জাপানের ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি মাউন্ট ফুজি সর্বশেষ অগ্ন্যুৎপাত করে ১৭০৭ সালে। তবে আগ্নেয়গিরি দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবসকে সামনে রেখে জাপান সরকার অভিনব এক পদক্ষেপ নিয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে মাউন্ট ফুজির সম্ভাব্য অগ্ন্যুৎপাতের সিমুলেশন ভিডিও প্রকাশ করেছে টোকিও মেট্রোপলিটন গভর্নমেন্ট।
চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত এই ভিডিওর লক্ষ্য টোকিও মহানগর ও আশপাশের প্রায় ৩ কোটি ৭০ লাখ বাসিন্দাকে দুর্যোগ মোকাবিলায় সচেতন ও প্রস্তুত করা। ভিডিওতে সতর্ক করে বলা হয়—‘অগ্ন্যুৎপাত কোনো সতর্কতা ছাড়াই যেকোনো সময় ঘটতে পারে।’ যদিও ফুজি থেকে টোকিওর দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার, মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আগ্নেয়গিরির ছাই রাজধানীকে আচ্ছাদিত করতে পারে। এতে পরিবহন ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে, খাদ্য ও বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হবে এবং দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসকষ্টের ঝুঁকি দেখা দেবে।
ভিডিওর শেষাংশে নাগরিকদের বলা হয় দৈনন্দিন জীবনে দুর্যোগ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে খাবার, ফার্স্ট এইড কিট ও জরুরি সামগ্রী মজুত রাখতে। তবে সরকারের এই উদ্যোগে সবার প্রতিক্রিয়া ইতিবাচক হয়নি।
৫৭ বছর বয়সী হাসপাতাল কর্মী শিনিচিরো কারিয়া প্রশ্ন তুলেছেন, ‘অগ্ন্যুৎপাতের কোনো লক্ষণ কি আসলেই রয়েছে? কেন হঠাৎ বলা হচ্ছে টোকিওতেও ১০ সেন্টিমিটার ছাই পড়তে পারে?’
অন্যদিকে মিশিমা শহরের বাসিন্দা হিরোমি ওকি বলেছেন, তিনি জরুরি সামগ্রী কিনতে যাচ্ছেন। তাঁর মতে, ‘প্রকৃতির শক্তি এতটাই বড় যে, কিছুটা ভয় পাওয়া হয়তো ভালোই।’
যদিও টোকিও মেট্রোপলিটন গভর্নমেন্ট এবং জাপানের কেবিনেট অফিস ডিজাস্টার প্রিভেনশন ডিভিশনের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত তারা ভিডিও নিয়ে কোনো অভিযোগ পাননি।
টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝুঁকি যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নাওয়া সেকিয়া বলেন, বহু বছর ধরেই সরকার অগ্ন্যুৎপাত ও ভূমিকম্পের নানা পরিস্থিতির মডেল তৈরি করছে। তবে এর মানে এই নয় যে শিগগিরই ফুজিতে অগ্ন্যুৎপাত হবে। তাঁর ভাষায়, ‘ভিডিও প্রকাশের ক্ষেত্রে সময়ের বিশেষ কোনো তাৎপর্য নেই।’
জাপান ভূমিকম্প, টাইফুন, বন্যা, বালিধস ও অগ্ন্যুৎপাতের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ। সম্প্রতি কিউশুর উপকূলে শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর দেশটির আবহাওয়া দপ্তর প্রথমবারের মতো ‘মেগাকোয়েক সতর্কতা’ জারি করে। বিশ্বের সক্রিয় প্রায় ১ হাজার ৫০০ আগ্নেয়গিরির মধ্যে ১১১টি রয়েছে জাপানে, যা প্রশান্ত মহাসাগরের ‘রিং অব ফায়ার’-এর অংশ।
ফুজি পর্বত জাপানের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। প্রায় ৩০ বছর অন্তর অন্তর সেখানে অগ্ন্যুৎপাত ঘটলেও ১৮০০ শতকের পর থেকে এটি আর সক্রিয় হয়নি।
সূত্র: এপি নিউজ
বিডি প্রতিদিন/আশিক