প্রথম দুই ম্যাচ হেরে আগেই সিরিজ হেরেছে ইংল্যান্ড। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কিম্বার্লিতে তৃতীয় ম্যাচটি ছিল ওয়ানডের চ্যাম্পিয়নদের হোয়াইটওয়াশ এড়িয়ে সম্মান বাাঁচানোর। সে যাত্রায় টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা হয়েছিল যাচ্ছেতাই। ৫.৪ ওভারে ১৪ রান তুলতেই তারা হারিয়ে বসে তিন উইকেট। সেখান থেকে দাভিদ মালান ও জস বাটলারের সেঞ্চুরি এবং তাদের দুইশ ছাড়ানো জুটিতে যে উচ্চতায় পৌঁছাল ইংল্যান্ডের রান, তার ধারেকাছে যেতে পারল না দক্ষিণ আফ্রিকা। জফ্রা আর্চারের ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে হোয়াইটওয়াশ এড়াল ইংলিশরা।
বুধবার (০১ ফেব্রুয়ারি) সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ইংল্যান্ড জিতেছে ৫৯ রানে। ৩৪৬ রানের পুঁজি গড়ে স্বাগতিকদের ২৮৭ রানে গুটিয়ে দিয়েছে সফরকারীরা। এই সংস্করণে টানা পাঁচ ম্যাচ হারের পর অবশেষে জয়ের স্বাদ পেল বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। আগের ম্যাচের অপরাজিত ৯৪ ছাপিয়ে এ দিন ১২৭ বলে ১৩১ রানের আরেকটি দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন অধিনায়ক বাটলার। ম্যাচের সেরা তিনিই। দুই দফা জীবন পেয়ে মালানের ব্যাট থেকে আসে ১১৪ বলে ১১৮ রান। মইন আলি উপহার দেন ২৩ বলে ৪১ রানের ঝড়ো ইনিংস।
দক্ষিণ আফ্রিকা চেষ্টা করে রিজা হেনড্রিকসের ৬১ বলে ৫২ ও হাইনরিখ ক্লাসেনের ৬২ বলে ৮০ রানের ইনিংসে। তবে অন্যরা নিজেদের মেলে ধরতে পারেনি সেভাবে। অল আউট হয়ে যায় তারা ৪১ বল বাকি থাকতেই। ওয়ানডেতে প্রথমবার পাঁচ উইকেটের স্বাদ পান আর্চার। ৪০ রানে এই পেসারের শিকার ৬ উইকেট।ডায়মন্ড ওভালের উইকেটে ছিল অসমান বাউন্স। সেটিই কাজে লাগিয়ে শুরুতে ইংল্যান্ডকে নাড়িয়ে দেন লুঙ্গি এনগিডি। দুর্দান্ত এক স্পেলে এই পেসার নিজের ১১ বলের মধ্যে ফিরিয়ে দেন জেসন রয়, বেন ডাকেট ও হ্যারি ব্রুককে। ৬ ওভারের মধ্যেই তিন ব্যাটসম্যানকে হারায় ইংলিশরা। মালান ও বাটলারের লড়াই শুরু সেখান থেকেই। যদিও রানের গতি ছিল খুবই মন্থর।
মালান প্রথমবার জীবন পান ২৭ রানে। আরেকবার ৬৭ রানে। এরপর থেকে আগ্রাসী হয়ে ওঠেন তিনি। বাটলারও খেলেন দারুণ সব শট। চার-ছক্কা আসে প্রায় প্রতি ওভারে। ফিফটি ছুঁতে মালানের লেগেছিল ৭৯ বল। পরের ২৭ বলেই তিন অঙ্ক স্পর্শ করেন তিনি। এই সংস্করণে তার তৃতীয় সেঞ্চুরি এটি। একই ওভারে বাটলার একাদশ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মালানের সমান ১০৬ বলেই। মালানের বিদায়ে ভাঙে জুটি। ৬ ছক্কা ও ৭ চারে গড়া তার ১১৮ রানের ইনিংস।
দুইজনের ২৩২ রানের জুটি চতুর্থ উইকেটে ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ। ২০০৪ সালে লর্ডসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ ও অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস জুটির ২২৬ রান ছিল আগের রেকর্ড। এরপর উইকেটে গিয়ে ৪ ছক্কা ও ২ চারে ৪১ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন মইন। বাটলার থামেন ৪৮তম ওভারে। ৭ ছক্কা ও ৬ চারে গড়া তার ১৩১ রানের ইনিংস। শেষ ২০ ওভারে ইংল্যান্ড তোলে ২১৭ রান।
৬২ রানে ৪ উইকেট নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার সফলতম বোলার এনগিডি।
রান তাড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকার শুরুটা হয় আশা জাগানিয়া। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান টেম্বা বাভুমা ও হেনড্রিকস প্রথম ৮ ওভারে তুলে ফেলেন বিনা উইকেটে ৪৫ রান। পরের ওভারে বাভুমা (৩৫) বিদায় নেন ক্রিস ওকসের বলে ক্যাচ দিয়ে। টিকতে পারেননি রাসি ফন ডার ডাসেন। তাকে ফিরিয়ে শিকার ধরা শুরু করেন আর্চার। হেনড্রিকস ফিফটির পরপরই বোল্ড হন আদিল রশিদের বলে।
চেষ্টা করেন এইডেন মারক্রাম ও ক্লাসেন। ২৫ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার রান ছিল ১৫৬/৩। এরপর জোড়া আঘাত হানেন আর্চার। পরপর দুই ওভারে তিনি ফিরিয়ে দেন মারক্রাম (৩৯) ও ডেভিড মিলারকে। মার্কো ইয়ানসেনও পারেননি কিছু করে দেখাতে। সপ্তম উইকেটে ওয়েন পার্নেলের সঙ্গে জুটি বেঁধে চেষ্টা করেন ক্লাসেন। তবে ক্লাসেনের বিদায়ে ৫৪ বলে ৮৫ রানের জুটি ভাঙার পর আর বেশিদূর এগোতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা।
পার্নেলকে বোল্ড করে পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন আর্চার। পরে তাবরাইজ শামসিকে বোল্ড করে ইনিংসের ইতি টেন দেন তিনিই। চোটের হতাশা পেছনে ফেলে এই সিরিজ দিয়ে ১৭ মাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরেন আর্চার। প্রথম ম্যাচে ১ উইকেট নিতে রান দিয়েছিলেন তিনি ৮১। এবার দুর্দান্ত বোলিংয়ে ৬ উইকেট নিয়ে দেখলেন তার সামর্থ্য।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড: ৫০ ওভারে ৩৪৬/৭ (রয় ১, মালান ১১৮, ডাকেট ০, ব্রুক ৬, বাটলার ১৩১, মইন ৪১, কারান ১১, ওকস ৯*, রশিদ ১১*; ইয়ানসেন ১০-০-৫৩-২, এনগিডি ১০-০-৬২-৪, পার্নেল ৯-০-৫৩-০, মাগালা ৯-০-৭৬-১, মারক্রাম ৪-০-৩৫-০, শামসি ৮-০-৬১-০)
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৪৩.১ ওভারে ২৮৭ (বাভুমা ৩৫, হেনড্রিকস ৫২, ফন ডাসেন ৫, মারক্রাম ৩৯, ক্লাসেন ৮০, মিলার ১৩, ইয়ানসেন ১২, পার্নেল ৩৪, মাগালা ২, এনগিডি ৫*, শামসি ১; ওকস ৮-১-৫১-১, টপলি ৭-০-৪৮-০, আর্চার ৯.১-১-৪০-৬, রশিদ ১০-০-৬৮-৩, কারান ৭-০-৫০-০, মইন ২-০-২৯-০)
ফল: ইংল্যান্ড ৫৯ রানে জয়ী
সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১-এ জয়ী দক্ষিণ আফ্রিকা
ম্যান অব দা ম্যাচ: জস বাটলার
ম্যান অব দা সিরিজ: জস বাটলার
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ