হকি কি এ অবস্থায় পড়ে থাকবে? গত মৌসুমে মোহামেডান, মেরিনার্স, ওয়ারী ও বাংলাদেশ স্পোর্টিং বয়কট করলেও প্রিমিয়ার লিগ মাঠে নেমেছিল। এবার লিগ মাঠে গড়াবে কিনা সেই সম্ভাবনা ক্ষীণই বলা যায়। উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় নিজেই উদ্যোগ নিয়েছেন সব দলের অংশগ্রহণে লিগ শুরু করা। দলগুলোর সঙ্গে এ নিয়ে তিনি আলাপও করেছিলেন। বলেছিলেন, খুব শিগগিরই সমস্যার নিরসন হয়ে যাবে। না, সমাধানের কোনো লক্ষ্যই দেখা যাচ্ছে না। মোহামেডান, মেরিনার্সের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমান নির্বাহী কমিটি বিলুপ্তি না হওয়া পর্যন্ত তারা মাঠে ফিরবে না। এখন উপমন্ত্রী কি পারবেন নির্বাচিত কমিটি ভেঙে দিয়ে অ্যাডহকে মাধ্যমে লিগ শুরু করতে। আর তিনি যদি তা করেন তা বর্তমান কমিটি মেনে নেবে কিনা? কারণ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিটির এক সদস্য বলেন, আমরা নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটিতে এসেছি। এখন যদি কেউ বিলুপ্তি করার চেষ্টা চালায় তাহলে আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হব। তাই কমিটি ভাঙা উপমন্ত্রীর জন্য কষ্টকরই বলা যায়।
এটা ঠিক উপমন্ত্রী বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালাচ্ছেন কাউকে অসন্তুষ্ট না করে সমস্যা নিরসনের। শোনা যাচ্ছিল প্রিমিয়ার লিগকে গুরুত্ব দিয়ে আলাদাভাবে লিগ কমিটি গঠন করা। এ নিয়ে তিনি বেশ কজন সংগঠকের সঙ্গে আলাপও করেছেন। কিন্তু বড় দুই দল মোহামেডান ও মেরিনার্স এতে নাকি রাজি হচ্ছে না। তাহলে এখন কি উপায়ে লিগ মাঠে নামানো যায়? উপমন্ত্রী এখন দেশের বাইরে রয়েছেন। ফিরে পুনরায় বিষয়টি নিয়ে বসবেন। কিন্তু তার মাধ্যমে অন্ধকার থেকে হকি বের হয়ে আসতে পারবে কি? জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মাহবুব হারুন বলেন, দেরিতো এমনিতেই হয়ে গেছে। এখন কোনো সমঝোতার মাধ্যমে উপমন্ত্রী যদি সব দলের অংশগ্রহণে প্রিমিয়ার লিগ শুরু করতে পারেন তাতে হকিই উপকৃত হবে। কেননা এটা বাস্তব যে বড় দল না খেললে লিগের কোনো আকর্ষণ থাকে না। কিন্তু ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক খাজা রহমত উল্লাহ বলেন, উপমন্ত্রী নিজ থেকে উদ্যোগ নেওয়াতে আমরা খুশিই হয়ে ছিলাম। ভেবেছিলাম দ্রুত সমস্যার নিরসন হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বুঝতেই পারছি না তিনি কতদূর এগিয়েছেন। উনি উদ্যোগ নেওয়াতে আমরা লিগ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। খেলোয়াড়রা বার বার আমাদের কাছে জানতে চাচ্ছে লিগ শুরু হবে কিনা। বিদেশ থেকে ফেরার পর উপমন্ত্রী কোনো সিদ্ধান্ত দেবেন কিনা তার জন্য অপেক্ষা করছি। তিনি যদি সমাধান না দিতে পারেন তাহলে ফেডারেশনের চিন্তা রয়েছে ঈদের পর কাউন্সিলদের সঙ্গে সভা করে পরামর্শ চাওয়া। তারা যা বলবেন তা গুরুত্ব দিয়েই আমরা এগুবো। এভাবেতো আর ফেডারেশন বসে থকতে পারে না।
রহমত উল্লাহ ভিতরে যে হতাশা কাজ করছে তার কথাতেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আর এটাই স্বাভাবিক, এক মৌসুম প্রিমিয়ার লিগ না হলে দেশের হকির বড় রকমের ক্ষতি হয়ে যাবে। সবকিছু ঠিক চললে এতদিন লিগ ঠিকই মাঠে নামত। খেলোয়াড়রাও এতে স্বস্তি পেতেন। ঈদ সামনে খেলোয়াড়দের হাতে পয়সা নেই। লিগ মাঠে গড়ালে তাদের এ দুশ্চিন্তা থাকত না। কোনো খেলোয়াড়রা নিরূপায় হয়ে নৌবাহিনীতে চাকরিতে যোগ দিচ্ছেন। কিন্তু এরা সংখ্যায় কতজন? বাকিরা কি না খেয়ে মরবেন। এই মানবিক দিকটা চিন্তা করে উপমন্ত্রীর দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। তাকে নরম হলে চলবে না। কেউ যদি অন্যায় আবদার করে তিনি শুনবেন কেন? এ ব্যাপারে কঠিন কোনো সিদ্ধান্ত নিলে দেখা যাবে সব সমস্যায় উধাও হয়ে গেছে। পাত্তা দিলেই জটিলতা আরও বাড়বে।