বিজ্ঞানের প্রতি ভালোলাগা থেকেই স্বল্পমূল্যে টেলিস্কোপ, কম্পাউন্ড মাইক্রোস্কোপ, ক্লাস রুম প্লেনেটোরিয়াম, সাইন্স প্যাকটিক্যাল ল্যাব কিটসহ বহু বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি তৈরি করেছেন বাংলাদেশি তরুণ প্রযুক্তিবিদ শাফায়াত আজাদ।
শখের বশে এসব তৈরি করা শুরু করলেও এখন সেগুলোকে সাধারণ মানুষের কাছে খুব সহজে ও স্বল্প মূল্যে পৌছে দেয়ার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। স্বল্পপুঁজি সম্বল করেই নিজের আগ্রহে এসব তৈরি করছেন বাজারে প্রচলিত মূল্যের অর্ধেকেরও কম মূল্যে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন-কে শাফায়াত জানান, তার তৈরি এসব যন্ত্রপাতি সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তি নির্ভর। এসবের দামও তুলণামূলকভাবে অনেক কম হওয়ায় ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা সম্ভব।
শাফায়াতের তৈরি টেলিস্কোপের প্লাসটিক ফাইবার ও অন্যান্য উপকরণ দেশীয় তবে লেন্স গুলো দুবাই থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এগুলোর দাম ৪০০০ টাকা থেকে ১২৫০০ টাকা । অথচ একইমানের বিদেশে তৈরি টেলিস্কোপের বাজারে বিক্রি হয়ে থাকে ৩০০০০ থেকে ৩৫০০০ টাকায়।
একইভাবে তিনি স্বল্পমূল্যে তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন সিম্পল মাইক্রোস্কোপ, কম্পাউন্ড মাইক্রোস্কোপ, মনোকুলার, মোবাইল ফোন এক্সট্রা মাইক্রোলেন্স, বায়োলজিক্যাল গ্যাস মাক্স, ফায়ার প্রুফ ক্লথ, লাইফ জ্যাকেট, অগ্নি নির্বাপক কার্বনডাই অক্সাইড সিলিন্ডার, স্নাইপার স্কোপ, বাইনোকুলার, ক্লাস রুম প্রজেক্টর, ক্লাস রুম প্লেনেটোরিয়াম ইত্যাদি।
তার তৈরি কম্পউন্ড মাইক্রোস্কোপের দাম ৩০০০ টাকা থেকে ৩৫০০ টাকা যেখানে একই মানের বিদেশি মাইক্রোস্কোপ বাজারে বিক্রি হয় ৪৫০০- ৭০০০ টাকায়। এছাড়া তিনি সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে দেশীয় উপকরণ ব্যবহার করে তৈরী করছেন বায়োলজিক্যাল গ্যাস মাক্স । এটি একই সঙ্গে জীবাণু ও ক্ষতিকারক গ্যাস থেকে মানুষকে বাঁচাতে সক্ষম।
রয়েছে ফায়ার প্রুফ ক্লথ যেটি ১০-২০ মিনিট গায়ে দিয়ে আগুণে দাড়িয়ে থাকলে ও কোন সমস্যা হবে না। মাত্র ১০০০ টাকায় বানিয়েছেন লাইফ জ্যাকেট। ১.৫ কেজির অগ্নি নির্বাপক কার্বনডাই অক্সাইড সিলিন্ডার তৈরি করেছেন যা দাম পড়ছে মাত্র ৮০০ টাকা। তৈরি করেছেন ৩.৫ কিলোমিটার রেঞ্জের স্নাইপার স্কোপ।
শাফায়াত আজাদ শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে স্বল্পমূল্যে ক্লাস রুম প্রজেক্টর বানিয়েছেন যেটি চলতে কোন বিদ্যুত খরচ হবে না। এর মূল্য ৫০০০-৬০০০ টাকা। একইভাবে রয়েছে ক্লাস রুম প্লেনেটোরিয়াম এই প্লেনেটোরিয়ামের মূল্য পড়ছে ২৫০০০- ৩০০০০ টাকা। যা বাইরে থেকে আমদানি করলে পড়বে নূন্যতম ১৭ লাখ টাকা। এছাড়া রয়েছে ফ্রি ইলেকট্রিসিটি মোবাইল চার্জার যেটির মাধ্যমে মোবাইল ফোন চার্জ করতে প্রচলিত বিদ্যুত এর প্রয়োজন হয় না। মূল্য পড়বে ৫০০ টাকা।
তার উদ্ভাবনীর তালিকায় রয়েছের স্বল্পমূল্যের ওয়াটার ফিল্টার, সাইন্স প্যাকটিক্যাল ল্যাব কিট। এটি একটি পরিপূর্ণ ল্যাবরেটরি কীট। যার মধ্যে ক্লাস ৯-১০ এর উপযোগী সব প্র্যাকটিক্যাল করা যাবে। মাত্র ২০০০০ টাকা খরচ হবে এর জন্য। শাফায়াত বলেন, অনেক স্কুলে বাজেটের স্বল্পতার কারণে ল্যাব তৈরী করা হয়না। ছাত্র ছাত্রীদের বিজ্ঞান পড়ার আগ্রহ থাকলেও তারা তার থেকে বঞ্চিত হয়। এদের কথা মাথায় রেখেই এটি উদ্ভাবন করা হয়েছে।
এই মেধাবী তরুণ প্রযুক্তিবিদ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কম্পিউটার সায়েন্সে পড়াশোনা করেছেন। তার এসব প্রযুক্তিপণ্যের উদ্ভাবনীতে এখন বড় বাধা প্রয়োজনীয় পুঁজি। এসব প্রযুক্তিপণ্য তৈরি ও বাজারজাত করণের জন্য বিনিয়োগ দরকার বলে আমাদের জানান তিনি। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, স্বল্পমূল্যে এসব দেশীয় উপকরণে প্রযুক্তিপণ্য তৈরিতে পর্যাপ্ত সহযোগিতা পেলে একটি নতুন শিল্পের সম্ভাবনার সৃষ্টি হবে।
উল্লেখ্য, জনপ্রিয় ফেসবুকার আরিফ আর হোসেন ২৩ ঘন্টা আগে দেওয়া এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে এই তরুণ প্রযুক্তিবিদকে নিয়ে একটি লেখা দেন। এরপর থেখেই বাংলাদেশের ফেসবুক কমিউনিটিতে এ নিয়ে আলোড়ন তৈরি হয়। মাত্র ২৩ ঘন্টার ব্যবধানে লেখাটিতে ২৯ হাজারেরও বেশি লাইক, ২ হাজারের বেশি শেয়ার ও অসংখ্য মতামত পড়তে থাকে।