দারুণ এক কীর্তি গড়ার মঞ্চ ছিল প্রস্তুত। পাকিস্তানকে প্রথমবার হারানোর সুযোগ ছিল নেদারল্যান্ডসের সামনে। বোলারদের দারুণ পারফরম্যান্সের পর বিক্রমজিত সিং ও টম কুপারের ফিফটিতে জয় ছিল তাদের নাগালেই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা আর পেরে ওঠেনি। নাসিম শাহ ও মোহাম্মদ ওয়াসিমের ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ের স্বস্তিতে মাঠ ছাড়ে পাকিস্তান।
রটারডামে রবিবার (২১ আগস্ট) তৃতীয় ওয়ানডেতে পাকিস্তানকে নাড়িয়ে দিয়ে নেদারল্যান্ডস হেরে যায় ৯ রানে। ২০৭ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ডাচরা থামে ১৯৭ রানে। এক পর্যায়ে ৩৬ বলে মাত্র ৩৮ রান প্রয়োজন ছিল নেদারল্যান্ডসের। উইকেট বাকি তখনও ৫টি। কিন্তু এরপরই পথ হারায় তারা নিজেদের অনভিজ্ঞতা আর নাসিম-ওয়াসিমের দারুণ বোলিংয়ে।
৩ ম্যাচের সিরিজে শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান জিতল সবকটিতেই। তবে জিততে ঘাম ছুটে গেছে তাদের। নেদারল্যান্ডস সিরিজটি খেলেছে তাদের সম্ভাব্য সেরা স্কোয়াডের ৭ জনকে ছাড়াই। তার পরও উজ্জীবিত ক্রিকেটে নিজেদের ছাপ ঠিকই রাখতে পেরেছে তারা। প্রথম ম্যাচেও দারুণ খেলে স্রেফ ১৬ রানে হেরেছিল ডাচরা। এই তিন জয়ে আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ সুপার লিগে বাংলাদেশের সমান ১২০ পয়েন্ট নিয়ে এখন তৃতীয় স্থানে পাকিস্তান।
ব্যাটিং ব্যর্থতার দিনে সফরকারীদের পুঁজি দুইশ ছাড়াতে বড় অবদান রাখেন বাবর আজম। কিছুটা আক্ষেপ অবশ্য থাকার কথা পাকিস্তান অধিনায়কের। স্রেফ ৯ রানের জন্য যে সেঞ্চুরির উষ্ণ ছোঁয়া পাননি তিনি। ২ ছক্কা ও ৭ চারে ১২৫ বলে করেন ৯১ রান। নেদারল্যান্ডসকে জয়ের স্বপ্ন দেখানো বিক্রমজিত ৭ চারে করেন ৫০ রান। কুপারের ব্যাট থেকে আসে চারটি চারে ৬২ রান। সিরিজের তিন ম্যাচেই ফিফটি করলেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান।
পাকিস্তানের জয়ের নায়ক নাসিম ৩৩ রান দিয়ে নেন ৫ উইকেট। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের মাত্র তৃতীঢ ম্যাচেই উইকেটের স্বাদ পেলেন ১৯ বছর বয়সী ফাস্ট বোলার। আরেক পেসার ওয়াসিমের প্রাপ্তি ৩৬ রান দিয়ে ৪টি।
এদিন টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারায় পাকিস্তান। দলটির হয়ে বাবর ছাড়া কেউ স্পর্শ করতে পারেননি ফিফটি। তাদের ইনিংসে পঞ্চাশ ছোঁয়া জুটিও ছিল স্রেফ একটি। দ্বিতীয় ওভারে অভিষিক্ত আবদুল্লাহ শফিক বিদায় নেন ভিভিয়ান কিংমার দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে। এরপর সাবধানী ব্যাটিংয়ে শুরুর ধাক্কা সামাল দেন ফখর জামান ও বাবর। অনেকটা সময় উইকেটে কাটানো ফখরের স্টাম্প এলোমেলো করে ৯৭ বলে ৫৫ রানের এই জুটি ভাঙেন লোগান ফন বিক।
এরপর বাবরকে ঘিরে এগোয় পাকিস্তানের ইনিংস। তৃতীয় উইকেটে আগা সালমানের সঙ্গে গড়েন ৪৬ রানের জুটি। মিডল অর্ডারে খুশদিল শাহ, মোহাম্মদ হারিস পারেননি কিছু করতে।
সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মাঝে ৮৪ বলে টানা তৃতীয় ফিফটিতে পা রাখেন বাবর। দলকে এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি তিনি এগোতে থাকেন সেঞ্চুরির দিকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মাঠ ছাড়েন হতাশা নিয়ে। ৯১ রানে তাকে ফিরতে হয় আরিয়ান দত্তের দারুণ এক ফিরতি ক্যাচে।
অতি সাবধানী ব্যাটিংয়ে প্রথম ৪০ ওভারে পাকিস্তানের রান আসে মাত্র ১৫২। শেষ দিকে দ্রুত রান তুলে দলকে বড় সংগ্রহ এনে দিতে পারেননি বাকিরাও। শেষ ৪ উইকেট হারায় তারা ১৫ রানে।
প্রতিপক্ষকে অল্পতে আটকে রাখার স্বস্তি নেদারল্যান্ডসের উড়ে যায় রান তাড়া করতে নেমে। ৩৭ রানেই হারিয়ে বসে তারা তিন উইকেট। আগের দুই ম্যাচের মতো বিপদে আবারও হাল ধরেন কুপার। ওপেনার বিক্রমজিতকে নিয়ে দলকে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নিতে থাকেন তিনি। দুইজনের জুটিতে আসে ৭১ রান। ৮২ বলে তৃতীয় ওয়ানডে ফিফটি করা বিক্রমজিতকে কট বিহাইন্ড করে এই জুটির প্রতিরোধ ভাঙেন ওয়াসিম। দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে প্রতিপক্ষ অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডসের স্টাম্প এলোমেলো করে দেন নাসিম।
এরপর কুপারকে সঙ্গ দেন তেজা নিদামানুরু। তাদের জুটিতে একটা সময় ডাচদের জয় সহজই মনে হচ্ছিল। শেষ ৬ ওভারে ৩৮ রান তো অনায়াস লক্ষ্যই। কিন্তু পরপর দুই ওভারে নিদামানুরু ও কুপার বিদায় নিলে শেষ হয়ে যায় নেদারল্যান্ডসের আশা। ২৪ রান করা নিদামানুরুকে বোল্ড করে ৫৬ রানের জুটি ভাঙেন নাসিম। ওয়াসিমের বলে বাউন্ডারিতে ধরা পড়েন কুপার। ফন বিককে ফিরিয়ে পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন নাসিম। ওয়াসিমের ফুলটস বলে আরিয়ানের স্টাম্প ভাঙলে শেষ হয় ডাচদের লড়াই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান: ৪৯.৪ ওভারে ২০৬ (শফিক ২, ফখর ২৬, বাবর ৯১, সালমান ২৪, খুশদিল ২, হারিস ৪, নওয়াজ ২৭, ওয়াসিম ১১, নাসিম ৩, জাহিদ ৯, দাহানি ০*; আরিয়ান ১০-১-৩৪-১, কিংমা ৫.৪-১-১৫-২, ডে লেডে ৯-০-৫০-৩, কুপার ৮-০-৩৩-০, শারিজ ৮-০-৪১-১, ফন বিক ৯-১-৩৩-১)
নেদারল্যান্ডস: ৪৯.২ ওভারে ১৯৭ (বিক্রমজিত ৫০, ও’ডাউড ৩, মুসা ১১, ডে লেডে ৫, কুপার ৬২, এডওয়ার্ডস ৬, নিদামানুরু ২৪, ফন বিক ৮, শারিজ ৫, আরিয়ান ৫, কিংমা ১*; নাসিম ১০-০-৩৩-৫, দাহানি ১০-০-৩৭-০, ওয়াসিম ৯.২-০-৩৬-৪, সালমান ২-০-৫-০, জাহিদ ৮-০-৩৯-০, নওয়াজ ১০-১-৪১-০)
ফল: পাকিস্তান ৯ রানে জয়ী
সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজ ৩-০ তে জিতেছে পাকিস্তান
ম্যান অব দা ম্যাচ: নাসিম শাহ
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ