স্কোরবোর্ড দেখে মনে হচ্ছিল জয় নাগালের বাইরে। চোখ রাঙাচ্ছিল হোয়াইটওয়াশের শঙ্কা। ধীরগতির ব্যাটিংয়ে কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর শঙ্কায় স্বয়ং অধিনায়ক। কিন্তু শেষ তিন ওভারে রেকর্ড গড়া ব্যাটিংয়ে সব বদলে দিলেন দাসুন শানাকা। পরাজয়ের দুয়ার থেকে অবিশ্বাস্য ব্যাটিং ঝড়ে শ্রীলঙ্কাকে জয়ের ঠিকানায় পৌঁছে দিলেন তিনি।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে শনিবার (১১ জুন) এই ব্যাটিং বীরত্ব দেখান শানাকা। পাল্লেকেলেতে ১৭৭ রান তাড়ায় একসময় বড় পরাজয়ের মুখে ছিল লঙ্কানরা। ষোড়শ ওভারে যখন ভানিন্দু হাসারাঙ্গা আউট হলেন, দলের রান তখন ৬ উইকেটে ১০৮। স্রেফ ৪ উইকেট নিয়ে তখনও প্রয়োজন ২৬ বলে ৬৯ রান। শানাকা টাইমিং করতে ভুগতে থাকায় সেই সমীকরণ পরে দাঁড়ায় ৩ ওভারে ৫৯ রানে।
শানাকা তখন উইকেটে ১২ বলে মাত্র ৬ রান করে। অষ্টাদশ ওভারে জশ হেইজেলউডকে আক্রমণে ফেরান অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। উদ্দেশ্য, খেলা শেষ করে দেওয়া। তখনও পর্যন্ত হেইজেলউডের বোলিং বিশ্লেষণ চোখধাঁধানো, ৩-১-৩-২। কে জানত, ওই ওভার থেকেই নাটকীয় মোড় নেবে ম্যাচ।
ওভারের প্রথম বলে সিঙ্গেল নেন চামিকা করুনারত্নে। পরের চার বলে টানা দুটি ছক্কা ও দুটি চার মারেন শানাকা। শেষ বলে সিঙ্গেল নিয়ে ধরে রাখেন স্ট্রাইক। ওভার থেকে আসে ২২ রান। পরের ওভারে তিনি ছক্কা-চার মারেন জাই রিচার্ডসনকে। সঙ্গে করুনারত্নের বাউন্ডারিতে ওভার থেকে আসে ১৮ রান। শেষ ওভারে তারপরও প্রয়োজন ১৯ রানের।
কেন রিচার্ডসন প্রথম দুটি বল করেন ওয়াইড, পরের দুই বলে আসে সিঙ্গেল। এরপর আবার শানাকার ঝলক। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে চার মারার পর তিনি আরেকটি বাউন্ডারি মারেন সোজা। পঞ্চম বলে ফুল টস পেয়ে উড়িয়ে দেন বিশাল ছক্কায়। পরের বল আবার ওয়াইড। এক বল বাকি থাকতেই অসাধারণ জয় শ্রীলঙ্কার। শানাকা অপরাজিত থাকেন ২৫ বলে ৫৪ রানে। শেষ তিন ওভারে ১৩ বল খেলে লঙ্কান অধিনায়ক করেন ৪৮ রান
তার এই ব্যাটিংয়ে মুগ্ধ সাবেক অধিনায়ক ও লঙ্কান কিংবদন্তি মাহেলা জয়াবর্ধনে বললেন, সমালোচনার দারুণ জবাব এটি। শেষ ম্যাচে সেই শানাকার বিধ্বংসী ইনিংস দেখে তার হয়ে টুইটারে এমন জবাব দিয়ে দেন সাবেক অধিনায়ক মাহেলা জয়াবর্ধনে। তিনি বলেন, সব সমালোচকের জন্য শানাকার দুর্দান্ত জবাব। দারুণ খেলেছো ছেলেরা, অসাধারণ জয়। বিশ্বাস রাখো নিজেদের প্রক্রিয়া আর স্কিলে।
এদিকে, শানাকা দলকে জিতিয়ে বললেন, সমীকরণ কঠিন হয়ে উঠলেও ভড়কে না গিয়ে নিজের সামর্থ্যে ভরসা রেখেছেন তিনি। তিনি বলেন, ক্রিজে যাওয়ার পর আমি শুরুতে কিছুটা সময় নিতে চেয়েছি। আমার স্ট্রাইক রেট সম্ভবত পঞ্চাশের মতো ছিল। পিচ খুব ভালোভাবে পড়তে পেরেছিলাম, তাই উইকেট ছুঁড়ে দেইনি। শেষ দিকে আশা ছিল যেন শেষটা করতে পারি। সেটা করতে পেরে ভালো লাগছে।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ