অনুশীলন ছিল না কাল। বিশ্রাম ছিল মাশরাফিদের। বিশ্রামের দিনে হোটেলে উঠেছেন টি-২০ সিরিজের স্কোয়াডের ক্রিকেটাররা। স্কোয়াডের অনেকে আবার আজ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টি-২০ প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে ফতুল্লায়। তবে সংখ্যাটা খুব বেশি নয়। তারপরও প্রস্তুতি ম্যাচের অভিজ্ঞতা নিয়ে টি-২০ সিরিজ খেলতে নামবে টাইগাররা। শর্টার ভার্সান স্কোয়াডের প্রায় সবারই খেলার উজ্জ্বল সম্ভাবনা তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে। অন্য আট-দশটির মতো এফটিপির সিরিজ এটি। কিন্তু আবেদন, গুরুত্ব অনেক বেশি। সিরিজটি অনেক কিছু প্রমাণের। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ নিশ্চিতকরণ ছাড়াও দলগত এবং ব্যক্তিগত প্রমাণেরও সিরিজ এটা।
২০১৬ সালে টি-২০ বিশ্বকাপ। তার প্রস্তুতিও বলা যায় ৫ ও ৭ জুলাইয়ের ম্যাচ দুটিকে। কিন্তু ১০, ১২ ও ১৫ জুলাইয়ের ওয়ানডে সিরিজ অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক কিছু প্রমাণের। সিরিজটি যখন মাশরাফিবাহিনী খেলতে নামবে, তখন অনেকগুলো সমীকরণও থাকবে সঙ্গে। প্রথম সমীকরণ: ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। দ্বিতীয়ত: নিজেদের প্রমাণের।
বিশ্বকাপের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স এবং পাকিস্তানকে হারানোর পর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার সম্ভাবনা জেগে উঠে বাংলাদেশের। পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করে অষ্টম স্থানে উন্নীত হয় বাংলাদেশ। সমান ৮৮ পয়েন্ট নিয়েও ভগ্নাংশের ব্যবধানে পিছিয়ে থাকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের। এরপরও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার সম্ভাবনা উজ্জ্বলই থাকে টাইগারদের। শর্ত, এ বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইসিসির র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ আট নম্বরে থাকতে হবে দলকে। পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করে সেরা আটে জায়গা নেওয়ায় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলা উন্মুক্ত হয়ে পড়ে টাইগারদের। এরপর সমীকরণ দাঁড়ায় ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৬ ম্যাচের দুটি জিতলেই হবে। ভারতের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে বাংলাদেশ। পূর্বের সমীকরণ অনুযায়ী বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিশ্চিত হয় মাশরাফিদের। পাকিস্তান ও ভারতের বিপক্ষে টানা ৫ ওয়ানডে জেতায় বাংলাদেশের র্যাঙ্কিং পয়েন্ট ৯৩। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পয়েন্ট ৮৮ এবং পাকিস্তানের পয়েন্ট ৮৭। ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জেতায় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার সন্দেহ দূরীভূত হয়। কিন্তু ঝুলে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাকিস্তানের যে কোনো এক দলের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলা। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোনো ম্যাচ ছিল না এফটিপিতে। এফটিপির সূচি অনুযায়ী চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে না খেলার সম্ভাবনাই ছিল এক সময়কার দোর্দণ্ড প্রতাপশালী দল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। তবে সুযোগ রয়েছে পাকিস্তানের। দ্বীপরাস্ট্র শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ জিতে গেলে ক্যারিবীয়দের টপকে আটে যাওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলতে মরিয়া দুদল তাই আগস্টে জিম্বাবুয়ে একটি তিন জাতির টুর্নামেন্ট খেলতে চাচ্ছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সম্মত হলেও এখনও উত্তর দেয়নি পাকিস্তান। টুর্নামেন্টকে নিয়ে ভীষণ উত্তেজনা বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে। তারা ভাবছেন, বাংলাদেশের অর্জনকে খাটো করতে, বাংলাদেশকে বাদ দিতে এমন একটি টুর্নামেন্ট খেলছে দুই দেশ। তবে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন অবশ্য সবার শঙ্কাকে উড়িয়ে নিশ্চিত করেছেন, ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশের খেলায় কোনো বাঁধা নেই। তাই দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে নির্ভার হয়েই খেলার কথা মাশরাফিদের। তারপরও শঙ্কা থেকে যাওয়ায় প্রোটিয়াসদের বিপক্ষে নিদেন পক্ষে একটি ম্যাচ জিতলেই হবে টাইগারদের। তাহলেই সবার শঙ্কা ভেসে যাবে দূর দিগন্তে।
শুধু চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলা নয়, নিজেদের প্রমাণেরও সিরিজ মাশরাফিদের। পাকিস্তান ও ভারতের বিপক্ষে সিরিজে জেতা যে কোনো ফ্লুক নয়, সেটা প্রমাণ করতে একটি ম্যাচ জিততেই হবে টাইগারদের। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সুপার এইটে প্রোটিয়াদের হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর দুই দল খেলেছে প্রতিপক্ষ হয়ে। কিন্তু জয়ের স্বাদ নেওয়া হয়নি টাইগারদের। দুরন্ত খেলতে থাকা বাংলাদেশ এবার আর আন্ডারডগ হয়ে খেলতে নামছে না ওয়ানডে সিরিজে। ফেবারিট না হলেও সমানে সমানে লড়াইয়ের স্বপ্ন ক্রিকেটপ্রেমীদের। দলগত ছাড়াও ব্যক্তিগত প্রমাণের বিষয়টিও রয়েছে। ভারতকে একাই গুঁড়িয়ে দেওয়ার নায়ক মুস্তাফিজুর রহমানের মূল অস্ত্র কাটারকে কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে হচ্ছে এবার।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলা এবং দলগত ও ব্যক্তিগত প্রমাণের সিরিজটি নিয়ে তাই গভীর উৎকণ্ঠায় দেশবাসী!