এশিয়া কাপের সুপার ফোরের পাকিস্তানের বিপক্ষে হারের পর ভারতের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে পাঠানো হয় বিরাট কোহলিকে। তিনি দাবি করেছেন, ভারতীয় টেস্ট দলের অধিনায়কত্ব ছাড়ার পর এক মাত্র মাহেন্দ্র সিং ধোনি ছাড়া আর কেউ তাকে ফোন করেননি, খোঁজ নেননি।
তিনি আরও বলেন, সমালোচনা তো অনেকেই করেছেন কিন্তু তার খারাপ সময়ে পাশে দাঁড়াননি কেউ। কোহলির এই মন্তব্যের পরই শুরু হয় জল্পনা। তার নিশানায় আসলে কারা, কোন প্রাক্তনরা? নাকি ইঙ্গিতে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলিকেই কাঠগড়ায় তুললেন বিরাট?
সাংবাদিক সম্মেলনে কোহলি বলেছিলেন, ‘আমি যখন টেস্ট অধিনায়কত্ব ছাড়ি, এক জন মাত্র প্রাক্তন ক্রিকেটার আমাকে ফোন করেছিল। অনেকের কাছেই আমার নম্বর আছে। কিন্তু ফোন করেছিল শুধু মাহেন্দ্র সিং ধোনি। এর থেকেই বোঝা যায় কে আমার ভাল চায়। সত্যি যদি আমার কথা কেউ ভেবে থাকে, তা হলে সে আমাকে ফোন করে কথা বলতে পারত। অনেকেই বাইরে আমার সমালোচনা করেছে। কিন্তু কেউ আমার সঙ্গে কথা বলেনি।’
সংবাদ সম্মেলনে কোহলি এবারই নয় আরও কয়েকবার বিস্ফোরক হয়েছেন। যদিও তার সেই মন্তব্যের বিপরীত বক্তব্যই দিয়েছে সৌরভের ক্রিকেট বোর্ড এবং সৌরভ নিজেও।
২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে বিতর্কের শুরু হয়েছিল। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগেই কোহলি জানিয়েছিলেন, এই আসরের পরেই টি-টোয়েন্টি অধিনায়কত্ব ছাড়বেন তিনি। বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে গিয়েছিল ভারত। তার পরে ছোট ফরম্যাটের অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন কোহলি।
কোহলি অধিনায়কত্ব ছাড়ার পরে সংবাদমাধ্যমে বোর্ড সভাপতি সৌরভ জানান, তিনি ব্যক্তিগত ভাবে কোহলির সাথে কথা বলেছিলেন। তাকে অধিনায়ক থাকার অনুরোধও করেছিলেন। কিন্তু তাঁর অনুরোধ রাখেননি কোহলি। সৌরভের এই মন্তব্যের পরে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে একটি সংবাদ সম্মেলনে কোহলি সৌরভের দাবি সরাসরি খারিজ করে দেন। তিনি বলেন, ‘আমি যখন টি-টোয়েন্টি অধিনায়কত্ব ছাড়ার কথা বিসিসিআইকে জানিয়েছিলাম তখন ওরা আমার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছিল। কেউ কোনও প্রশ্ন করেনি। কেউ বলেনি যে আমার অধিনাকত্ব ছাড়া উচিত নয়। আলাদা করে কারও সঙ্গে আমার কথাও হয়নি।’
কোহলির এই মন্তব্যের পর সৌরভ ও তার দ্বন্দ্ব আরও পরিষ্কার হয়। সৌরভ কোহলি অভিযোগের উত্তর না দিলেও মুখ খোলেন ভারতের ক্রিকেট দলের প্রধান নির্বাচক চেতন শর্মা। তিনি বলেন, ‘বৈঠকে যারা ছিল তারা সবাই কোহলিকে বলেছিল, আর এক বার ভেবে দেখতে। কারণ, সবাই মনে করেছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে এ রকম একটা সিদ্ধান্ত দলে প্রভাব ফেলতে পারে। ভারতীয় ক্রিকেটের স্বার্থে কোহলিকে অধিনায়কত্ব চালিয়ে যেতে বলা হয়েছিল। সবাই বলেছিল, বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পরে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোহলি নিতে পারে। তবে আগে এ ভাবে বলা ওর উচিত হয়নি।’
টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়কত্ব ছাড়ার পরে কোহলিকে ভারতের এক দিনের দলের অধিনায়কত্ব থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়। সৌরভের বোর্ড জানায়, তিন ফরম্যাটে অধিনায়ক হিসেবে তারা একজনকেই চায়। তাই কোহলিকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সংবাদ সম্মেলনে সম্পূর্ণ অন্য কথা জানান কোহলি। তিনি বলেন, ‘টেস্ট দল নির্বাচনের দেড় ঘণ্টা আগে আমাকে নির্বাচকরা ফোন করেন। তার আগে আমার সঙ্গে কোনও কথা হয়নি। ফোন রাখার আগে আমাকে বলা হয়, তোমাকে এক দিনের দলের অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমি বলি, ঠিক আছে।’
কোহলির এই মন্তব্যের বিরুদ্ধেও যুক্তি দেন চেতন। নির্বাচক প্রধান বলেন, ‘আমরা কোহলীর সঙ্গে অনেক দিন ধরে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলাম। ওকে সময় দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেটা করা যায়নি। আমি তো একাই কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। পাঁচ জন নির্বাচক এক মত হওয়ার পরেই আমরা ওকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলাম।’
২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে হারের পরে টেস্ট দলের অধিনায়কত্বও ছেড়ে দেন কোহলি। তিন ফরম্যাটেই ভারতের অধিনায়ক করা হয় রোহিতকে। কিন্তু এখনও সেই বিতর্ক শেষ হয়নি। উল্টে একের পর এক সাংবাদিক বৈঠকে বোমা ফাটাচ্ছেন ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল