৬ জুলাই, ২০২৩ ১৮:৫২

তামিম: যেখান থেকে শুরু সেখানেই শেষ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

তামিম: যেখান থেকে শুরু সেখানেই শেষ

চট্টগ্রাম নগরীর কাজীর দেউড়ি কাজী বাড়ির সন্তান তামিম ইকবাল খান। কাজীর দেউড়ি আউটার স্টেডিয়াম মাঠে খেলেই জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পেয়েছেন। যেখান থেকে জীবনের প্রথম খেলা শুরু করেছেন সেখান থেকে এসেই ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন জাতীয় দলের ব্যাটার তামিম ইকবাল খান। 

বৃহস্পতিবার টাওয়ার ইন হোটেলে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন এ তারকা খেলোয়াড়। যেখানে সংবাদ সংবাদ করেছেন সেখান থেকে তাঁর বাড়ি থেকে আধাঁ কিলোমিটার দূরত্ব।

বৃহস্পতিবার সকালে তামিমের সংবাদ সম্মেলনকে ঘিরে সবার মনে ছিল নানা জল্পনা কল্পনা। তামিমের গাড়ি যখন হোটেলের সামনে এসে পৌঁছালো তখন আকাশ জুড়ে কালো মেঘের ঘনঘটা। ঠিক যেমন বাংলাদেশের ক্রিকেট আকাশের প্রতিচ্ছবি। তামিমের অবসরের গুঞ্জন অবশেষে সত্য হল। অবসরের ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে আবেগ আপ্লুত হয়ে তামিম বলেন, ‘সাধারণত এমন অবস্থায় অনেকে কিছু লিখে আনে। কিন্তু আমি ওইভাবে কোনো প্রস্তুতি নিয়ে আসিনি। আমার জীবনে কখনোই কোনো বক্তব্য লিখে নিয়ে যাইনি। খুব বেশি বড় করবো না। ছোট একটা জিনিস করবো। গতকাল আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ আমার শেষ ম্যাচ ছিল। আমি এখন থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিলাম।’

কান্না ভেজা কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘এটি হঠাৎ কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না। আমি এটি নিয়ে অনেক আগে চিন্তা করেছি। ভিন্ন ভিন্ন কারণ আছে। কিন্তু আমি মনে করছি না এখানে বলতে হবে। আমি হুট করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি এমন নয়। আমি বেশ কয়েকদিন ধরে বিষয়টি নিয়ে ভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলেছি। এমনকি  আমার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও আলোচনা করেছিলাম। আমি মনে করছি এটাই আমার সঠিক সময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার। আমি কিছু মানুষের প্রতি ধন্যবাদ জানানো দরকার।'

বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে ক্রিকেট খেলেছেন জানিয়ে তামিম বলেন, ‌‘আমি জানি না, আমার বাবাকে গর্বিত করতে পেরেছি কিনা। এই ১৬ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে আরও অনেক মানুষ আছে যাদের আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমার ছোট চাচা আকবর খান, যিনি ইন্তেকাল করছেন। উনার হাত ধরে প্রথম ক্রিকটে খেলা। আমি উনার পরিবারকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। এম এ আজিজ এ তপন দা নামে একজন কোচ আছেন যার কাছে আমি ছোট বেলা থেকে খেলা শিখেছি তার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। এছাড়া বিভিন্ন সময় যাদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলেছি তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। স্পেশালি আমার ন্যাশনাল টিমের কলিগদের। ক্রিকেট বোর্ড আমাকে সুযোগ দিয়েছে দেশের হয়ে এত বছর ধরে ক্রিকেট খেলার। আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই।’

২০০৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক তামিমের। ওই বছরের সেপ্টেম্বরে কেনিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে আর পরের বছর জানুয়ারিতে অভিষেক হয় সাদা পোশাকে। এরপর দেশের ক্রিকেটের একের পর এক রেকর্ড ভেঙেছেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি অনেক বছর আগ থেকেই। ১৬ বছরেরও বেশি সময়ের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে তামিম ইকবালের রান ১৫ হাজার ২০৫। টেস্টে ৭০ ম্যাচে ১০টি সেঞ্চুরি আর ৩১টি ফিফটিতে রান ৫১৩৪। ওয়ানডেতে ২৪১ ম্যাচে ১৪টি সেঞ্চুরি আর ৫৬টি ফিফটি। টি-টোয়েন্টিতে ৭৮টি ম্যাচে এক সেঞ্চুরি আর ৭টি ফিফটিতে ১৭৫৮ রান তামিমের। বাংলাদেশের পক্ষে সবচেয়ে বেশি রান, সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি তামিমের।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে ঘরের মাঠে এই সংস্করণেই তার শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেললেন তামিম। ২৪১ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৩৬.৬২ গড়ে ৮৩১৩ রান করেছেন, সেঞ্চুরি ১৪টি, ফিফটি ৫৬টি। আর টি-টোয়েন্টিতে ৭৮ ম্যাচে করেছেন ১৭৫৮ রান। এই সংস্করণে দেশের হয়ে একমাত্র তামিমই সেঞ্চুরি করেছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২৫ সেঞ্চুরি করা তামিম তিন সংস্করণ মিলিয়ে ১৫ হাজারের বেশি রান করেছেন। যা বাংলাদেশের হয়ে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ।

 

বিডি প্রতিদিন/নাজমুল

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর