পুরাতন গাড়ি কেনার ঝামেলা অনেক। বলতে গেলে সস্তার তিন অবস্থার মত। কিন্তু করারও কিছু নেই। যাদের বাজেট কম তাদের পুরনো গাড়ি না কিনে উপায় নেই। এক্ষেত্রে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করলে লোকসানের চেয়ে লাভই বেশি। অল্প টাকায় পুরনো গাড়ি কিনে হতে পারেন লাভবান।
কি বা কোন ধরনের গাড়ি প্রয়োজন তা অগে ঠিক করুন: প্রথমেই ঠিক করুন আপনি কি ধরনের গাড়ি কিনতে চান। আপনি কি আপনার বন্ধুর গাড়ি কিনতে চান? তাহলে তাকে জিজ্ঞাসা করুন এই ব্যপারে। তার কাছ থেকে গাড়ির খুটিনাটি দিক। কত সালের মডেল এবং গাড়িটি মোট কত মাইল পথ চলেছে তার হিসাবও। চাহিদা কতটুকু তাও বিবেচনায় নিতে হবে। ছয় আসনের গাড়ি না চার আসনের।
বাজেট কত তা ঠিক করুন : গাড়ি কেনার আগে ঠিক করুন গাড়ির পেছনে আপনি কত অর্থ খরচ করতে পারবেন। আপনাকে অবশ্যই হিসাব করতে হবে মাইল প্রতি কি পরিমাণ জ্বালানি খরচ হয় এবং সেটির বাজার দর কত। আপনি যদি গাড়িটি রেন্ট-এ কার ব্যাবসায় লাগাতে চান, তাহলে আপনার পেমেন্ট প্ল্যান ভালো করে দেখুন যা আপনার বাজেটের সাথে খাপ খাবে। চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে হিসাব করুন গাড়ি কেনার খরচ, ইন্টারেস্ট রেট এবং গ্যাস/তেলের ব্যাবহার।
জেনে নিন গাড়ি বর্তমান বাজার দর : আপনি গাড়ি কিনতে কত খরচ করতে পারবেন তা ঠিক করে ফেলেছেন এবং কিছু গাড়িও দেখেছেন যেটা আপনি কিনতে ইচ্ছুক। এখন আপনার কাজ হলো গাড়িতে কোনো সমস্যা আছে কিনা তা খুঁজে বের করার সঙ্গে গাড়িটির বর্তমান বাজার দর জেনে নেয়া। আপনি কয়েকটা অটো শপে ঘুরে দেখতে পারেন অথবা যদি ওয়েবসাইটে তথ্য পাওয়া যায় সেটাও দেখতে পারেন। মনে রাখবেন, পুরানো গাড়ি সস্তা হলেও এর রক্ষনাবেক্ষর খরচ অনেক।
কোথা থেকে কিনবেন : অনেক ডিলারই পুরানো গাড়ি বিক্রি করে। আপনি তাদের কাছ থেকেও কিনতে পারেন অথবা পুরোনো গাড়ির মেলা থেকেও গাড়ি কিনতে পারেন।
যা কিনতে চান তার ওপরই গুরত্ব দিন : অনলাইনে বা ডিলার শপ ঘুরে গাড়ি সম্পর্কে খোঁজ খবর নেয়া সহজ, কিন্তু যখন আপনি দেখবেন সব ধরনের অপশন আপনার সামনে, তখন একটু চিন্তায় পরে যেতে পারেন। কোনটায় দেখতে পাচ্ছেন একটু বেশি দাম দিলে ভাল গাড়ি পাওয়া যাচ্ছে অথবা একই দামের মধ্যে অন্য মডেলের গাড়ি ভাল দেখাচ্ছে। আপনি ঠিক করুন কোন গাড়িটি আপনার লাইফস্টাইলের সাথে খাপ খাবে। যে ধরনের গাড়ি কিনতে চান সে ধরনের গাড়ি দেখাতে বলুন বিক্রেতাকে। বিক্রেতাকে কোনোভাবেই সুযোগ দিবেন না তার ইচ্ছে আপনার ওপর চাপিয়ে দেয়ার। তাহলে সে আপনাকে বেশি দামি গাড়ির দিকে নিয়ে যাবে।
ভালভাবে পরীক্ষা করুন : গাড়ি কেনার আগে অবশ্যই ভালোভাবে পরীক্ষা করে নিন। দেখে নিন গাড়ির কোথাও কোনো সমস্যা আছে কিনা। ভেতরে কোথাও ভাঙ্গাচোরা আছে কিনা। বিক্রেতাকে জিজ্ঞাসা করুন গাড়ি কেন বিক্রি করা হচ্ছে, আগে এটি কোনো দুর্ঘটনায় পড়েছিল কিনা বা সে কখনো গাড়িতে কোনো সমস্যা দেখেছে কিনা। গাড়িটি পরীক্ষা করার জন্যে পরীক্ষামূলক ড্রাইভ করে দেখুন। ড্রাইভ করার সময় জানালা আটকিয়ে দিন এবং রেডিও ও সিডি বন্ধ রাখুন। এতে করে আপনি বুঝতে গাড়িটিতে কোনো অস্বাভাবিক আওয়াজ শোনা যায় কিনা।
ইতিহাস ও নিরাপত্তা রিপোর্ট সম্পর্কে জেনে নিন: গাড়িটি কেনার আগে অবশ্যই এটির ইতিহাস এবং এ সম্পর্কিত নিরাপত্তা তথ্যগুলো ভালোভাবে জেনে নিন। জেনে নিন গাড়িটি কখনো মামলায় পরেছিল কিনা অথবা এমন কোনো ব্যাক্তি গাড়িটি ব্যবহার করত যে অপরাধী। বিক্রেতার কাছে যদি এই ধরণের তথ্য না থাকে তাহলে ওই গাড়ি কিনা থেকে বিরত খাকুন।
মেকানিক দিয়ে পরীক্ষা করে নিন : কেনার আগে বিক্রতার কাছে জিজ্ঞাসা করুন সে আপনার কোনো মেকানিক দিয়ে গাড়িটি পরীক্ষা করালে আপত্তি করবে কিনা। যদি না করে তাহলে একজন মেকানিক দিয়ে সবকিছু পরীক্ষা করে নিন। যদি বিক্রতা আপত্তি করে তাহলে সেই গড়ি কেনা থেকে বিরত থাকুন। বেশিরভাগ গাড়ির ডিলারই তাদের মেকানিক সরবরাহ করে চেকিং করার জন্যে এবং তারা এ বিষয়ে গ্যারান্টি দেয়। যদি আপনি ডিলারের কাছ থেকে কিনেন তাহলে এক বছরের ওয়ারেন্টি নিয়ে নিন।
দর কষাকষি করুন: পছন্দের গাড়িটি দেখেছেন, সবকিছু পরীক্ষা করেছেন, নিরাপত্তা রিপোর্ট এবং টেস্ট ড্রাইভ নিয়েছেন।এখন সময় দর কষাকষির। কখনোই বিক্রেতার চাওয়া দামে রাজি হবেন না। অবশ্যই একটা দর কষাকষি হতে হবে।
গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ঠিক আছে কিনা : দর কষাকষির পর গাড়ি কিনে খুশি মনে বাড়ি যেতে পারেন। এর আগে দ্বিতীয়বার পরীক্ষা করে নিন গাড়ির রেজিস্ট্রেশন কার্ড। যদি ডিলার থেকে কিনে থাকেন তাহলে বিক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগের তথ্য নিয়ে নিন যাতে কোনো সমস্যা হলে আপনি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। গাড়ির লাইসেন্স সম্পর্কে কোনো সন্দেহ থাকলে বিআরটিএতে গিয়ে খোঁজ নিন।
বিডি-প্রতিদিন/১৬ মার্চ ২০১৫/শরীফ