেট এবং বোলিং রান আপে কোনো সমস্যা থাকায় খেলার অবস্থায়ই ছিল মাঠ। ১২টায় বৃষ্টি কমে যাওয়ায় সাড়ে ১২টায় মাঠ পরিদর্শন করেন দুই আম্পায়ার কুমারা ধর্মসেনা ও নাইজেল লঙ। এরপর দুপুর পৌনে ২টায় পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয় খেলা। যদি বৃষ্টি না হয়, তাহলে আজ খেলা শুরু হবে আধা ঘণ্টা আগে সকাল সাড়ে ৯টায়। কাল মাঠ শুকনা থাকার পরও খেলা না চালানোর কারণ, ঘন ঘন বজ পাত ও বিদ্যুৎ চমকানো। বিদ্যুৎ চমকালে ক্রিকেটারদের নিরাপত্তার কথা ভেবে খেলা না চালানোর উল্লেখ আছে আইসিসির প্লেয়িং কন্ডিশনে।
২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর ফতুল্লায় ৯১ নম্বর টেস্ট খেলছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে বৃষ্টি বাধায় পড়েছে বহু টেস্ট। ভারতের বিপক্ষে ২০০৭ সালে চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে যে টেস্টটি ড্র হয়েছিল, তাতে খেলা হয়নি তৃতীয় দিন। ৪৫০ ওভারের মধ্যে মাত্র খেলা হয়েছে ২১৯.১ ওভার। ২০০১ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ড্র হয়েছিল টেস্ট। বৃষ্টিতে খেলা হয়নি চতুর্থ ও পঞ্চম দিন। একই বছর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হ্যামিল্টন টেস্টের প্রথম দুদিন খেলা হয়নি। তারপরও বাংলাদেশ হেরেছিল ইনিংস ৫২ রানে। সর্বশেষ বৃষ্টি বাধায় পড়েছিল বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্ট। ২০১১ সালে চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন খেলা হয়নি। ফলে ড্র হয়েছিল টেস্টটি।
চলতি টেস্টের আগে যে ৯০ টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ, তাতে ড্র ১২টি। ড্র টেস্টের অধিকাংশই বৃষ্টিভাগ্যে। ফতুল্লা টেস্টের প্রথম দুদিনে ১৮০ ওভারের মধ্যে খেলা হয়েছে মাত্র ৫৬ ওভার। অতীত ইতিহাসের সাক্ষ্যে তাই ড্রয়ের স্বপ্ন দেখতেই পারেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত প্রথম ইনিংস : ৫৬ ওভারে ২৩৯/০ (বিজয় ৮৯*, ধাওয়ান ১৫০*)।