বিশ্ব ক্রিকেটে আয়ারল্যান্ড একটা চমক জাগানিয়া দল। ২০১১ বিশ্বকাপে এই দল ইংল্যান্ডকে পরাজিত সবচেয়ে বড় বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে। এ ছাড়া ২০১৫ বিশ্বকাপেও এর কোনো ব্যতিক্রম ঘটেনি। তারা প্রায় নক আউট পর্বে পৌঁছে গিয়েছিল। তবে রান রেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের চেয়ে পিছিয়ে থাকায় সেটা সম্ভব হয়নি।
তবে সাম্প্রতিক সময়টা ভাল যাচ্ছে না আইরিশদের। দলটি বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। ফলে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলসে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপ মিস করলেও বিশ্বকাপে থাকবে আয়ারল্যান্ড।
অবাক হওয়ার মতো কথা। তবে কথা সত্য। কেননা, আইরিশ এক ক্রিকেটার নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে। বলা হচ্ছে ইয়ন মরগ্যানের কথা। একসময় খেলতেন আয়ারল্যান্ডের হয়ে। এখন তিনি ইংল্যান্ডের অধিনায়ক। আমূল বদলে যাওয়া দলটি এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম দাবিদার। আর তার নেপথ্যে আছে এই আইরিশ ক্রিকেটারের বড় ভূমিকা।
গত বিশ্বকাপে প্রথম পর্বে বিদায় নেয়ার পর ওয়ানডে ক্রিকেটে বড় ধাক্কা খায় ইংল্যান্ড। সেই দলকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলে বতর্মান বিশ্বের শীর্ষ দলে পরিণত করেন মরগ্যান।
গত বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে ধাক্কা দেয়া দলটি বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডকে হারিয়েই ২য় রাউন্ড এরপর প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল টাইগাররা।
বাংলাদেশের এসব গৌরবোজ্জল গল্পের পিঠে ইংল্যান্ডের চরম দুঃখগাঁথা লেখা। বাংলাদেশের ম্যাচসহ গ্রুপপর্বের পাঁচ ম্যাচের চারটিতেই হেরে প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় ইংলিশদের। এতে ব্যাটসম্যানদের সেকেলে ব্যাটিং কৌশল নিয়ে তীব্র সমালোচনা হয়েছিল। মরগ্যানের সমালোচনা আরও বেশি। ৮ ম্যাচের ৪টিতেই তখন গোল্ডেন ডাক মেরেছিলেন তিনি!
এতসব ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে একটাই ছিল খোলাপথ! চাই পরিবর্তন। বড়সড় একটি ধাক্কা লাগলো বোর্ডে। ডিরেক্টর হিসেবে নিয়োগ পেলেন অ্যান্ড্রু স্ট্রস। পিটার মুরকে হটিয়ে কোচ করা হলো ট্রেভর বেলিসকে। তবে মরগ্যান রয়ে গেলেন অধিনায়ক। সবার খেলার স্টাইল বদলে দেয়ার কাজটা করলেন তখনই।
মরগ্যান বলেন, তখন আমাদের পরিকল্পনা ছিল, শীর্ষ চার জন যেন অন্তত চার ম্যাচের একটিতে ৬০ রান করতে পারে। স্ট্রাইকরেট ৮০ হলেও চলবে। কিন্তু এটি যথেষ্ট ছিল না। তাই প্ল্যান বদলে আমরা আক্রমনাত্মক হতে চাইলাম। কিন্তু শুরুতে খাপ খাওয়াতে ঝামেলা হচ্ছিলো। তবে একটা সময়ে আমাদের খেলার ধরণ পাল্টে যায়।
পুরো দলটাকেও তখন নতুন করে ঢেলে সাজান মরগ্যান। আর তাতে বাদ দিতে হয় বেশ কজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটারকেও।
একটা সময়ে র্যাংকিংয়ের ছয়ে ঠেকা দলটি এখন নাম্বার ওয়ান। আর সবকিছুর নেতৃত্বে এই ইয়ন মরগ্যান। অবাক করা ব্যাপার, মরগ্যান কিন্তু ইংলিশই নন। আয়ারল্যান্ডে জন্ম নেয়া মরগ্যান ছোটবেলা থেকেই ছিলেন ক্রিকেটপাগল। ক্রিকেটের টানেই কৈশোরে পাড়ি জমান ইংল্যান্ডে।
মরগ্যান আরও বলেন, এমনকি হাইলাইটস দেখার জন্যও আমি স্কুল মিস করতাম। ইংল্যান্ডে আসি ১৬ বছর বয়সে। আমার কাছে মনে হয় ক্রিকেটের স্বর্গ দেশটি। আমি খুব সৌভাগ্যবান যে ইংল্যান্ডের হয়ে খেলতে পারছি। তবে আমার এখনো মনে হয় দুই দেশের প্রতিই আমার টান আছে।
সেই যে ডাবলিনের ছোট্ট রাস্তায় হেঁটেবেড়ানো স্কুলপড়ুয়া বালক এবার দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইংল্যান্ডকে। ইংলিশদের যে স্বপ্ন দেখিয়েছেন গেল কয়েকবছরে সেই পথ ধরে স্বাগতিক দর্শকরাও নিশ্চয়ই পেতে চায় প্রথম শিরোপার স্বাদ।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম