জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে কবে? সেই ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সেরা ক্রীড়াবিদ ও সংগঠকদের হাতে পুরস্কার তুলে দিয়েছিলেন। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিবছরই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ পুরস্কার বিতরণ করার কথা। কিন্তু কি কারণে পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে না এ ব্যাপারে কেউ স্পষ্ট করে কিছুই বলতে পারেননি। কমিটির সঙ্গে জড়িত এক কর্মকর্তা বলেন, তারা আগেই ঠিক করে রেখেছেন পুরস্কারপ্রাপ্তিদের নাম। এখন কি কারণে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় অনুষ্ঠান করতে পারছে না তা তাদের জানা নেই। আহাদ আলী সরকার ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী থাকা অবস্থায় বলেছিলেন, সবকিছু ঠিক রয়েছে কিন্তু দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে অনুষ্ঠান করা সম্ভব হচ্ছে না। এটা ঠিক ২০১২ ও ২০১৩ সালে দেশের পরিস্থিতি উত্তপ্ত ছিল। কিন্তু এতটা খারাপ ছিল না যে কয়েক ঘণ্টা অনুষ্ঠান করে জাতীয় পুরস্কার দেওয়া যেত না। ২০১৪ সালেতো দেশের পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক ছিল। এরপরও কেন জাতীয় পুরস্কার দেওয়া হলো না? এভাবে অনুষ্ঠান ঝুলে থাকার রহস্যটা কি?
জাতীয় পুরস্কার হচ্ছে দেশের ক্রীড়াবিদদের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি। একজন খেলোয়াড় বা সংগঠকের এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কিছু হতে পারে না। কিন্তু এই পুরস্কারকে গুরুত্বহীন চোখে দেখা হচ্ছে কেন? ২০১৪ সালে নতুন সরকার গঠনের পর যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার ও উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় দায়িত্ব নেওয়ার পর পরই বলেছিলেন তারা বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে দেখবেন। কিন্তু দায়িত্ব পালনে দেড় বছর হতে চললেও জাতীয় পুরস্কার দেওয়া নিয়ে কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। এ ব্যাপারে জানতে গতকাল যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীকে ফোন করা হলে সার্বক্ষণিক তার মোবাইল ব্যস্ত পাওয়া যায়। তবে টেলিফোনে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব নূর মোহাম্মদ জানান, এনিয়ে আমরা কাজ করছি। খুব শিগগিরই জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার বিতরণের অনুষ্ঠান হবে। কিন্তু কবে হবে তা নির্দিষ্ট করে তিনি জানাতে পারেননি। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের এক কর্মকর্তা জানান, এখানে মন্ত্রণালয় বা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কিছু করার নেই। সবকিছুই চূড়ান্ত হয়ে আছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সময় পাওয়া যাচ্ছে না। তা না হলে অনেক আগেই অনুষ্ঠান হয়ে যেত। চার বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী সময় দিতে পারছেন না। এটা কি কারও কাছে বিশ্বাসযোগ্য হবে? ১ বছর পর পর হলে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার অনুষ্ঠানের গুরুত্ব বা আকর্ষণই থাকত অন্যরকম। যে অবস্থা তাতে ক্রীড়াঙ্গনে অনেকে বলছেন, সামনে এই অনুষ্ঠান ঘিরে ক্রীড়ামোদীদের কোনো আগ্রহ থাকবে না। একেতো দীর্ঘদিন অনুষ্ঠান হচ্ছে না। তারপরও আবার পুরস্কার প্রাপ্তিদের বাছাই নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। অবশ্য এটা নতুন নয় শুরু থেকেই বাছাই কমিটির বাছাই নিয়ে অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। ফুটবল মাঠে কখনো দেখা না গেলেও কাউকে খ্যাতনামা ফুটবলার বানিয়ে ক্রীড়াঙ্গনের দেশসেরা পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। পুরোপুরি স্বচ্ছভাবে খেলোয়াড় বা সংগঠকদের নাম বাছাই করা হয়েছে এ ধরনের নজির কমই রয়েছে। এখানেও রাজনীতির নোংরা খেলা চলে। যোগ্যতা নয়, কে কোন রাজনীতির দলের আদর্শে বিশ্বাসী তার গুরুত্ব দেওয়া হয়। অনেক যোগ্য খেলোয়াড় যেমন জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার পেয়েছেন। তেমনি অযোগ্যদের তালিকাও একেবারে ছোট নয়। মূলত ফেডারেশন তালিকা পাঠানোর পরই বাছাই কমিটি চূড়ান্ত বাছাই করে। কিন্তু ফেডারেশন এ তালিকা স্বচ্ছভাবে তৈরি করে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। অবাক লাগে আলী ইমাম, নওশের ও ছোট নাজিরের মতো খ্যাতনামা ফুটবলাররা জাতীয় পুরস্কার থেকে এখনো বঞ্চিত রয়েছেন। ক্রীড়াবিদদের জীবনে সেরা স্বীকৃতি জাতীয় পুরস্কার। সে ক্ষেত্রে কাজটি ঠিকমতো হচ্ছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা উচিত। যোগ্যরাই এ পুরস্কার পাবেন এটাই বাস্তব। তা না হলে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারের কোনো গুরুত্বই থাকবে না।