সোমবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

গ্রহাণুতে মানববসতি : কল্পবিজ্ঞান কিন্তু অসম্ভব নয়

টেকনোলজি ডেস্ক

গ্রহাণুতে মানববসতি : কল্পবিজ্ঞান কিন্তু অসম্ভব নয়

মহাকাশে শহর! কল্পবিজ্ঞান মনে হতেই পারে। কিন্তু ভুললে চলবে না! গত এক শতকে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি অসম্ভবকেও সম্ভব করেছে। সায়েন্স ফিকশন গল্পের পটভূমি মনে হলেও ঠিক অসম্ভব নয়- মহাকাশে ভাসমান গ্রহাণুতে কৃত্রিম মাধ্যাকর্ষণ শক্তিনির্ভর কটি ছোটখাটো শহরের সমান মানববসতি নির্মাণের পরিকল্পনা করেছেন একদল গবেষক। 

 

সম্প্রতি ‘ফ্রন্টিয়ার্স ইন অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড স্পেস সায়েন্সেস’ বিজ্ঞান সাময়িকীকে সেই পরিকল্পনা গবেষণা প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করেছেন নিউ ইয়র্কের ইউনিভার্সিটি অব রচেস্টারের গবেষকরা। তবে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট সিনেট বলছে, গবেষকদের এ পরিকল্পনা তাত্ত্বিক বিবেচনাতেও ‘খেপাটে’; আর সে বিষয়টি স্বীকার করছেন খোদ গবেষক দলের সদস্যরাও। 

 

গবেষণা প্রতিবেদনের সহলেখক অ্যাডাম ফ্র্যাঙ্ক বলেছেন, আমাদের গবেষণা প্রতিবেদন বিজ্ঞান আর কল্পবিজ্ঞানের সীমারেখায় অবস্থান করছে। তিনি আরও বলেন, গ্রহাণুতে শহর নির্মাণ পরিকল্পনার মূলে আছে যে ভাবনাটি, তার নাম ও’নিল সিলিন্ডার; ৭০-এর দশকে এই ঘূর্ণায়মান স্পেস কলোনির নকশা প্রস্তাব করেছিলেন পদার্থবিজ্ঞানী জেরার্ড ও’নিল। ঘূর্ণায়মান শক্তির কারণেই কৃত্রিম মাধ্যাকর্ষণ সৃষ্টি হবে গ্রহাণুতে, যা কাজে লাগিয়ে অবকাঠামো নির্মাণ সম্ভব হবে।

কিন্তু যথেষ্ট নির্মাণ উপাদান মহাকাশের কোনো গ্রহাণুতে বয়ে নেওয়ার ব্যাপক খরচই জেরার্ড ও’নিলের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা। আর এ জটিলতা সমাধানেই সবচেয়ে চমকপ্রদ প্রস্তাবটি দিয়েছেন ইউনিভার্সিটির গবেষকরা। গ্রহাণুর পাথরের স্তূপকে পাতলা কার্বন ন্যানোফাইবারের একটি জালের বুনোটের ব্যাগে পুরে সিলিন্ডারের আকার দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন তারা।

 

গবেষণা প্রতিবেদনের আরেক লেখক পিটার মাইক্লাভচিকের মতে, গ্রহাণুর পাথর আর নির্মাণাধীন বাসস্থানের তুলনায় কার্বন ন্যানোফাইবার ব্যবহার করে তৈরি সিলিন্ডার আকারের ব্যাগের ওজন কম হবে, কিন্তু সবকিছু একসঙ্গে ধরে রাখার শক্তি থাকবে অটুট। একটি গ্রহাণু ঘুরতে থাকলে সেক্ষেত্রে এর ভঙ্গুর অংশগুলো আলাদা হয়ে আসবে, যার ফলে ব্যাগের আকার বড় হতে থাকবে এবং ব্যাগের ভিতরেই একটি পাথরের স্তর তৈরি হবে, যা ভিতরের মানববসতিকে মহাজাগতিক বিকিরণ থেকে রক্ষা করতে পারবে। বিজ্ঞানীদের এ পরিকল্পনা অসম্ভব মনে হলেও অধ্যাপক ফ্র্যাঙ্কের মতে পদার্থবিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠিত সূত্রগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ তাদের পরিকল্পনা। তিনি বলেন, ৩০০ মিটার ডায়ামিটার বা একটি ফুটবল মাঠের সমান গ্রহাণুকে আয়তন বাড়িয়ে একে সিলিন্ডার আকৃতির বাসস্থানে রূপ দেওয়া সম্ভব যেখানে মানববসতি নির্মাণের জন্য অন্তত ২২ বর্গমাইল জায়গা থাকবে। আকারে যা প্রায় ম্যানহাটনের সমান।  আস্ত একটা গ্রহাণুকে ব্যাগে ঢোকানো বা তারপর একে নির্দিষ্ট দিকে নির্দিষ্ট গতিতে ঘোরানো সহজ কোনো কাজ নয়। এক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা সৌরশক্তিনির্ভর কামান ব্যবহারের কথাও বলেছেন। এরপর গ্রহাণুর মাঝখানে  মানববসতি নির্মাণের ঝক্কিও আছে; তবে, তার আগে গ্রহাণুকে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।

সর্বশেষ খবর