ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে ফুটবলে বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচ হেরে গেছে কিরগিজস্তানের কাছে। পরের ম্যাচে এগিয়ে থেকেও তাজিকিস্তানের সঙ্গে ড্র করেছে। গ্রুপে এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া, তাজিকিস্তান ও জর্ডানের মতো শক্তিশালী দল রয়েছে। এদের টপকিয়ে বাংলাদেশের কোনোভাবেই পরবর্তী রাউন্ডে যাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রতিপক্ষ হওয়ায় অনেকে আশা করেছিলেন উদ্বোধনী ম্যাচে কিরগিজস্তানকে হারিয়ে বাংলাদেশ মিশন শুরু করবে। অধিনায়ক আশ্বাসও দিয়েছিলেন জয়ের। কিন্তু ম্যাচ শুধু হারেনি, কিরগিজরা মামুনুলদের নিয়ে ছেলেখেলা খেলেছে বললেও ভুল হবে না। ১-৩ গোলে হার। এই ফলাফলে ফুটবলপ্রেমীরা দারুণ ক্ষুব্ধ। খেলোয়াড়রা বারবার বলছেন তাদের কোনো সমস্যা নেই। পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়ে তারা বাছাই পর্বে লড়বেন। তাহলে এমন সংকটাপন্ন অবস্থা কেন? তাহলে ফুটবল কি এভাবেই চলবে?
একসময় দেশের মাঠ কাঁপানো ফুটবলার সৈয়দ রহমান ওয়ালি বিন সাব্বিরের সঙ্গে আলাপ হয় বাছাই পর্বে বাংলাদেশের দুটো ম্যাচের পারফরম্যান্স নিয়ে। তিনি বেশ আক্ষেপের সঙ্গে বললেন, দেখেন দেশের ফুটবল নিয়ে কথা বলতে ইচ্ছা হয় না। কিছু বললে আমাকে শত্রু মনে করে। তারপরও নিজে ফুটবলার ছিলাম, আমার পরিচয় ঘটেছে ফুটবল খেলেই। এ খেলার বেহাল দশা দেখে নিজেকে তাই ঠিক রাখতে পারি না। কিরগিজস্তানের কাছে বাংলাদেশের হার ও তাজিকিস্তানের সঙ্গে ড্র করাটা যদি কেউ অপ্রত্যাশিত ভেবে থাকে ভুল করবেন। আমি বলব এটাই প্রত্যাশিত। কারণ বাংলাদেশ যে জিতবে সেই মানসিকতা নিয়ে কি মাঠে নেমেছিল। প্রস্তুতি ম্যাচ ও অনুশীলন সবই হয়েছে। কিন্তু কীভাবে প্রতিপক্ষের বিপক্ষে লড়তে হবে সেই কৌশল কি শেখানো হয়েছিল? পত্রিকায় পড়লাম কিরগিজস্তান ১১ মাস কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচই খেলেনি। অথচ তারা বাংলাদেশের বিপক্ষে কীভাবে লড়তে হবে তা জেনেই মাঠে নেমেছিল এবং জয় দিয়েই মিশন শুরু করেছে। কৌশল যে কোনো ম্যাচের জন্য বড় একটা ফ্যাক্টর। অথচ বাংলাদেশ মনে হয় তা ভুলেই গেছে। অনেকে বলেন, বর্তমানে ফুটবলাররা মানসম্পন্ন নয়। এদের দিয়ে ভালো কিছু আশা করা যায় না। দেখেন, এখন যারা খেলছেন তাদের যদি বাদ দেওয়া হয় তাহলে জাতীয় দলই গড়া যাবে না। কারণ খেলোয়াড় কই?
আগে মোহামেডান, আবাহনী, ব্রাদার্সে রিজার্ভ বেঞ্চে যারা বসে থাকতেন তারাও ছিলেন পরিচিত ফুটবলার। এখন তো নতুন কোনো খেলোয়াড়ই সৃষ্টি হচ্ছে না। এদিকে বাফুফের কোনো নজরই নেই। কষ্ট লাগে সালাউদ্দিন ভাইয়ের মতো খ্যাতনামা ফুটবলার দীর্ঘদিন ধরে বাফুফের সভাপতি। সালাম ভাই, বাদলদা, আসলাম ভাই, রুপু ও জয়ের মতো ফুটবলারও রয়েছেন ফেডারেশনে। এরপরও দেশে ফুটবলার সংকট দেখা দেবে কেন? সংকট ঢাকতে বিদেশি ফুটবলারদের নাগরিকত্ব দেওয়ার চিন্তা ভাবনা চলছে। কেন এই প্রচেষ্টা? কীভাবে নতুন নতুন ফুটবলারের সন্ধান মিলবে তা তাদের জানা রয়েছে। কষ্ট লাগে এরপরও পেশাদার লিগ ছাড়া ফুটবলে নিয়মিত কোনো কর্মসূচি নেই। অধিকাংশ জেলায় ফুটবল হয় না। সুতরাং একমাত্র পেশাদার লিগের ওপর নির্ভর করে ফুটবলের উন্নয়ন আশা করা যায় না। কষ্ট লাগে দীর্ঘদিন ধরে শেরেবাংলা কাপ যুব চ্যাম্পিয়নশিপ বন্ধ দেখে। দুটো আসর থেকেই মূলত ফুটবলারের সন্ধান মিলত। এখন নাকি বাফুফে কর্মচারীদের পেছনে মাসে ১৮-২০ লাখ টাকা বেতন দিতে হয়। কিন্তু এদের কাজ কী? পেশাদার লিগের জন্য তো শুধু ফেডারেশন নয়। অনেক কমিটি আছে, কিন্তু তাদের কর্মকাণ্ড শুধু বৈঠকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বলা হচ্ছে ফান্ড নেই, তাই ফুটবল উন্নয়নে কর্মসূচি হাতে নেওয়া যাচ্ছে না। বাস্তবে কি অর্থ শূন্যতায় ভুগছে বাফুফে? অর্থ সঠিক খাতে ব্যয় হয় কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
সিলেটে ঢাকঢোল পিটিয়ে একাডেমি খেলা হয়েছে। বলা হচ্ছে এখান থেকে প্রতিভার সন্ধান মিলবে। কিন্তু কীভাবে? এখানে কি ভালো মানের কোচ রয়েছে। খেলোয়াড় বের হলো, কিন্তু খেলবে কীভাবে। তাহলে কি শুধু পেশাদার লিগের জন্য একাডেমি। আজব কাজকারবার চলছে। এ অবস্থায় কিরগিজস্তানের কাছে হার কেন, বাংলাদেশ যে মাঠে নামছে এটাই বিস্ময় লাগছে। সুতরাং মামুনুলদের হার নিয়ে আফসোস বা আক্ষেপের কিছু দেখছি না। এভাবে চললে ফলাফল এমনই হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেখানে ফুটবলে সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন। তারপরও বাফুফে নীরব রয়েছে, তাহলে ফুটবলের উন্নয়নের আশা করা যায় কীভাবে?